আঞ্চলিক সংবাদ

পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার ১৯ তম বার্ষীক শাখা সম্মেলন সম্পন্ন

জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ও চুক্তি বিরোধী সকল কার্যক্রম প্রতিহত করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নই হোক যুব সমাজের দৃঢ় অঙ্গীকার” এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০ শে মার্চ ২০১৮ ইং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) অডিটোরিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার “১৯ তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও ২০ তম কাউন্সিল” অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক দীপন চাকমার সঞ্চালনায় এবং সহ-সভাপতি রুপেশ চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম কনক, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জুয়েল চাকমা, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নকুল পাহান এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি এ এম শাকিল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মংক্যাওয়াইন রাখাইন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নকুল পাহান বলেন, পিসিপি’ দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পথ ধরে এতদুর এসেছে। পাহাড়ে যেমন নিপীড়ন নির্যাতন চলছে তেমনি সমতলের আদিবাসীরাও নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সে কারণে পাহাড় এবং সমতলে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এএম শাকিল বলেন, মনের যেখানে মিল, নীতির যেখানে মিল সেখানে মিলন ঘটাতে হবে। পাহাড়ে যেমন পাহাড়ের মানুষ শাসকদের কাছে মার খাচ্ছে তেমনি সমতলের খেটে খাওয়া মানুষও শোষকদের কাছে মার খাচ্ছে।সে কারনে পাহাড় এবং সমতলের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মিল আজকে সময়ের দাবি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিপিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি জুয়েল চাকমা বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগনকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান সরকারও পাহাড়ের মানুষ কে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। যার ধারাবাহিকতায় জুম্মদের অর্থনৈতিক মেরূদন্ড ভেঙে ফেলার ষডযন্ত্র হিসেবে কাপ্তাই বাঁধ দেওয়া হযেছিল। অধুনিক বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীও ব্রিটিশ ও পাকিস্তান সরকারকেই অনুসরণ করে যাচ্ছে মাত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক গণহত্যা ও নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ও ছাত্র ও তরূণ সমাজ কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ঊন্নয়নের নামে পর্যটনের নামে জুম্ম জনগনকে নিশ্চিন্ন করার পাঁয়তারা চলছে। আজকে বিলাইছড়ি সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি এখানে পাহাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নেই, নারীদের নিরাপত্তা নেই। তারা যেকোনো সময় ধর্ষণ, হত্যা ও অপহরণের শিকার হচ্ছে। এই বাস্তবতায় পাহাড়ের ছাত্র সমাজকে অবশ্যই পাহাড়ের মানুষ, প্রাণ ও প্রকৃতিকে রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের ছাত্র সমাজেও বিভিন্ন ধরনের বিভেদ রয়েছে। এখানে সামন্তিয় চিন্তাধারার কারনে বিভিন্ন সংকীর্ণ চিন্তা ধারা ও সংকীর্ণ জাতীযতাবাদের উত্থান ঘটছে সে কারনে আমাদের কে এসবের উর্ধ্বে উঠে নিপীড়িত মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড.আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, পাহাড়কে রক্ষা করতে হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অধ্যয়নরত পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রীদের কে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাহাড়কে নিযে একটি মহল বৃহত্তর বাঙালি সমাজে ক্রুটি পূর্ণ তথ্য ছড়িযে দিচ্ছে। যার কারণে পাহাড়ী এবং বাঙালিদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যখনই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পাহাড়ে কোন গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠে তখন সেটেলারদের দিয়ে পাহাড়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ দীর্ঘ সময় আন্দোলন করে উদ্দ্যম যুবকে পরিনত হয়েছে। এ সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কে ঐক্য আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, আজকে যারা নতুন কমিটিতে আসবেন তাদের কে অবশ্যই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন কে বেগবান করতে হবে। সেই সাথে সমতলের সকল আদিবাসীদের সাথে সমন্বয় সাধন ও দেশের শিক্ষিত প্রগতিশীল সমাজের সাথে আন্ত-যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। ছাত্র রাজনৈতিক জীবন শেষ করে জনসংহতি সমিতির পেশাদার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য তিনি উদাত্ত আহবান জানান এবং জনসংহতি সমিতি সেটাই ছাত্র সমাজের কাছে প্রত্যাশা করে। সেই সাথে তিনি বলেন সঠিক আদর্শে দীক্ষিত হয়ে দর্শনগত বিষয়ে পারদর্শী হয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

উক্ত অনুষ্ঠানে, দীপন চাকমাকে সভাপতি, রাসেল চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং মংক্যাওয়াইন রাখাইনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার ২১ সদস্য বিশিষ্ট নব গঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য রেং য়ং ম্রো।

অবশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার সহ-সভাপতি রুপেশ চাকমার সমাপনী বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে উক্ত বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল” অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়

Back to top button