আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উষাতন তালুকদারের
আসন্ন জাতীয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাঙামাটি ২৯৯ নং আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জনসংহতি সমিতির নেতা উষাতন তালুকদার শনিবার রাঙামাটিতে সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে দশ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেছেন।
এসময় সংবাদ সন্মেলনে উষাতন তালুকদার আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে নানাভাবে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে বলেন, জেলার রাজস্থলী উপজেলায় তার নির্বাচনী প্রচারণাকালে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর লোকজন বিভিন্ন ধরনের উস্কানি দিয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন,নির্বাচনী প্রচারণাকালে দীপংকর তালুকদার গত দশম নির্বাচনে রাঙামাটিতে অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে জনসংহতি সমিতি ৯৫ থেকে ৯৬ শতাংশ ভোট ডাকাতি করেছে এবং তাতে আমার বিজয় হয়েছে বলে যে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, তা একেবারে অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যা সুস্পষ্ট নির্বাচন আচরণবিধির লঙ্ঘন। কারণ দীপংকর এ ধরনের ডাহা মিথ্যা অপপ্রচার চালালেও তখন নির্বাচন কমিশন ও রিটানিং অফিসার তার তথাকথিত সেই ভোট ডাকাতির কোনো অভিযোগ আমলে নেননি। বরং নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে ঘোষণা করেছিলেন। বিপরীতে ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে রাঙামাটিতে ১১টি কেন্দ্র দখল করে জালভোট নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি করেছে।
শহরের একপি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উষাতন তালুকদার এমপি ছাড়াও এসময় জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা সৌখিন চাকমা, নির্বাচন প্রচারণা কমিটি আহবায়ক উদয়ন ত্রিপুরা, জনসংহতি সমিতির নেতা দীপায়ন খীসা, হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী রীনা চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি জুয়েল চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সংবাদ সন্মেলনে জনসংহতি সমিতির ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও তাবেদারী ভূমিকা নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার যতই অপপ্রচারে লিপ্ত হোক না কেন রাঙামাটিবাসী সেই গোয়েলবলসী অপপ্রচারে কখনোই বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, তাকে ও তার দল জনসংহতি সমিতিকে নিয়ে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড বিষয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা মিথ্য ও বানোয়াট। তার কোন প্রমাণ দিতে পারলে তিনি নির্বাচনকে সরে দাড়াবেন। আমরাও চাই স্বাধীন ও সার্বোভৌম দেশে একসাথে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একসাথে বসবাস করতে।
তিনি বলেন, জনসংহতি সমিতি থেকে বর্তমানে এমপি রয়েছেন। এ দলটি দীর্ঘ দিন ধরে রাজনৈতিক ও মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। তবে তার দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত না হওয়ায় স্বতন্ত্র হয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছে। তাই একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের সমর্থন দেয়ার কথা উঠছে তা মোটেই সত্য নয়, বাস্তব সম্মত নয়। যারা এসব কথা বলছে তারা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সুবিধা নিতে চাইছে যাতে মানুষ যাতে বিভ্রান্ত হয়। তবে মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে।
উষাতন তালুকদার এমপি বলেন, জনসংহতি সমিতি কোন ধরনের বৈধ বা অবৈধ অস্ত্রবাজি করে না। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে পার্বত্যবাসীকে সাথে নিয়েই গণতান্ত্রিক উপায়ে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। জনসংহতি সমিতিও চাই পার্বত্যাঞ্চল থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হোক।
তিনি রাঙামাটি আসনের নির্বাচন শান্তিপূর্ন, সুষ্ঠ,নিরপেক্ষ অবাধ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার আশা ব্যক্ত করে উষাতন তালুকদার ভোটের দিনে ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ও কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ও বাধা ছাড়া কেন্দ্রে যেতে পারে এবং মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সন্মেলনে উষাতন তালুকদার দশ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা দেন। সেগুলো হল স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকার উদ্যোগ, এলাকার জনমুখী ও পরিবশে বান্ধব সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত, ব্যবসা-বানিজ্যে সম্প্রসারনের লক্ষ্যে অনুকুল পরিবেশ গড়ে তোলা,ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপন এবং স্থানীয় ভিত্তিক বানিজ্যি প্রকল্প প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদী অপতৎপরতা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূলীকরনে দেশের গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল শক্তির সাথে একাতœ হয়ে বলিষ্ট ভূমিকা পালন, সামাজিক,সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে নারীর সম মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যোগ, নারী উদ্যোক্তা শ্রেনী গড়ে তোলার লক্ষে বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং স্বপ্ল ও বিরা সুদে ঋণদান কর্মসূচি গ্রহন করার উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। নারীদের উপর সকল প্রকার সহিংসতা ও নিপীড়ন বন্ধের বিশেষ উদ্যোগ করা হবে। আত্নকর্মস্থান প্রকল্প গ্রহন ও শিল্প কলকারখানার মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্ম সংস্থানের উদ্যোগ, প্রথ্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা,স্বকীয় সংস্কৃতি সংরক্ষন ও বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ, রাঙামাটি সরকারী কলেজে অনার্স ও স্নাতকোত্তর কোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন, পার্বত্যাঞ্চলে কারিগরী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে ভোকেশনাল ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, প্রাথমিক শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি ও মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে ছাত্রাবাসের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কাপ্তাই হ্রদের জলসীমা নির্ধারণ, জলে ভাসা জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করা এবং হ্রদের পানির উচ্চতা হ্রাস বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরনসহ কৃষি ঋণের ব্যবস্থা চালুর প্রচেষ্টা, ফলজ-বনজ বাগান সম্প্রসারণসহ উৎপাদিত ফল-মূল রক্ষনাবেক্ষণ ও নায্যমূল্য নিশ্চিতকরনের জন্য উদ্যোগ নেয়া, সহজ শর্তে কৃষি ঋণসহ জুম চাষীদের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন,জুম চাষের সময় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের হয়রানি বন্ধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থার উদ্যোগ,প্রতিবন্ধিদের সমস্যাদি নিরসনের এবং জেলে-তাতিসহ শ্রমজীবি মানুষের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন এবং এশিয়ার বিখ্যাত কাগজ কারখানা কর্নফুলী পেপার মিলসকে লাভজনক অবস্থায় পরিণত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন।