অন্যান্য

সাঁওতাল হত্যার ৩ বছরঃ বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে আদিবাসী সাঁওতাল হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর, নির্যাতনের বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে ৬ নভেম্বর ঢাকার সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলানায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থাপিত বক্তব্য নিচে হুবুহু দেওয়া হল-

সন্মানিত সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ,

সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, এএলআরডি ও কাপেং ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

আপনারা অবগত আছেন যে, গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আদিবাসী ও বাঙালিদের উপর রংপুর মহিমাগঞ্জ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের হামলা, লুটপাট, খুন, উচ্ছেদ, অগ্নিসংযোগ ও হয়রানির ঘটনার ৩ বছর অতিবাহিত হলেও আদিবাসীরা প্রকৃত বিচার পায়নি। উপরোন্তু পুলিশ ব্যূরো কর্তৃক তদন্তকৃত চার্জশীটে বাদ পড়েছে মামলার প্রধান আসামী প্রাক্তন সাংসদ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এবং সাঁওতালদের বাড়িতে আগুন দেওয়া পুলিশ সদস্যদের সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম। যা স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান, মানবিকতা ও আইন সবকিছুকেই লংঘন করেছে।

প্রিয় বন্ধুগণ,
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার সাপমারা ইউনিয়নের রামপুর, সাপমারা, মাদারপুর, নারেংগাবাদ ও চকরাহিমপুর মৌজার ১৮৪২.৩০ একর জমি ১৯৫৪-৫৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার রংপুর (মহিমাগঞ্জ) সুগার মিলের ইক্ষু ফার্ম করার জন্য অধিগ্রহণ করেন। তৎকালীন সরকার জোরজুলুম ও নানা ছলনার মাধ্যমে রিক্যুইজিশন করলেও সুগার মিলের স্বার্থে ১৫টি আদিবাসী সাঁওতাল গ্রাম ও ৬টি বাঙ্গালি গ্রামের প্রায় ২ হাজার ৫০০ পরিবারের সদস্যরা সুগার মিলের স্বার্থে বাপদাদার ভিটা-জমি-বাড়ি-ঘর ছেড়ে যায়। উচ্ছেদের ফলে আদিবাসীরা দেশের বিভিন্ন অ লে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মূখীন হয় আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়।

২০০৪ সালে রংপুর সুগারমিল বন্ধ ঘোষণা করা হলে মিল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাঝে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকার ১৮৪২.৩০ একর জমি অবৈধভাবে লিজ প্রদান করতে থাকে। লিজ প্রদানের বিরুদ্ধে আদিবাসী-বাঙালি প্রতিবাদ করলে অসাধু মিল কর্মকর্তারা প্রভাবশালী স্থানীয় কুচক্রিমহলের যোগসাজসে উক্ত জমিতে ইক্ষুচাষ বাদ দিয়ে অন্যান্য ফসলাদি যেমন: ধান, গম, ভূট্টা, তামাক, সরিষা, আলু ইত্যাদি ফসল চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই তারিখের চুক্তিপত্রের (মেমোরেন্ডাম) ৫নং ধারায় উল্লেখ আছে যে, ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি রংপুর সুগার মিলের ইক্ষু ফার্ম করার জন্য অধিগ্রহন করা হয়েছে। উক্ত সম্পতিতে ইক্ষু চাষের পরিবর্তে যদি কখনো অন্য ফসল উৎপাদিত হয় তাহলে অধিগ্রহনকৃত সম্পত্তি পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন সরকার বরাবর ফেরৎ (সারেন্ডার) প্রদান করবেন। সরকার উক্ত সম্পত্তি গ্রহন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবেন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
ইক্ষুচাষ ও মিল বন্ধ হওয়ার ফলে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকার উত্তরাধিকারিদের জমি পৈত্রিকসূত্রে ফেরত পাবার অধিকার তৈরি হলে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষেরা পৈত্রিকভিটায় চলে আসে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের মতামত নিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। আদিবাসী-বাঙালিদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে মিল কর্তৃপক্ষ জমির অবৈধ লিজ বাতিল করতে বাধ্য হয়। ফলে কুচক্রি প্রভাবশালীদের স্বার্থহানি ঘটে। আদিবাসী বাঙালি সম্মিলিতভাবে পৈত্রিক জমি ফেরতের দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে। ১৯৬২ সালের চুক্তিতে বলা হয়, যে কাজের জন্য (ইক্ষুচাষ) জমি রিক্যুইজিশন করা হয়েছে তা করা না হলে খেসারতসহ পূর্ব মালিকদের কাছে ফেরত দিতে হবে। চুক্তির শর্তানুযায়ী, আদিবাসীদের পৈত্রিক সম্পত্তি ফেরত পাবার দাবি তাই যৌাক্তিক। কিন্তু সুগার মিলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালী কুচক্রীমহল যোগসাজস করে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে জুলুম ও নির্যাতনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে আদিবাসী-বাঙালি ভূমি উদ্ধার কমিটি গঠিত হয় এবং ন্যায়সংগত ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়। সেসময় সুগার মিল কর্তৃপক্ষ আদিবাসী সাঁওতাল ও বাঙালিদের জুলুম নির্যাতন নিপীড়ণসহ তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলার দায়ের করে।

