বই বিক্রিতে পিছিয়ে নেই আদিবাসী প্রকাশনী
শ্যাম সাগর মানকিনঃ আগামীকাল অমর একুশে বইমেলা ২০১৮-র শেষ দিন। একমাস ধরে চলা বইমেলায় নতুন পুরনো বই বিক্রি এবং নানান আয়োজনের পর্দা নামছে কাল। বইমেলা ঘুরে দেখা গেলো শেষ দিকে এসে পাঠকদের ভিড়। বই বিক্রিতে ব্যস্ত বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা । পাঠকরাও নিজেদের পছন্দের গুরুত্বপূর্ণ বই কিনছেন বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে। বিভিন্ন প্রকাশনীর পাশাপাশি আদিবাসীদের বইয়ের পসরা নিয়ে বসেছিলো কিছু আদিবাসী প্রকাশনী। সে সব আদিবাসী প্রকাশনীর বই বিক্রি ও মেলা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হলো প্রকাশনীর কর্ণধার ও লেখকদের সাথে।
তিউড়ি প্রকাশনী থেকে বেশ কয়েকটি আদিবাসী লেখকদের বই বেরিয়েছে এ বছর। তার মধ্যে বিপম চাকমার ছোটগল্পের বই অজগর, এ কে শেরামের গল্পের বই টোকাই কাহিনী ও অন্যান্য গল্প, মিঠুন রাকসামের কবিতার বই গন্ধচোর, মাইবম সাধনের কবিতা গ্রাফিত্তি, রতন থিয়ামের মনিপুরী ভাষার কবিতা মাইস্নাম রাজেশের অনুবাদে স্বর্ণকমল সহ আরো অনেক বই । তিউড়ি প্রকাশনীর কর্ণধার মাইবম সাধন আমাদের জানালেন, তিউড়ি প্রকাশনী আদিবাসীদের পাশাপাশি বাঙালি লেখদের বই প্রকাশ করেছে। বিক্রির দিক থেকে আদিবাসী লেখকদের এবং বাঙালি লেখকদের বই সমান সমান । আদিবাসী বাঙালি সব পাঠকই আদিবাসী লেখকদের বই কিনছে। আলাদা করে শুধু আদিবাসীরাই আদিবাসীদের বই কিনছে এমনটা হয়নি। তবে আদিবাসী লেখকদের মধ্যে এই প্রকাশনী থেকে বিপম চাকমার ছোটগল্পের বই অজগর সব চেয়ে বেশি পাঠক নিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে লেখক বিপম চাকমার সাথে কথা হলো মুঠোফোনে । তিনি বললেন, পাঠকদের জন্যই বই লেখা, তাদের হাতে বই পৌছে যাচ্ছে এতেই স্বার্থকতা। বেশি সংখ্যক পাঠকের হাতে আমার বই পৌছাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত বটে। বই ও ভবিষ্যত প্রত্যাশা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে বললেন, মাত্রই পাঠকদের হাতে বই পৌছেছে। বই পড়ার পর পাঠকদের সাড়া, তাদের ভাল লাগা না লাগা, সমালোচনা জানা যাবে। কতটা শিল্প হয়ে উঠলো, কতটা গল্প হয়ে উঠলো, কতটা সফল অ-সফল কেবল তখনই হয়তো তা জানা যাবে। তাই আলাদা করে অজগর নিয়ে প্রত্যাশা করার থেকে আলোচনা-সমালোচনার অপেক্ষায় আছি এখন ।
