জাতীয়

পুরান ঢাকায় হকারদের ডিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ বন্ধ, হকার ব্যবস্থাপনার জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও পুরান ঢাকার উচ্ছেদকৃত ১০ হাজার হকারকে পুনর্বহাল করার দাবিতে আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার সকাল ১১টায় সদরঘাট ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার হকার সমবেত হলে সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুল হাশিম কবীল। বক্তব্য রাখেন হকার্স ইউনিযনের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াৎ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেত্রী শাহিনা আক্তার, কোতয়ালী থানা কমিটির সভাপতি আব্দুল কাউয়ুম, সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান পাটোয়ারী, হকারনেতা মো. রবিন, মো. জাহাঙ্গীর, সামছুল হক মোড়ল, আবুল খায়ের প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে পূর্বনির্ধারিত পুলিশের লালবাগ উপ-কমিশনারের কার্যলয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্য বিক্ষোভ মিছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট হয়ে কোট-কাচারির সামনে এলে পুলিশ ব্যারিকেট দিয়ে বাধা প্রদান করে। পুলিশি বাধার মুখে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্মারকলিপি পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হয়াৎ। উপস্থিত কয়েক হাজার হকার হাত তুলে দাবির প্রতি সংহতি জানান। স্মরকলিপিতে বলা হয় সিটি কর্পোরেশন বা সংশ্লিষ্ট মহল হকারদের কাঁধে যানজটের দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। অথচ হকার বিষয়টি ফুটপাতের সাথে সম্পর্কিত। যানজট রাস্তার বিষয়। কোন সাধারণ হকারের কি সাধ্য আছে রাস্তায় কিছু মালামাল রেখে বিক্রি করবে? প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার পরিবর্তে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে কোনো দিন যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যানজটের কারণ এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ের উপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা করা হয়। গবেষণার ফলাফলে যানজটের জন্য প্রধানত তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয় (১) প্রাইভেট কার দিয়ে রাস্তা দখল; (২) দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও (৩) যততত্র গাড়ি পার্কিং এবং কনস্ট্রাকশনের মালামাল দিয়ে রাস্তা দখল। এই গবেষণার ফলে প্রতীয়মান হয় যে, হকাররা যানজটের কারণ নয়।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, পুলিশ প্রশাসন গত কোরবানীর ঈদের ১৫ দিন আগে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অজুহাতে হকারদেরকে ফুটপাত ছেড়ে দিতে বলে। অনেকদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ প্রশাসন হকারদের আর ফুটপাতে বসতে দিচ্ছে না। এই অবস্থায় হকারি পেশা ও তাদের জীবন ধারণের পথ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে। ঢাকার দক্ষিণ সিটির পুরান ঢাকার ১০ হাজার হকার বেকারে পরিণত হয়েছে। এই ১০ হাজার বেকার মানুষ তাদের পরিবারের সদস্য নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ পেটের তাগিদে বিপথে চলে যেতে পারে। এতে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে। মহানগরীর লোকাল গার্মেন্টসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প যাদের উৎপাদিত মালামাল হকাররা বিক্রি করে তারা ও কর্মহীন হয়ে যাচ্ছে। হকারি পেশা বন্ধ থাকার করণে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে অশুভ মহল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের সুযোগ পাচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ যারা ফুটপাতের কেনাকাটার উপর নির্ভরশীল।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্ছারণ করে বলেন , হকারদের দাবি মেনে না হলে কঠোর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকা অচল করে দিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।

সমাবেশ থেকে সংঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি’র লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি প্রদান করতে তার কার্যালয়ে যান।

Back to top button