সুবলং ঘটনার মামলায় জনসংহতি সমিতির তীব্র প্রতিবাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলাধীন সুবলং এলাকায় গত ২৭ জুন ২০১৯ স্মৃতিময় চাকমা কোকো নামে অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থক ৬০ জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করার ঘটনায় জনসংহতি সমিতি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে জনসংহতি সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক গুণেন্দু বিকাশ চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানোনো হয়। ঐ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির নেতৃত্ব ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী I পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত প্রশাসন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নানাভাবে মদদ প্রদান করে আসছে। উল্লেখ্য, ২০০৭-২০০৮ সালে দেশে জরুরী অবস্থা চলাকালে কায়েমী স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক সুধাসিন্ধু-তাতিন্দ্র নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থীদের জন্ম দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করা হয়। তারই অংশ হিসেবে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও প্রশাসন কর্তৃক পূর্ণ নিরাপত্তা ও সহায়তা দিয়ে সশস্ত্র সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদেরকে বাঘাইছড়ি, লংগদু, নান্যাচর, কাপ্তাই ও রাজস্থলীতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তারা অস্ত্রের মুখে অবাধে চাঁদাবাজি ও একের পর এক হত্যাকান্ড চালিয়ে যেতে থাকে। আরো উল্লেখ্য যে, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও প্রশাসন একইভাবে স্থানীয়ভাবে মগ পার্টি নামে খ্যাত বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে বান্দরবান সদর উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় নিয়ে এসে এসব এলাকায় তাদেরকে অবাধে একের পর এক হত্যা, অপহরণ, হুমকি ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যেতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে থাকে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সর্বশেষ গত ১৪ মে ২০১৯ তারিখে প্রশাসনের সহযোগিতায় দুইটি মাইক্রোবাস যোগে সংস্কারপন্থীদের ১৪ জনের একটি সশস্ত্র দলকে দীঘিনালা থেকে লংগদু লঞ্চ ঘাটে নিয়ে আসা হয়। সেদিন সকাল ১১:৪৫ ঘটিকায় লংগদু লঞ্চঘাটে পৌঁছার সাথে সাথে আগে থেকে ভাড়া করে রাখা তিনটি স্পীড বোটে তুলে সংস্কারপন্থীদেরকে বরকল উপজেলাধীন সুবলং ইউনিয়নের শুভলং বাজারে নিয়ে আসা হয়। সুশীল চাকমা ওরফে প্রবেশ ও পূর্ণাঙ্গ চাকমার নেতৃত্বে ১৪ জনের উক্ত সংস্কারপন্থী দল সুবলং এলাকায় আসার পর পরই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। প্রশাসন সহায়তায় তারা সুবলং বাজারে চেক পোষ্ট বসায়। মালবাহী ও যাত্রীবাহী সকল প্রকার জলযান তারা অবাধে চেক করতে থাকে এবং নিরীহ যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। ব্যবসায়ী ও সাধারণ গ্রামবাসীদের কাছে জোরপূর্বক চাঁদা ধার্য করে আদায় করতে থাকে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গ্রামে গ্রামে খবর দিয়ে গ্রাম ভিত্তিক গণহারে চাঁদা আদায় করতে থাকে। সংস্কারপন্থীদের হয়রানিতে সুবলং বাজার দিয়ে যাতায়াত করতে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, ঐদিন চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে সুবলঙে অবস্থানরত সংস্কারপন্থী দলের তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী একটি স্পীড বোট যোগে একটি বালুবাহী দেশীয় বোট ধাওয়া করতে গেলে স্মৃতিময় চাকমা কোকো নামে একজন সংস্কারপন্থী হ্রদের পানিতে পড়ে ডুবে গেলে ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এসময় সুবলঙে অবস্থানরত অপর সংস্কারপন্থী সদস্যরা ও প্রশাসনের লোক একসঙ্গে গিয়ে বালুবাহী বোট ধাওয়ারত সংস্কারপন্থী সশস্ত্র চাঁদাবাজদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ জানিয়ে আরো বলা হয়, সংস্কারপন্থী অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর মদদে জনৈক প্রীতিময় চাকমা কর্তৃক জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয়, জেলা, থানা ও বিভিন্ন স্তরের সদস্যসহ ৬০ জন নিরীহ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে উক্ত ঘটনার সাথে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়িত করে বরকল থানায় একটি সাজানো, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এধরনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান নস্যাৎ করা হচ্ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক স্বার্থে কখনোই শুভফল বয়ে আনতে পারে না।
বিজ্ঞপ্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের নিরাপত্তা ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রীতিময় চাকমা কর্তৃক জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয়, জেলা, থানা ও বিভিন্ন স্তরের সদস্যসহ ৬০ জনের নিরীহ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বরকল থানায় দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা দাবিও জানানো হয়।