প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তরুণ কবি ম্যাকলিন চাকমা’র তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘নুও গরি ফাগুন এঝের’
![](https://ipnewsbd.net/wp-content/uploads/2020/02/4444-1.jpg)
সতেজ চাকমা: তরুণ কবি ম্যাকলিন চাকমা। পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাহাড়ের জুম্মদের নিয়ে ছবি আঁকেন। তবে সেই ছবি রং দিয়ে নয়। বর্ণমালায় ছবি আঁকেন। কল্পনা আর স্বপ্নের সমন্বয়ে পাহাড়ের জুমের ঢালে যাপিত জীবনের নানা সুখ,দু:খের কথাগুলো তুলে ধরেন বর্ণমালার খেলায়। সে বর্ণমালা একান্তই স্বকীয় ভাষার। এই প্রজন্মের নষ্ট স্রোতে স্বকীয় ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে অন্যকে আঁকড়ে ধরে থাকা তথাকথিত ‘আধুনিক’ সাজা প্রজন্মের অসংখ্য তরুণের মধ্যে বেশ আলাদা এই কবি ম্যাকলিন চাকমা।
তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দেবংসি’ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘আচ্’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।চাকমা ভাষায় তাঁর লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে জুমের ঢালে সবুজের ভিড়ে মাচাং ঘরের জীবনের সুখগুলো চিত্রিত রয়েছে পরতে পরতে। সেইসাথে পাহাড়ী মানুষের জীবনে ক্ষণিক সুখের মাঝে অবারিত দু:খের অঢেল অনুষঙ্গও কপালে ভাজ ফেলে দেয় পাঠকদের। কাপ্তাই বাঁধের বিস্মৃত স্মৃতির পাতাগুলো উল্টে দেয়ার চেষ্টা যেমন কবি ম্যাকলিনের কবিতায় উজ্জ্বল তেমনি জুম্ম প্রেয়সীর প্রেমে হাবুডুবু খেলতে কবি ম্যাকলিন চাকমা’র কবিতা তরুণ প্রজন্মের এক নতুন স্বপ্নের নির্ভরযোগ্য মাধ্যমও । কবি ম্যাকলিন চাকমা ‘আচ’ কাব্যগ্রন্থে ‘স্ববন বুনোঙ নিরিবিলিত’ কবিতায় লিখেছেন-
মিঝি আগে স্ববনানি হেল হেল তারুমত
রণ খেলা ছিদি তায় আগবান সুদোমত
নুও তম্বা জাগি উদোন
স্ববন দেঘোনি নিরিবিলিত
লাঙেলর পহধে পহধে
বাংলায়-মিশে আছে স্বপ্ন সবুজ বিস্তৃত বনে
সংগ্রামী সংস্কৃতি রয়ে আছে প্রতিশোধী জীবনের পানে
নব প্রজন্ম জেগে উঠে
দেখা স্বপ্নের নির্জনতার গহীনে
জুমের প্রান্তচূড়ার পথে পথে।
এমনি স্বপ্নের কথামালা সাজিয়ে বিজু-২০২০ উপলক্ষ্যে এপ্রিলে আসছে কবি ম্যাকলিন চাকমা’র তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ’নুও গরি ফাগুন এঝের’। চাকমা ভাষায় ’নুও গরি ফাগুন এঝের’ এর অর্থ কবি বলেছেন- ‘এক নতুন ফাগুনের প্রতীক্ষায়।’
আইপিনিউজ এর এই প্রতিবেদক এর সাথে এক আলাপে কবি ম্যাকলিন চাকমা জানান, নতুন প্রকাশিত হতে যাওয়া এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে ৪৬ টি চাকমা ভাষার কবিতা। এই কাব্যগ্রন্থের নতুন সংযোজন হচ্ছে বাংলা বর্ণমালার পাশাপাশি চাকমা বর্ণমালায়ও কবিতাগুলো ছাপা হবে। ‘রেগা’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হতে যাওয়া এই কাব্যগ্রন্থ নিয়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে ম্যাকলিন চাকমা পাহাড়ে নতুন ফাগুনের প্রতীক্ষায় তাঁর কাব্য চর্চার কথা জানিয়ে বলেন, এই কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে পাহাড়ী জুম্ম তরুণদের হতাশার কালো আঁধারে নিমজ্জিত না থেকে স্বপ্নের মহাকাশে পাড়ী জমানোর প্রতীক্ষার কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছি। পাহাড়ী মানুষের জীবনের ঘোর রাত্রির বুক চিড়ে নতুন ভোরের আগমনের কথাও জানিয়েছেন এই কবি। প্রখর রৌদ্রের তীব্র তাপদাহে শ্বাসরুদ্ধ আবহ ফুরিয়ে একদিন নতুন ফাগুন পাহাড়ে আসবে বলেও এই কবি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।