আদিবাসী নামে এনজিওদের নাম পরিবর্তনের নির্দেশ : বিশিষ্টজনদের নিন্দা
সতেজ চাকমা: বিগত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং, ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করে নিবন্ধনকৃত যেসব বেসরকারী সংস্থা দেশের বিভিন্ন অংশে কাজ করছে তাদেরকে আগামী এক মাসের মধ্যে নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদনের নির্দেশ প্রদান করে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী পরিচালক শীলু রায়ের স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনামায় বলা হয় যে, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ২৩ (ক) অনুযায়ী এ দেশে আদিবাসী নামক কোন জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হয়নি।’ উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয় যে, ‘বৈশ্বিক আদিবাসী রাজনীতির অংশ হিসেবে এক শ্রেণীর দেশী/বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহল আইএলও কনভেনশন-১৬৯ এ প্রদেয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশের সুযোগ-সুবিধা ও তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার রয়েছে; যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য হুমকি স্বরুপ।’
এনজিও ব্যুরোর উক্ত নোটিশে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আদিবাসী শব্দটি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতায় জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ।’
এ বিষয়ে মতামত জানতে যোগাযোগ করা হলে বিশিষ্ট আদিবাসী গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীণ আইপিনিউজকে বলেন, এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু নই।প্রতিবছর ৯ আগষ্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের আগে পত্রিকায় আদিবাসী শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কত শত নিষেধাজ্ঞা আসে।
তিনি আরো বলেন, এধরণের নিষেধাজ্ঞা অগণতান্ত্রিক। আদিবাসীদেরকে স্বকীয় পরিচয়ে পরিচিতি নির্মাণের বিরুদ্ধে সরকার জোর করে অপমানজনক নামে আদিবাসীদের পরিচয় নির্মাণ করতে প্রয়াস চালাচ্ছে বলেও তিনি মত দেন।
বিশিষ্ট এই আদিবাসী গবেষক আরো বলেন, সরকার সবসময় আদিবাসীদের অস্বীকার করতে চাই। কিন্তু পর্যটনকে ‘প্রমোট’এর ক্ষেত্রে সবসময় আদিবাসীদেরকেই ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এনজিও ব্যুরোর উক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকে তিনি নিন্দা জ্ঞাপনও করেন।আদিবাসী শব্দের সংঞ্জায়নের ক্ষেত্রে সরকারের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে বলেও অভিমত বিশিষ্ট এই গবেষকের।
মতামত জানতে যোগাযোগ করা হলে এই নির্দেশনামাকে সরকারের জবরদস্তি বলে আখ্যা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। তিনি আরো বলেন, এটা সরকারের এক ধরণের খবরদারিত্বের বহি:প্রকাশ। এ অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় না দিয়ে যার যা পরিচয় সে পরিচয়ে পরিচিত হবার যে অধিকার সে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান বিশিষ্ট এই ইতিহাসবিদ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান এক মুঠো আলাপে আইপিনিউজএর এই প্রতিবেদককে জানান, সরকার সবসময় চান আমাদের (আদিবাসীদের) অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করতে। সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার একটি অংশ এই নির্দেশনামা বলেও অভিমত এই বিশিষ্ট ব্যক্তির। তবে তিনি আদিবাসী নামে কাজ করা এনজিওদের আরো কৌশলী হয়ে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহ্বান জানান।সরকার আদিবাসীদেরকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী,উপজাতি সহ নানা পদ ব্যবহার করে পরিচয় করাতে চাইলেও এসব শব্দের মাধ্যমে মূলত আদিবাসীদেরকেই বুঝিয়ে থাকেন বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।