জাতীয়

ধামইরহাটে আদিবাসী পল্লীতে অগ্নি সংযোগকারীদের শাস্তির দাবিতে পদযাত্রা

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চৌঘাট কাগজকুটা গ্রামে আদিবাসী জাতিসত্তা ও বাঙালি ভূমিহীনদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের দাবিতে নওগাঁয় পদযাত্রা করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ।

দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার হেঁটে আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অবস্থান কর্মসূচি শেষে পরিষদের নেতারা কাগজকুটা গ্রামে ভূমিহীনদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগকারীদের শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনসহ সাত দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের হাতে তুলে দেন।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নওহাঁটা বাসস্ট্যান্ড মোড় এলাকা থেকে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। এতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী যুব পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র পরিষদসহ নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার আদিবাসী জাতিসত্তার মানুষ অংশ নেয়।

পদযাত্রার উদ্বোধন করেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা কমিটির উপদেষ্টা আলতাফুল হক চৌধুরী। দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার হেঁটে পদযাত্রাটি দুপুর ১টার দিকে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে উপস্থিত হয়। পরে সেখানে ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি আমিন কুজুরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা, দপ্তর সম্পাদক সুভাষ হেমব্রম, আদিবাসী যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান, সিপিবি নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি মহসিন রেজা, নওগাঁ জেলা বাসদের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, চৌঘাট কাগজকুটা গ্রামে সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত একটি পুকুর পাড়ে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিসত্তার ১৬টি পরিবার সহ মোট ৩৭টি ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদের উদ্দেশে সন্ত্রাসীরা রাতের আাঁধারে তাঁদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার পর প্রায় এক মাস হতে চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে তেমন কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। পুনর্বাসন না হওয়ায় অসহায় পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন সহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের দাবি জানান তাঁরা।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রীবন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসী জাতিসত্তার মানুষের মূল সমস্যা হচ্ছে ভূমি নিয়ে। ভূমিকে কেন্দ্র করে এই নওগাঁতে বহু আদিবাসী পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে এবং অনেক আদিবাসী নারী ধর্ষনের শিকার হয়েছেন। ২০০০ সালে আদিবাসীদের নেতা আলফ্রেড সরেন প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে ভূমিদস্যুরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ণের ঘটনা বেড়েই চলছে।’

সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি মহসিন রেজা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ছিল সব মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখার লড়াই। প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা থেকে রাষ্ট্র দূরে সরে যাওয়ায় আজকে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্রীয় উপেক্ষার কারণে দেশের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীসহ নানা প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষ নিপীড়ণের শিকার হচ্ছে।’

এদিকে, গত ২৪ মার্চ রাতে ধামইরহাট উপজেলার চৌঘাট কাগজকুটা গ্রামে আদিবাসী জাতিসত্তার ১৬টি পরিবারসহ ভূমিহীন ৩৭টি পরিবারের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভূমিহীনদের অভিযোগ, খাস জমি থেকে তাঁদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাঁদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি মোশাররফ হোসেনসহ এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

Back to top button