গারো লেখকদের লেখা নিয়ে অনেকদিন ধরেই কাজ করছে থকবিরিম। ছোট কাগজ থেকে বই প্রকাশের মাধ্যমে গারো লেখকদের চিন্তা, গারো সংস্কৃতির বৈচিত্রময় নানান দিক অপরারপর পাঠকদের কাছে পৌছে দিচ্ছে থকবিরিম। এবার বই মেলায় বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ গবেষণা গ্রন্থের পাশাপাশি গল্প, কবিতার বই নিয়ে হাজির ছিলো থকবিরিম। গারো লেখক মতেন্দ্র মানখিনের গারোদের লোকায়ত জীবনধারা, ফিডেল ডি সাংমা ও লুই সাংমার গারো সংস্কৃতির মাধুর্য, সুমনা চিসিমের গারো জাতির ব্যবহৃত বনজ ঔষধি, কবিতার বই নীলু রুরামের অব্যক্ত বেদনা, পরাগ রিছিলের অনুবাদসহ ব্যঞ্জন মৃর গারো ভাষার কবিতা ময়ূর ব্যঞ্জনা, ইগ্নেসিউস দাওয়ার গারো লোক কাহিনী , রেভারেন্ড ক্লেমেন্ট রিছিলের প্রবন্ধ সংগ্রহ ও উত্তরাধিকার আইন পর্যালোচনা এবং হেমার্সন হাদিমার উপন্যাস নিশার স্বপন প্রভৃতি । প্রকাশনীর কর্ণধার মিঠুন রাকসাম জানান, বই বিক্রি অনেক ভালো। আদিবাসী পাঠকদের পাশাপাশি অনেক বাঙালি পাঠক আদিবাসী লেখকদের বই কিনছে যা ইতিবাচক। থকবিরিম তার অন্যরকম বৈশিষ্টের কারনে পাঠকের আগ্রহ জাগাতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বই মেলায় থকবিরিম প্রকাশিত মতেন্দ্র মানখিনের গবেষণা গ্রন্থ গারোদের লোকায়ত জীবনধারা এবং পরাগ রিছিলের অনুবাদে ব্যঞ্জন মৃর গারো ভাষার কবিতা ময়ূর ব্যঞ্জনা পাঠকদের সাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক মিঠুন রাকসাম।
এবারের বইমেলায় একদম নতুন প্রকাশনী দাকবেওয়াল। আদিবাসী গারো লেখকদের লেখা নতুন তিনটি বইসহ পাচটিবই নিয়ে এবারের বইমেলায় হাজির ছিলো দাকবেওয়াল। বইগুলো হল গারো প্রাবন্ধিক মনীন্দ্রনাথ মারাকের প্রবন্ধের বই ‘গারো সংস্কৃতি’, বিভা ম্রং এর প্রবন্ধের বই ‘গারোদের উৎসবাদি ও জীবনবোধ’ এবং হেমার্সন হাদিমার গারো লোক কাহিনী নিয়ে লেখা ‘চেঙো মিজাও’ (গারোদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ), জবাং ডি মারাক লিখিত থমাস স্নালের অনুবাদে গারো আইন, সরোজ ম্রং এর সোনারাম আর. মারাক সাগিনি কাত্থারাং । প্রকাশক কার্ত্তিক ঘাগ্রার পক্ষে লেবিসন স্কু আমাদের জানিয়েছেন বইমেলায় বিক্রি আশা ব্যঞ্জক। আদিবাসী নিয়ে কৌতুহলী বিভিন্ন লেখক-গবেষকদের কাছে মনীন্দ্রনাথ মারাকের লেখা গারো সংস্কৃতি ও থমাস স্নালের অনুবাদ করা জবাং ডি মারাকের বই গারো আইন বই দুটো বেশ বিক্রি হয়েছে। আদিবাসী পাঠক তো বটেই বাঙালি পাঠকের সাড়া ছিলো লক্ষনীয়।
আগামীকাল মেলার শেষদিন। এরপর আবার একবছর অপেক্ষা করতে হবে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের এই মিলন মেলার জন্য । আগামী বছর আরো বেশি করে আদিবাসী লেখকদের নতুন নতুন বই নিয়ে মেলায় হাজির থাকবার প্রত্যাশা পাওয়া গেলো আদিবাসী প্রকাশনীর বিভিন্ন প্রকাশকদের কাছে।