জাতীয়

নানা আয়োজনে আগামীকাল রাজধানীতে পালিত হবে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা’র ৩৬ তম প্রয়ান দিবস

আগামীকাল ১০ নভেম্বর। পাহাড় তথা বিশ্বের সকল অধিকার বঞ্চিত শ্রমজীবি ও নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ৩৬ তম প্রয়ান দিবস। এ দিবসটিকে ঘিরে পাহাড়ের বিভিন্ন জেলা উপজেলা তথা ইউনিয়ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণসভা, প্রভাত ফেরী, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ফানুস ওড়ানো সহ নানা আলোচনা সভা। এ দিবসটিকে ঘিরে রাজধানীতেও জাতীয় পর্যায়ে পালিত হবে এ দিবসটি। এ উপলক্ষ্যে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ৩৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুল তলায় আয়োজিত হবে পুষ্পমাল্য অর্পন, স্মরণ সভা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উক্ত জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সাবেক ডাকসুর জিএস, জনউদ্যোগের আহ্বায়ক ডাঃ মুশতাক হোসেন। এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন এমপি, আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ডালেম চন্দ্র বর্মণ, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বিশিষ্ট কবি মোহন রায়হান, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট আবু সাঈদ খান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, মানবাধিকার কর্মী নুমান আহমদ খান, ব্যান্ড তারকা মাকসুদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র-যুব সংগঠন, সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ দেশের অনেক মানবাধিকার কর্মী, লেখক, বৃদ্ধিজীবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং আলোচনায় অংশ নেবেন।

এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন কণা এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস। উক্ত অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম।এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে সূচনা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন আদিবাসীদের প্রথম নারী ব্যান্ড দল এফ-মাইনর এবং এম.এন লারমার স্মরণে শিশুদের নিয়ে ছবি আঁকার আয়োজন করবে খেলাঘর। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ৩৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব হিরণ মিত্র চাকমা আইপিনিউজকে জানিয়েছেন, আলোচনা সভা এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হবে বিকাল ৩.৩০ ঘটিকার সময়। এই আলোচনা সভার পরে কফিল আহমেদ ও আদিবাসী গানের দল মাদল প্রতিবাদী গান পরিবেশন করবে বলেও জানান এই আয়োজক। আয়োজকরা সকল মানবাতাবাদী, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ভাবনার মানুষদের উক্ত আয়োজনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি জেলার নান্যেচর উপজেলার মাওরুম নামের এক গ্রামে। তরুণ বয়সে এ লারমা ছিলেন একজন ছাত্র ও যবি সংগঠক। ১৯৬০ এর কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা পাহাড়ী মানুষকে সংগঠিত করার প্রয়াস চালান। ১৯৬৩ সালে নিবর্তনূলক আইনে গ্রেফতার হন প্রতিবাদী এ মানুষটি। আইন নিয়ে পড়াশুনা করা এ মানুষটি ১৯৭০ সালের পাকিস্তান গণপরিষদের সাধারন নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা উত্তর সময়ে গণপরিষদে স্বীয় মহিমায় তাঁর বক্তব্যে রাখেন প্রজ্ঞা ও অসাম্প্রদায়িক মানবিক ভাবনার স্বাক্ষর। ১৯৭৩ সালেও বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে আবারো সাংসদ নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর বাকশালে যোগদান করেন। পাহাড়ের মানুষর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বতন্ত্রভাবে গড়ে তোলেন জনসংহতি সমিতি। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসনের উত্তাল সময়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সশস্ত্র সংগঠনের মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের শিকার হয়ে ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর নিজ দলের বিভেদপন্থীদের বুলেটে বিদ্ধ হয়ে অন্য আট সহকর্মীসহ দুধুকছড়ার খেদারাছড়া থুমে শহীদ হন অধিকার বঞ্চিত মানুষের এ নেতা।

Back to top button