জাতীয়

দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অসমতা দূর করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান : স্যাপি

আজ ২০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে সকাল ১১টায় সাউথ এশিয়ান অ্যালান্স ফর পভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)-বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বৈষম্যহীন দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই’শীর্ষক এক মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়। সাউথ এশিয়া অ্যালান্স ফর প্রভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও নারীনেত্রী রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, শিশু সংগঠক ও কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আইইডি-র নির্বাহী পরিচালক নূমান আহম্মেদ খান, বিএমএ- এর সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, আদিবাসী নেতা সুবোধ বাস্কে, ইনসিডিন বাংলাদেশ-এর অপারেশন ম্যানেজার মুশফিকুর রহমান, অক্সফামের পলিসি, অ্যাডভোকেসি, ক্যাম্পেইন এবং কমুনিকেশন ম্যানেজার মঞ্জুর রশিদ, সাবেক ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র দেব, জনউদ্যোগ নেতা মাহবুবুল আলম প্রমুখ। এছাড়া আরও অংশ নেন আদীবাসী নেতৃবৃন্দ, কৃষক-শ্রমিক-ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

মানব বন্ধনে রোকেয়া কবীর বলেন-‘ ‘দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার।এই বৈষম্যগুলো সামাজিক, অর্খনৈতিক, রাজনৈতিক কারণেই সৃষ্টি হয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ ওর্য়াল্ড ইকোনোমিক ফোরামের মত ফোরামগুলো ধনীদেশগুলোর স্বার্থ রক্ষ করে চলেছে, আমরা এধরণের অর্থনৈতিক আলোচনাকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য দাঁড়িয়েছি। আমরা একটি মহৎ সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণে একত্রে দাঁড়িয়েছি, যেখানে সকল মানুষের অধিকার ও সমমর্যাদা সুরক্ষিত হবে ।’

বিএমএ-র সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন- যে সিস্টেম ক্ষমতাশীলদের শক্তিশালী করে আর জনগণের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে আমরা সেই সিস্টেমের বিরুদ্ধে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি। আমরা একটি নতুন অর্থনৈতিক মডেল চাই যেখানে মানুষের অর্থনৈতিক সুবিধা, শান্তি এবং গণতন্ত্র পুনর্নিমাণ করবে এবং একটি অধিকতর ভালো বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরি করবে। ’

সাবেক ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র দেব বলেন,‘দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা এমন ধরনের অর্থনৈতিক ধ্যানধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যেখানে বাজার ও অর্থের একচ্ছত্র আধিপত্য। মূলত,এই বিষয়গুলোর ফলেই বিগত ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য চরমভাবে বেড়েই চলেছে।’

আইইডি-র নির্বাহী পরিচালক নূমান আহম্মদ খান বলেন- ‘প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুই ধরনের দুর্যোগের ক্ষেত্রেই দক্ষিণ এশিয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।এঅঞ্চলে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, ভূমিক¤প ইত্যাদির ফলে লক্ষ লক্ষ লোক দুর্দশার শিকার হয়। শিশুরা এসব দুর্যোগের ক্ষেত্রে আরো বেশি দুর্দশার শিকার হয়। দুর্যোগের পরে বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা ইত্যাদির অভাব ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে, পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এবং দুর্যোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াকে ধীরগতির করে তোলে।’

‘দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার।এই বৈষম্যগুলো সামাজিক, অর্খনৈতিক, রাজনৈতিক কারণেই সৃষ্টি হয়েছে।এই বৈষম্য কমাতে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

মানব বন্ধনে বক্তারা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এবং অন্যান্য বিশ্বের সরকারসমূহকে ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যকার ব্যবধান কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, মজুরী বৈষম্য কমানো, নারীর প্রতি বৈষম্য কমানো,দেশীয় কর রাজস্ব সচল করা এবং ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির প্রতি অন্যায্য কর ছাড় বন্ধ করা,ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির ন্যায্য ভাগ পরিশোধ করা; জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিনিয়োগ করা, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র গড়ে তোলা এবং সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাধান্য খর্ব করাসহ খাদ্যের ভ্যালু চেইনের শোষণ থেকে নারী ও ক্ষুদ্র কৃষককে রক্ষা করা, ক্ষতিগ্রস্ত/আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ূ বিপর্যয় রোধ করার দাবী জানান।

Back to top button