জাতীয়

আদিবাসী অধিকার আদায়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান সন্তু লারমার

‘আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার দেওয়ার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে আয়োজিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে মর্যাদা নিয়ে, মৌলিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন আন্দোলন সংগ্রাম। তাই বাংলাদেশের আদিবাসী, বাম প্রগতিশীল ও নিপীড়িত জনগণকে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।’

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন সরকার নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যতটুকু সম্ভব করছে। আমার প্রশ্ন হলো যারা শাসন করেন, নেতৃত্ব দেন তাদের সীমাবদ্ধতা কেনো থাকবে, কেনো সংবিধানে আদিবাসীদের বিলুপ্ত করে দেবে, কেনো অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষকেও বাঙালি বলে অভিহিত করবেন!’

‘উগ্র জাতীয়তাবাদীতা, সাম্প্রদায়িকতার কারনেই আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, দেশান্তরে বাধ্য করছে। বাংলাদেশেকে ইসলামিকরনের যে প্রক্রিয়া চলমান তাতে আদিবাসীদের নিপীড়নের ভেতর জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। সে কারনে আদিবাসীরা প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমাকে লজ্জা গ্রাস করে, বাকরুদ্ধ করে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অগ্রবাহিনী ছিলো আদিবাসীরা তাদের আমরা স্বীকৃতি দিতে রাজি না, এটা লজ্জার। মুক্তিযুদ্ধেও অবদান ছিলো একথা অকৃতজ্ঞ বাঙালি স্বীকার করেনা। এটা আমাকে লজ্জা দেয়, এটা লজ্জার।’
তিনি বলেন, ‘কেবল আদিবাসীদের অস্বীকার করছে তাই নয় পাশাপাশি দেশ থেকে বিতাড়নের মহাউৎসব চলছে। ভূমিদস্যুরা, ক্ষমতাশালীরা এই বিতাড়নের কাজ করছে।’

‘লুটেরাদের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বাঁচাও এটা হবে আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মুক্তিযোদ্ধা ও আপামর নিপীড়িত গণমানুষের স্লোগান। বাঁচাও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, লুটেরাদের হটাও’ এমন আহবান রাখেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, ‘আদিবাসীদের জোর করে তাদের বসতভিটা, জমিজমা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সারাবিশ্বে হচ্ছে, বাংলাদেশেও হচ্ছে। সাধারণভাবেতো হচ্ছেই, উন্নয়নের নাম করেও এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমান সময়ে রোহিঙ্গাদের চাপের মুখে পড়ে কক্সবাজারের আশেপাশের আদিবাসীরা দেশ ছাড়ছে। এটা সমতলের অনেক জায়গাতেও হচ্ছে।’

সমাবেশের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহবায়ক ফজলে হোসেন বাদশা বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিশিষ্ট নাট্য ব্যাক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অক্সফামের মনজুর রশীদ প্রমূখ। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির বাণী পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

এর আগে সকালে আদিবাসী গানের দল মাদলের গণসংগীতের মাধ্যমে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের শুরু হয়। বক্তব্য শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর এক বর্ণাঢ্য র‍্যালীতে শত শত আদিবাসীর অংশগ্রহনের মাধ্যমে আয়োজনের সমাপ্তি হয়।

Back to top button