অন্যান্য

সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৪ বছর উদযাপিত

জনউদ্যোগ, এইচআরডি ফোরাম, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি), ও (বিসিএইচআরডি)’র যৌথ উদ্যোগে ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৪ বছর, ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ: আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও আদিবাসী’ বিষয়ক মুক্ত আলোচনা জুন ২৭, ২০১৯ রাজধানীর হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. আকমল হোসেনের সভাপতিত্বে এবং আইইডি’র সহকারী সমন্বয়কারী হরেন্দ্রনাথ সিং-এর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিশু কিশোর সংগঠক ডা. লেলিন চৌধুরী, আইইডি’র সমন্বয়কারী জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, সহযোগী সমন্বয়কারী তারিক হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মানবেন্দ্র দেব, সহকারী সমন্বয়কারী সুবোধ এম বাস্কে, বিসিএইচআরডি’র নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাজং, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিভূতি ভূষণ মাহাতো, স্কুল শিক্ষার্থী নওফেল রহমান।
বক্তারা বলেন, সান্তাল হুল নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের অনুষ্ঠান নতুন। শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস জানা, বোঝা ও অনুধাবন করা জরুরি। এটি করতে পারলে সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় দেশ গঠন করা সম্ভব। এই কাজটি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এখন থেকেই শুরু করতে পারে।

কেমন বাংলাদেশ আগামীতে দেখতে চাই- শিক্ষার্থীদের কাছে এই প্রশ্ন উত্থাপন করে বক্তারা বলেন, সুখী, সুন্দর ও শান্তিময় দেশ গঠন করতে হলে সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও গোত্রের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করা প্রয়োজন। যেখানে অন্যায়,অত্যাচার, অনিয়ম ও নিপীড়ন চলছে সেখানেই সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।

এই সময় ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতায় বিজয়ী দু’জন শিক্ষার্থী নওফেল রহমান ও আল নাহিয়ান আবির- ৩০ জুন উপলক্ষ্যে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি তুলে ধরেন।

তারা বলেন, পৃথিবীর সকল দেশে আদিবাসীদের লড়াই, সংগ্রাম, শোষণ ও বঞ্চনার ইতিহাস এক ও অভিন্ন। ‘সাঁওতাল বিদ্রোহের মহান নেতা সিদো কানহু’র লড়াই সংগ্রাম আমাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে হবে।

জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে নানা দিবস আছে। যেমন- ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেমন্বর বিজয় দিবস, ২৬ মার্চ জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবস, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ৩০ জুন সান্তাল হুল তেমন একটি দিবস। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ভারতবর্ষে আদিবাসীরাই প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই সংগ্রাম করে। এর আগেও আদিবাসীরা উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ১৭৮১-৮৪ সালে আন্দোলন করে। তাদের দেখানো পথ ধরেই আমাদের মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়।

ঐতিহাসিক ‘সান্তাল হুল দিবস’ বাঙালির কেন উদযাপন করা প্রয়োজন, এর প্রাসঙ্গিকতা ও তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেন শিশু কিশোর সংগঠক ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বাঙালি ও আদিবাসী বিশেষ করে সান্তালদের ঐতিহাসিক পরম্পরা ও নৃতাত্ত্বিক যোগসূত্র নিয়েও আলোকপাত করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সান্তালরা আমাদের রক্তসূত্রীয় ও আতœার আতœীয়। সান্তালদের ইতিহাস আমাদেরই ইতিহাস। মহাজনরা ঋণের জালে আটকিয়ে দাস বানাতো, মেয়েদের উপর অত্যাচার করতো। আমাদের ও তাদের মুক্তিসংগ্রাম এক ও অভিন্ন। তারাই আমাদের পূর্বপ্রজন্ম। তাই এই দিবস আমাদের উদযাপন ও তাৎপর্য সকলের অনুধাবন করা দরকার।

এরপর উপস্থিত বক্তৃতায় অংশগ্রহণকারী ও বিজয়ীদের মাঝে আমন্ত্রিত অতিথিরা বই উপহার প্রদান করেন। হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও অনুষ্ঠানের সভাপতি মো. আকমল হোসেন বলেন, সান্তাল হুল সম্পর্কে জানা আমাদের সকলের অবশ্য পালনীয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বাঙালি হিসেবে এই দিবস সম্পর্কে আমাদের জানা ও বোঝার সুযোগ কম। সান্তাল বিদ্রোহের সূত্র ধরেই আমাদের মুক্তিসংগ্রাম। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়তে হলে সাঁতাল হুল সম্পর্কে বোঝা ও জানার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।

আলোচনা শেষে হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাঙ্গণে এক সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সভাপতি সোহলে চন্দ্র হাজং কথা বলেন। তিনি বলেন, সান্তালরাই প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম শুরু করে। কিন্তু সাঁতালসহ আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস আমাদের পাঠ্যসূচিতে স্থান পায়নি। আমরা চাই আগামীতে শাসকগোষ্ঠী আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অর্ন্তভূক্ত করবেন। তিনি সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যার জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের জোর দাবি জানান।

Back to top button