প্রিয় বন্ধুগণ,
গত ৬ই নভেম্বর ২০১৬ মিল কর্তৃপক্ষ বেআইনীভাবে (কোর্টের আদেশ ব্যতীত) ৫০০শ’র অধিক পুলিশ, রেপিড একশন ব্যটালিয়ান (র‌্যাব), রংপুর সুগার মিল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা উচ্ছেদের নামে নিরীহ আদিবাসীদের উপর হামলা, বসতবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং বর্বরোচিতভাবে গুলিবর্ষণ করে। সে হামলায় ৩ জন আদিবাসী সাঁওতালকে গুলি করে হত্যা, ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৭ জনেরও বেশী আদিবাসী গুরুতর জখম হন। নিহত তিন আদিবাসী হচ্ছেন, শ্যামল হেমরম (৩৫), মঙ্গল মার্ডি (৫০) ও রমেশ টুড (৪০) এছাড়াও সেদিন রাতেই দ্বিজেন টুডু, চরন সরেন ও বিমল কিস্কুকে জখম অবস্থায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেন। উক্ত ঘটনায় ১২০০ উপর পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়। গোবিন্দগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন ঘটনার পরেই আদিবাসীদের বিরুদ্ধে দু’টি মিথ্যা মামলা করে (মামলানং: ২২৪/২০১৬, তাং: ৬/১১/২০১৬ এবং মামলা নং: ৫৫১/২০১৬, তাং: ৭/১১/২০১৬)। এই মামলা দু’টিতে ৪২ গ্রামবাসী এবং ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।

স্থানীয় প্রশাসন ও চিনিকল কতৃপক্ষ ঘটনার পর থেকে উক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী আদিবাসী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে মোট ৯টি মিথ্যা মামলা করে। এ পর্যন্ত ৮৮ জনকে সেই মামলা গুলোর মধ্যে একাধিকবার আসামী হিসেবে দেখানো হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার ও নির্যাতন করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পরিবার চালানোর মত আর্থিক অবস্থা যেখানে আদিবাসীদের নেই সেখানে ৯টি মামলার ভার পরিচালনা করতে গিয়ে আজ তারা দিশেহারা। মামলার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তৎকালীন পুলিশ ও কুচক্রী প্রভাবশালীমহল থানায় ভিকটিমদের মামলা গ্রহন না করে দীর্ঘ ১০দিন পর স্বপন মুরমু নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে অজ্ঞাত ৫০০/৬০০ জনকে আসামী করে মামলা রেকর্ড করে। স্বপন মুরমু আদিবাসী ভিকটিম পক্ষের প্রতিনিধি নন, অথচ ভিকটিমদের প্রতিনিধি থোমাস হেম্ব্রম কর্তৃক স্থানীয় সাংসদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অভিযোগ/এজাহার অজ্ঞাতকারণে থানা মামলা রেকর্ড করেনি।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, চিনিকলের কর্মকর্তা কর্মচারী, তৎকালীন সাংসদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাংশ ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলায় ইউনিফরম পরিহিত পুলিশ কর্তৃক অগ্নিসংযোগের দৃশ্য আল জাজিরা টিভিসহ দেশীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে আর্ন্তজাতিক মহলে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। ফলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশে গাইবান্ধা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৃর্তৃক বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে তদন্তে পুলিশ কর্তৃক আদিবাসীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি প্রমানিত হয়। অগ্নিসংযোগকারী ৩ পুলিশ বিভাগীয় তদন্তে চিহ্নিত ও সাময়িক বরখাস্ত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চিহ্নিত ৩ পুলিশকে এখনো এ অপরাধ সংঘটনের দায়ে গ্রেফতার করা হয়নি বা তাদের বিচারের কাঠগড়ায় আনা হয়নি।

