তথ্য প্রযুক্তি

কম্পিউটার ব্যবসায়ী জগতালো চাকমার সফলতার কাহিনী

শ্যাম সাগর মানকিনঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করার পর চাকরির খুঁজছিলেন জগতালো চাকমা। অনেক জায়গায় টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়ার সম্ভবনা থাকলেও টাকার বিনিময়ে চাকরি নেননি তিনি। এমন এক সময়ে খাগড়াছড়ির সাবেক জেলা প্রশাসক একেএম জাফরুল হোসেনের পরামর্শে ঢাকায় আসেন চাকরির খোঁজে। নিজের স্বপ্ন নিজে গড়ে তোলার প্রত্যাশায় হাতে অল্প টাকা নিয়ে ঢাকায় পা রাখেন জগতালো চাকমা। ঢাকায় এসে প্রথমে ঈপ্সিতা কম্পিউটার্স নামে এক প্রতিষ্ঠানে সেলসের কাজে যোগ দেন তিনি। ঘটনাগুলো ১৯৯৭ সালের কথা।
এরপর আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয় তার। টেকনো কেয়ার নামে এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় ব্যবসা করার কথা মাথায় ঘুরতে থাকে। চাকরির সুবাদে আইডিবি ভবনের কম্পিউটার সিটিতে নিজের একটা পরিচিতি ও সুনাম গড়ে তুলতে সক্ষম হন তিনি। সেই পরিচিতি নিয়েই চাকরি ছেড়ে দিয়ে কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশের নিজের ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকা আগারগাঁর তালতলায় বড়সড় একটা অফিসে অল্প পূঁজি নিয়ে ২০০৯ সালে ডিজিটাল কম্পিউটার্স নামে কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশের ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়। ২০১৪ সালে তালতলা থেকে মিরপুর-১০ গোলচত্ত্বর সংলগ্ন শাহ আলী প্লাজা্র পঞ্চম তলায় অফিস স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমান অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে জগতালো চাকমার ডিজিটাল কম্পিঊটার্স সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশসসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে থাকে। বিভিন্ন বড়সড় কম্পিউটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে ডিজিটাল কম্পিউটার্স। আদিবাসী হিসেবে বিভিন্ন সময় নানান বাঁধা পেরুতে হয়েছে ব্যবসার ক্ষেত্রে। কিন্তু তাতে মোটেও দমে যাননি তিনি। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন। সেই সততা ও নিষ্ঠার জোরে ব্যবসার কাজ বাড়িয়ে তুলেছেন ধাপে ধাপে।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সরকার থেকে নিজস্ব ব্র্যান্ড এর অনুমতি পেয়েছেন জগতালো চাকমা। আশা করছেন নিজের ব্র্যান্ডের হার্ডওয়ার নিয়ে আগামী মাস নাগাদ বাজারে হাজির থাকতে পারবেন তিনি। নিজের ব্র্যান্ডের নাম দিয়েছেন ডিলাক্স। ডিলাক্স ব্র্যান্ডের নামে কম্পিউটার ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবেন তিনি। নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে বেশ আশাবাদী জগতালো চাকমা। চায়না, তাইওয়ান, সিংগাপুর থেকে ডিলাক্স ব্র্যান্ডের নামে যন্ত্রপাতি আসবে। প্রথমদিকে বার কোড স্ক্যানার বাজারে আনবে ডিলাক্স। একে একে ক্যাশ ড্রয়ার, পস প্রিন্টার, আইপি ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরা, ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার(ডিভিআর), নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার(এনবিআর) এবং স্পীকার আমদানি করবে ডিলাক্স ব্র্যান্ড। ডিলাক্স ব্র্যান্ডের এ সব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের গুনগত মান অনেক ভালো হবে বলে তিনি জানান।
একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে ইতিমধ্যেই সক্ষম হয়েছেন জগতালো চাকমা। নিজেকে ডিজিটাল কম্পিউটার্সের সিইও হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শ্রম মেধার যথাযথ ব্যবহার ধৈর্যের সাথে করতে হয়েছে। ডিজিটাল বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরবরাহের ব্যবসার ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে বা সফল হতে হলে এই বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। পাশাপাশি জানতে হবে বিভিন্ন প্রোডাক্টের মান, গ্রাহকের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি। কেবল কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই এগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যেতে পারে। একজন নবীন উদ্যোক্তার জন্য কাজটি মোটেই সহজ হবেনা বলে মনে করেন জগতালো চাকমা।
খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকায় অল্প কিছু টাকা সম্বল করে আসা যুবকটি এখন নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মালিক। নিজের শ্রম ও মেধা খাটিয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করিয়েছেন। সততা ও নিষ্ঠার সাথে সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রাযুক্তিক যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে চলেছেন তার প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল কম্পিউটার্স। সরকারি চাকরিজীবি বাবা বলরাম চাকমা ও পুরোদস্তুর গৃহিনী মা কিরনমালা চাকমার সাত ছেলেমেয়ের সবার ছোট জগতালো চাকমা। ভাইবোন সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। জগতালো চাকমার জন্ম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে খাগড়াছড়িতে। খাগছড়ি সদরের গঞ্জপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। পরবর্তীতে রামগড় হাই স্কুল ও কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন জগতালো চাকমা। ১৯৯১ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষে। সেখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্র নিয়ে ছোট সংসার তার। পরিবারের পাশাপাশি সকল ধ্যান জ্ঞান ভালোবাসা জড়িয়ে রয়েছে ডিজিটাল কম্পিউটার্সে। জীবনের অন্যতম সফলতা যে এই ডিজিটাল কম্পিউটার্স-র হাত ধরেই অর্জন করেন তিনি।

Back to top button