রাঙামাটিতে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে জনসংহতি সমিতির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
১৬ জুন ২০১৬ সকাল ১০:৩০ টায় রাঙ্গামাটি জেলা সদরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগে ‘জনসংহতি সমিতির বান্দরবান থানা শাখার সভাপতি উচসিং মারমাকে ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুনীতিময় চাকমাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং বান্দরবানে জনসংহতি সমিতি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে’ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় ৪-৫ হাজার জনসংহতি সমিতি ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্য ও জনগণের অংশগ্রহণে জনসংহতি সমিতির জেলা কার্যালয় হতে মিছিলটি শুরু হয়ে বনরূপা ঘুরে এসে ডিসি অফিসের দক্ষিণ ফটকে এসে সমাপ্ত হয় এবং সেখানেই একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি সুবর্ণ চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় ভূমি ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক চিংলামং চাক, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জোনাকী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরুণ ত্রিপুরা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অন্তিক চাকমা প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জনসংহতি সমিতির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল খীসা ও মহিলা সমিতির নেত্রী সুপ্রভা চাকমা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে ও হয়রানি করার করার উদ্দেশ্যে গত ১৫ জুন মিথ্যা মামলায় জড়িত করে বান্দরবানের জনসংহতি সমিতির নেতা উচসিং মারমাকে এবং গত ১৪ জুন জনসংহতি সমিতির শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে ছাত্র নেতা সুনীতিময় চাকমাকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার ও প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানান। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে বলে নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ জনসংহতি সমিতি ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের হয়রানি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের অসহযোগ আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে এই মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, এখানে সরকারী দল ও স্থানীয় প্রশাসনের একটি মহল ষড়যন্ত্র করে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও সেটেলারদের দিয়ে জনসংহতি সমিতির শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনকে অশান্তিপূর্ণ পথে নিয়ে যেতে বাধ্য করছে এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বরকলের ভূষণছড়ার ছোট হরিণা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে ও উক্ত নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আহুত সড়ক ও জণপথ অবরোধ কর্মসূচিকে বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে মামলা দিয়ে, হামলা করে ও দমন-পীড়নের মধ্য বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হলে এই আন্দোলন অগণতান্ত্রিক পথে ধাবিত হতে বাধ্য হবে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
নেতৃবৃন্দ কথিত অপহরণ ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বলেন, মংপু মারমার বাড়ির চারিদিকে পুলিশ ক্যাম্প, সেনা ক্যাম্প ও বিজিবির সদর দপ্তর রয়েছে, তা সত্ত্বেও এই নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে তাকে কীভাবে অপহরণ করা হলো?
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এই অপহরণ মামলার ১নং আসামী করা হয়েছে জনসংহতি সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং মারমাকে এবং ২নং আসামী করা হয়েছে জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টনকে, অথচ তারা দাপ্তরিক কাজে কয়েক দিন ধরে ঢাকায় রয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অপহরণ যদি হয়েই থাকে তাহলে সর্বাগ্রে উচিত ছিল সবাইয়ের সহযোগিতা নিয়ে মংপু মারমার উদ্ধারে নিয়োজিত হওয়া। কিন্তু তা না করে জনসংহতি সমিতি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দেয়া হয়েছে এবং সমিতির নেতা উচসিং মারমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরদিকে একটি সামাজিক সমস্যা সামাজিকভাবে সমঝোতা হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিলাইছড়িতে সেনাবাহিনীর একদল সেনাসদস্য কর্তৃক ছাত্রনেতা সুনীতিময় চাকমাকে আটক করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে জড়িত করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত ১৫ জুন ২০১৬ রাত আনুমানিক ১২:১৫টার দিকে জনৈক এসআই এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বান্দরবান থানা শাখার সভাপতি ও জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক উচসিং মারমাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে য়ায়। গ্রেপ্তারের কারণ জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, এর দুই দিন আগে বান্দরবান সদর থানাধীন রাজভিলা ইউনিয়নের মংপু মারমা নামে আওয়ামী লীগের এক সদস্যকে একদল অস্ত্রধারী কর্তৃক অপহরণ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় জড়িত করার উদ্দেশ্যেই উচসিং মারমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে জানা গেছে, মংপু মারমা অপহরণ মামলায় গণহারে বান্দরবানে জনসংহতি সমিতির বিভিন্ন স্তরের ৩৮ জনকে নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে জড়িত করে যে সাজানো ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়েছে তাতে গ্রেফতারকৃত উচসিং মারমার নাম নেই। উচসিং মারমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর সকালে উচসিং মারমার স্ত্রী থানায় গিয়ে স্বামীর সাথে দেখা করতে চাইলে থানার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাকে দেখা করতে দেননি এবং পুলিশ সুপারের নিষেধ রয়েছে বলে জানান। উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ২০১৬ রাতে বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের জামছড়ি মুখ গ্রামের সাবেক মেম্বার মংপু মারমাকে তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী এক বাড়ি থেকে কে বা কারা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অপহরণ করে নিয়ে গেছে। জানা গেছে, এই মংপু মারমা আওয়ামী লীগের বান্দরবান সদর থানার শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক।
অপরদিকে, ১৪ জুন ২০১৬ দুপুর প্রায় ২:০০ টার দিকে রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ১৩ বেঙ্গল এর দীঘলছড়ি সেনা জোনের জনৈক হাবিলদার মেজরের নেতৃত্বে ৯ জনের একদল সেনা সদস্য বিলাইছড়ি বাজার ঘাটে এসে উপস্থিত হয় এবং সেখানে জনসংহতি সমিতির ডাকা সড়ক ও জলপথ অবরোধে পিকেটিংরত যুব সমিতির বিলাইছড়ি উপজেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক নয়ন জ্যোতি চাকমা (২৪), যুব সমিতির বিলাইছড়ি ইউনিয়ন কমিটির সদস্য স্নিগ্ধ তঞ্চঙ্গ্যা (২৪), যুব সমিতির বিলাইছড়ি-আহ্জাছড়া গ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জীবন চাকমা (২৭) ও পিসিপির বিলাইছড়ি উপজেলা শাখার অর্থ সম্পাদক সুনীতিময় চাকমা (২২)কে আটক করে। এরপর সেনাদলের কম্যান্ডার হাবিলদার মেজর মোবাইল ফোনে বিলাইছড়ি থানা পুলিশের কর্মকর্তা এসআই আক্তারকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে আনে এবং আটককৃত ৪ জনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পুলিশ আটককৃত ৪ জনকে থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে।
এরপর জনসংহতি সমিতি ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মী এবং জনগণের চাপে আটকের প্রায় ২ ঘন্টা পর আনুমানিক বিকাল ৪:০০ টার দিকে পুলিশ চার জনের মধ্যে তিনকে ছেড়ে দিলেও পিসিপির বিলাইছড়ি উপজেলা শাখার অর্থ সম্পাদক সুনীতিময় চাকমাকে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে আটকে রাখে।