রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত
রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ পার্বত্যাঞ্চলে পুনর্বাসিত বাঙালী সংগঠনগুলোর হরতালের মুখেও রবিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এরা হলেন, কমিশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার উল হক, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু), চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়,রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি জেলা পরিষদের সদস্য সিংইয়ং ম্রো, মং সার্কেল চীফ সাচিং প্রু চৌধুরী, বোমাং সার্কেল চীফের প্রতিনিধি রাজ কুমার চৌচিং প্রু, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি মোমিনুর রশিদ আমিন।
বৈঠক শেষে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৬ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সংশোধিত আইনের মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান ভুমির সমস্যাগুলো নিষ্পত্তি হবে। এই আইনের মাধ্যমে কমিশন আগামীতে তাদের কার্যক্রম কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে কাজ করবে।
রবিবার দুপুর ২ টায় রাঙামাটি সার্কিট হাউজে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। তিনি বলেন, কমিশনের কার্য পদ্ধতি, কমিশনের বাজেট, জনবল নিয়োগ বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
কমিশনের বৈঠক শুরু হয় সকাল ১১ টায়। চলে দুপুর ১ টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। বৈঠক শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার উল হক সাংবাদিকদের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কাজ করবে ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য। এতে করে কেউ ভুমি অধিকার হারাবে না। যারা ভুমি হারানোর আশংকা করছেন এটি অমুলক ধারণা।
চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় সাংবাদিকদের বলেন, নতুন পুরাতন আইন না ধরে এখন ২০০১ সালের আইন অনুসারে কমিশন তার কাজ করবে। ২০০১ সালে প্রণয়ন হওয়া আইনে যেসব অসংগতিগুলো ছিল সেগুলো দুর করা হয়েছে। এসব অসংগতি বাদ দিয়ে ২০০১ সালের আইনের সাথে সংশোধনীগুলো যোগ করে কমিশন তার ভবিষ্যত কার্যক্রম চালাবে।
তিনি বলেন, বৈঠকে কি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভুমি বিরোধ সংক্রান্ত দরখাস্ত আহবান করা হবে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভুমি কমিশন কাজ করতে গেলে তার অনেক জনবল লাগবে। কমিশনে যেসব পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল এগুলো পুরণ করতে হবে। কমিশনের শাখা কার্যালয় লাগবে। এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
কমিশনের সভার শুরু হওয়ার আগে রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় কমিশনের কমিশনের সদস্যরা রাঙামাটি সার্কেট হাউজে রাঙামাটি জেলার গুরুপূর্ণ সরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সৌজন্য স্বাক্ষাত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতিন্ত্র লাল, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা,রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা, নিলু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. প্রতিম রায় পাম্পু, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. মিহির বরণ চাকমা, এ্যাড. ভবতোষ দেওয়ান, আঞ্চলিক পরিষদের প্যানেল আইনজীবী এ্যাড. জুয়েল দেওয়ান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ৭০/৮০ দশকে দেশের সমতল অঞ্চল থেকে বাঙালী এনে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন করা হলে সৃষ্টি হয় ভুমি বিরোধ। সংঘঠিত হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। উদ্ভাস্তু হয় হাজার হাজার পরিবার। দেখা দেয় রাজনৈতিক সংকট। এই সংকট অবসানের জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়। চুক্তিতে ভুমি সমস্যাকে অন্যতম সমস্যা চিহ্নিত করে পার্বত্য চুক্তির আলোকে ২০০১ সালে গঠন হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন। আইনের কয়েকটি বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের আপত্তির মুখে এই আইনের ১৩ টি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। যা গত ৯ আগষ্ট রাষ্ট্রপতির অনুমোধন ক্রমে অধ্যাদেশ আকারে গেজেট প্রকাশ হয়। এই অধ্যাদেশের কারণে অসন্তোষ দেখা দেয় পুনর্বাসিত বাঙালীদের মধ্যে। তাদের মতে আইনটি কার্যকর হলে তারা ভুমি অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।