মহামান্য হাইকোর্ট উক্ত ঘটনায় পুলিশ ব্যূরো অব ইনভেশটিগেশন’কে (পিবিআই) গোবিন্দগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে জনৈক স্বপন মুরম’র (তাং:১৬/১১/১৬,জি.আর:৫৬০/১৬) এবং আদিবাসীদের পক্ষে থোমাস হেমরম (তাং: ২৬/১১/২০১৬, জি.ডি ভূক্ত) এর দায়ের করা মামলার তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। গত ২৮ জুলাই ২০১৯ পিবিআই ৯০ জনকে আসামী করে গোবিন্দগঞ্জ জৈষ্ঠ বিচারক হাকিম পার্থ ভদ্রের আদালতে তদন্ত রির্পোট পেশ করেন। কিন্তু তদন্ত রির্পোটে মামলার প্রধান আসামী সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, অগ্নিসংযোগকারী পুলিশ সদস্য সহ গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের নাম বাদ পড়ে। উপরুন্ত বাদী পক্ষের লোকজনের নাম ও জড়িত নয় এমন কয়েকজনকে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সাঁওতালরা এই চার্জশীট প্রত্যাখ্যান করে। বিগত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ চার্জশীটের বিরুদ্ধে মামলার বাদী থোমাস হেমরম নারাজি পিটিশন দাখিল করে। ৪ নভেম্বর ২০১৯ নারাজি পিটিশনের শুনানী হয় এবং পুনরায় শুনানীর তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ধার্য করা হয়েছে।

