চলেশ রিছিল; বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর
আগামীকাল ১৮ মার্চ। মধুপুরের গারো আদিবাসীদের কাছে দিনটি স্মরণীয় চলেশ রিছিলের হত্যা দিবস হিসেবে। প্রতিবছর এ দিনে নানান কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করা হয় গারো নেতা চলেশ রিছিলকে। মধুপুরের আদিবাসী গারোদের দাবী তাদের নেতা চলেশ রিছিলকে রাষ্ট্রীয় যৌথ বাহিনী দ্বারা নির্মম অত্যাচারের পর হত্যা করা হয়েছে। সেসময় এই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত অথবা বিচার কোনটাই হয়নি বলেও অভিযোগ ও অসন্তোষ রয়েছে মধুপুরের আদিবাসীদের মধ্যে।
এ বিষয় নিয়ে কথা হলো জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের বর্তমান সভাপতি ইউজিন নকরেকের সাথে। তিনি রাষ্ট্রের বিচারহীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন সময় আদিবাসী নেতাসহ বিচারবহির্ভূত যে সব হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেগুলোর কোন ন্যায় বিচার পায়নি কেউ। যে যত বড় অপরাধীই হোক তার সঠিক বিচার করা উচিৎ। কিন্তু চলেশ রিছিলের বেলায় আমরা দেখলাম বিচারহীন তাকে মেরে ফেলা হল। যা মানবাধিকার লঙ্ঘন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হল অথচ রাষ্ট্র চলেশ রিছিল হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারছেনা এটা মানা যায় না। চলেশ রিছিল হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া প্রয়োজন যাতে আর কেউ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বলে এমন করে কাওকেই হত্যা করতে না পারে সে উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য।
তৎকালীন সময়ে অজয় এ মৃ ছিলেন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি। তিনি আমাদের বলছিলেন সে সময়ের কথা । সে দিন থানায় গিয়ে মামলা দেয়ার জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়। সেনাবাহিনীর অব্যাহত চাপ উপেক্ষা করে মামলা দেয়া গেলেও প্রশাসনের যথাযথ সহযোগীতার অভাবে মামলার কোন অগ্রগতি করা যায়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মানবাধিকার কর্মীদের চেষ্টা সত্বেও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। তিনি আরো বলেন ১৯৯০ থেকে মধুপুরে যত আদিবাসী নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে কোনটার বিচার সমপন্ন করা হয়নি। এ এক অশনি সংকেত মধুপুরের আদিবাসী, বাংলাদেশের আদিবাসীদের জন্য।
চলেশ রিছিল স্মরণ সভা আয়োজক কমিটির সভাপতি আব্রাহাম রেমা জানালেন আগামীকাল চলেশের স্মরণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সকালে কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়ার পর চলেশ রিছিলের বাস ভবনের আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভাটি। তিনি জানালেন স্মরণ সভা ও আলোচনা সভা থেকে আমাদের দাবী থাকবে চলেশ রিছিলের হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার হোক, দোষীদের শাস্তি দেয়া হোক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ যৌথবাহিনীর হেফাজতে মারা যায় গারো নেতা চলেশ রিছিল। সে সময় বিভিন্ন সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থা দাবী তোলে যৌথবাহিনী নির্মম অত্যাচার করে চলেশকে হত্যা করেছে। চলেশ রিছিলের শরীরে অত্যাচারের প্রমান পাওয়া যায়। থানায় মামলা হলেও, বিচার প্রক্রিয়া এগোয়নি প্রশাসনের অসহযোগীতায়।
বিচার বহির্ভূত চলেশ রিছিল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের দাবীতে আগামীকাল বিকেল চারটায় ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশের লিঙ্ক আহবান করেছে জাতিগত নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ।
উল্যেখ্য, ২০০৭ সালের ১৮ই মার্চ মধুপুরের ইকোপার্ক বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা চলেশ রিছিল কে যৌথবাহিনী নির্মম নির্যাতন শেষে হত্যা করে।