অন্যান্য

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চট্টগ্রামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ম্যাকলিন চাকমা: “ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসুন” এই স্লোাগানকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি,চট্টগ্রাম অঞ্চল কর্তৃক চট্টগ্রাম জে.এম. সেন হল প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক শ্রী তাপস হোড়ের সভাপতিত্বে এবং ছাত্রনেতা বা মং মারমার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. অনুপম সেন, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জনাব হোসাইন কবির,কবি ও সাংবাদিক জনাব হাফিজ রশিদ খান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা উত্তম চৌধুরী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা এ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ,নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাড. রেহেনা বেগম রানু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা,ঐক্য ন্যাপের নেতা শ্রী পাহাড়ী ভট্টাচার্য প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ঊক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২তম উদযাপন কমিটি,চট্টগ্রাম অঞ্চলের সদস্য সচিব জিং মুন লিয়ান বম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তিনি বলেন, চুক্তির ২২ বছর পরেও চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এখনো পর্যন্ত আন্দোলন করতে হচ্ছে।

তিনি আরো দাবি করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কোন সদিচ্ছা না থাকার কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।বরং সরকার চাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কিভাবে বাতিল করা যায় । তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত শাসকগোষ্ঠী চুক্তি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। তিনি সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানান।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ঐক্য ন্যাপের নেতা পাহাড়ী ভট্টাচার্য বলেন, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার জুম্ম জনগনের সাথে ২৬বার ধারাবাহিক আলোচনা করে ৫ দফা দাবির ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।তার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এবং তারা পর্যায়ক্রমে চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা অনেকদূর এগিয়েছে।কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের অধিকার খর্ব করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায়। মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এক অদৃশ্য শক্তির কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, সমতলের নাগরিকদের জন্য এক শাসন,পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিকদের জন্য অরেক শাসন চলছে।পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন জারি করে আদিবাসীদের অধিকার হরণ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।।
সংহতি বক্তব্যে বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পর্কে এদেশের মানুষ অনেকেই অবগত নন।কেননা চুক্তিকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু প্রচার করার জন্য শাসকগোষ্ঠী পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে বিভ্রান্তি মূলক তথ্য না ছড়ানোর জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট আইনজীবী ও নারী নেত্রী এ্যাড. রেহেনা বেগম রানু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আদিবাসীরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছিল।এদেশ স্বাধীন হয়েছে সকলের রক্তের বিনিময়ে। তিনি আরো বলেন, প্রধান শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আদিবাসীরা কষ্টে থাকতে পারেনা।তাই অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা উত্তম চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা সুখে নেই।তারা প্রতিনিয়ত নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হচ্ছে। রাষ্টযন্ত্র একটি মহল কর্তৃক তাদের অধিকার হরণ করছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের একঘরে করে রাখার চেষ্টা করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

সংহতি বক্তব্যে কবি ও সাংবাদিক হাফিজ রশিদ খান বলেন,শাসকগোষ্ঠী বিভেদ- বিচ্ছিন্নতার চর্চা করছে।এই বিভেদের মধ্যে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে গাফিলতি হচ্ছে।
অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জননীতির ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান নেতিবাচক অবদান রেখেছেন। যার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে জননীতির কারণে পাহাড়ী আদিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্র আজ অপশক্তির কাছে আপোষ করছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে দেরী হচ্ছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা ভয়ানক ছিল।কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর অনেকাংশে তা কমেছে।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জাতি ধর্ম বর্ণ সবাই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে অংশগ্রহণ করেছিল।সেখানে কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি ছিলনা।সেই চেতনাকে ধারণ করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট এই নাগরিক।

তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদিবাসীরা অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত।অনেক দেশের আদিবাসীরা তাদের ভূমির জন্য,অস্তিত্বের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। একইভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদেরকে অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এই সমাজ বিজ্ঞানী।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আহ্বায়ক এবং সভার সভাপতি তাপস হোড়ের সমাপনীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উক্ত আলোচনা সভাটি সমাপ্ত হয়।

Back to top button