প্রিয় বন্ধুগণ,
বিচারের প্রক্রিয়া যখন একদিকে চলমান অন্যদিকে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের আদিবাসী সাঁওতাল জনগণ প্রশাসন ও পুলিশি মামলার হয়রানিতে এবং ভূসন্ত্রাসীদের হুমকির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। আজ উচ্ছেদকৃত বারোশ’র অধিক আদিবাসী পরিবারে দিনে দু’মুঠোআহার জুটছে না। নিস্ব পরিবারগুলো আজও খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ৬ নভেম্বরের ঘটনায় আতঙ্কিত শিশুরা আজও স্কুলে যেতে ভয় পায়। ৬ নভেম্বর ২০১৬ ঘটনায় নিহত ৩ সাঁওতাল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যক্তি। তাদের পরিবার আজ নিস্ব, নিহত শ্যামল হেমরমের স্ত্রী ডুমি কিসপট্টা স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা। দুই নাবালক সন্তান নিয়ে সে আবারো ফার্মের মাটি থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছে। নিহত শ্যামল ও মঙ্গলের পরিবারেরও একই দশা। তাদের স্ত্রীরা পরের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রান্তিক আদিবাসীরা দু’বেলা অন্নের যোগান যেখানে করতে পারছে না সেখানে ৯টি মামলা কিভাবে চালাবে তার কূলকিনারা পাচ্ছে না। সহায়-সম্বলহীন আদিবাসীরা আবারো হয়ত একে একে এভাবেই নিরুদ্দেশ হবেন।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গত ২২ জানুয়ারি ২০১৮ গাইবান্ধা জেলা পরিষদ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলে ইপিজেড স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমীপে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ উক্ত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, “সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার” এর অব্যবহৃত ১৮৩২ একর জমিতে ইপিজেড স্থাপন করলে পর্যায়ক্রমে দরিদ্র সকল সাঁওতাল গোষ্ঠীসহ প্রায় ৮-১০ লক্ষ উত্তর বঙ্গের লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং প্রতি বৎসর প্রায় ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কিন্তু চুক্তির ৩ ও ৫ ধারা মতে- উক্ত সম্পত্তিতে ইক্ষু চাষের পরিবর্তে যদি কখনো কোন সময় অন্য ফসল উৎপাদন হয় তাহলে পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন রিকুইজিশন ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি সরকার বরাবর ফেরত দিবেন। ইতোমধ্যে জমির মূল মালিক আদিবাসী সাঁওতাল ও বাঙালি কৃষকেরা দাবি করেছেন, অধিগ্রহনকৃত ১৮৪২.৩০ একর জমি রেসটোরেশনের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে দেবার জন্য। গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখের চিনিকলের সন্ত্রাসীদের হামলায় ও পুলিশের গুলিতে তিন সাঁওতাল নিহত হন। এই পরিস্থিতিতে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের উক্ত জমিতে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা আসলে সুদূর প্রসারি এক দূরভিসন্ধিই বটে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা দেশের বিবেক, আপনারা সবসময় বি ত ও নীপিড়িত মানুষের পাশে থেকেছেন। আশা করি বাগদা ফার্মের নিপীড়িত ও বি ত মানুষের কন্ঠস্বরকে আপনারা সরকার ও জনগণের কাছে তুলে ধরবেন এবং আমাদের পাশে থাকবেন।

দাবিসমূহ:
২৮ জুলাই ২০১৯ পিবিআই কর্তৃক পেশকৃত প্রহসনমূলক চার্জশীট বাতিল করতে হবে এবং অবিলম্বে সাঁওতাল হত্যাকান্ডের মূলহোতা সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ অভিযুক্তদের বিচার করতে হবে;

গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-এর রিক্যুইজিশন (জবয়ঁরংরঃরড়হ) করা ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি আদিবাসীদের ফেরত দিতে হবে। সেই লক্ষে অবিলম্বে সংগ্রামরত স্থানীয় সাঁওতাল ও বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী ও বাঙ্গালী পরিবারের কাছে স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে;

আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং গুলি করে নিহত ও গুরুতর আহত করার সাথে জড়িত উস্কানিদাতা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সেই সাথে নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে;

৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসী-বাঙালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আদিবাসী বাঙালি নারী-পুরুষের উপর স্থানীয় সন্ত্রাসীদের জুলুম ও পুলিশী হয়রানি বন্ধ করতে হবে;

১৯৪৮ সালের The East Bengal (Emergency) Requisition of Property Act 1948 (No. VIII of 1948) মূল মালিকদের কাছ থেকে ভূমি গ্রহণ হয় তা না করা হলে খেসারতসহ পূর্বমালিকদের ফেরতের বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে;

২০০৪ সালে সুগার মিল বন্ধের পর প্রভাবশালীদের মাঝে লিজের নামে যে অর্থআত্মসাৎ ও দুর্নীতি হয়েছে সেই দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;

৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে উচ্ছেদকৃত সাঁওতাল আদিবাসী ও বাঙালি পরিবারের জন্য তাদের নিজ ভূমিতে পূর্ণবাসন করতে হবে এবং তাদের জন্য ঘরবাড়ি, স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও আবাসনের সকল ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে;

সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

ধন্যবাদন্তে
আয়োজকদের পক্ষে-

রবীন্দ্রনাথ সরেন
সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ

জাফরুল ইসলাম প্রধান
সাধারন সম্পাদক, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি

Back to top button