জাতীয়

রানী ইয়েন ইয়েন ও ভাটারা গারো পরিবারের উপর হামলার বিচারের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ

শ্যাম সাগর মানকিনঃ পুলিশি বাধার মুখে রানী ইয়েন ইয়েনের উপর হামলা ও মারমা দুইবোন তরুণীর ধর্ষণকারীর বিচার এবং ঢাকার ভাটারা থানাধীন নুরের চালায় গারো পরিবারের উপর হামলার বিচারের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সন্মিলিত ছাত্র সমাজের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশটি জাতীয় যাদুঘর শাহবাগে বিকেল ৩ টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের বাধার কারণে প্রেস ক্লাবের সামনে যেতে বাধ্য হয়। সমাবেশে বক্তারা প্রশাসনের এমন আচরনের নিন্দা প্রকাশ করেন। বক্তারা রানী ইয়েন ইয়েন এর উপর প্রশাসনের হামলা, দুই মারমা তরুণীর উপর হওয়া অন্যায়ের বিচার ও রাজধানীর ভাটারা থানার নূরের চালা এলাকায় গারো পরিবারে হামলা ও লুটপাটের যথাযথ বিচার দাবী করেন।

এক বক্তব্যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিপুন ত্রিপুরা বলেন ‘ পাহাড়ে যত সেনা ক্যাম্প রয়েছে সব গুলোর সেনা সদস্যরা আদিবাসীদের ভূমি দখল, নিপীড়ন, ধর্ষণের সাথে যুক্ত। পার্বত্যবাসীর প্রতি রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি আদিবাসীবান্ধব নয়।’

আরেক বক্তা চানচিয়ার সমন্বয়ক আন্তনী রেমা বাংলাদেশের সংবিধানের বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধকে আদিবাসীদের উপর অন্যায় নিপীড়নের জন্য দায়ী করে বলেন ‘বাবাকে আটকে রেখে মেয়েকে ধর্ষণ একাত্তরে দেখেছে বাংলাদেশ, যা আবারো আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। এর ভিত ৭২ এর সংবিধানেই রচনা করা হয়েছিলো। সংখ্যাগুরুর ভিত্তিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়, যেনো বলে ওরা সংখ্যায় কম এদের অত্যাচার করা যায়, এদের ভূমি দখল করা যায়, এদের ধর্ষণ করা জায়েজ।’

মারমা কিশোরীদের উপর অন্যায়ের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে মানবাধিকার কর্মী জাকিয়া শিশির বলেন ‘এই দেশটি আজকে ধর্ষণের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। চারদিকে শুধু ধর্ষণ আর অত্যাচার। ‘

ছাত্র ঐক্য ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক সরকার আল ইমরান তার বক্তব্যে বলেন ‘পাহাড়ের আদিবাসীদের উপর সরকার ও প্রশাসন পরিকল্পিত সন্ত্রাস চাপিয়ে দিচ্ছে। যা মেনে নেয়া যায়না। পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প থাকার কোন যৌক্তিকতা নাই।’

ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন ‘পাহাড়ে পাহাড়ীদের পক্ষ থেকে কোন যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা না থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে বলে মনে হয়। সে কারনেই পাহাড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে যাতে তাদের আদিবাসীদের ধর্ষণ করা যায়, ভূমি দখল করা যায়, উচ্ছেদ করা যায়।’ তিনি আরো মনে করেন পাহাড়ে শান্তি স্থাপন করতে সেনাবাহিনী পাহাড়ে যায়নি।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিলানী শুভ তার বক্তব্যে বলেন ‘বর্তমান শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ের জনগনের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। একজন বাঙালিকে ধর্ষণ করা যেমন অপরাধ তেমনি একজন মারমা তরুনীকে ধর্ষণ করা সমান অপরাধ। যদি এই অপরাধগুলোর বিচার না হয় তবে এমন বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আমরা কি করবো?’

রাজধানীর ভাটারা থানার নূরের চালায় নির্যাতিত ও হামলার শিকার রীতা রেমা তার উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করে বলেন ‘আমরা নারীরা আর কত নির্যাতিত হব?’ তিনি তার উপর হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

বাগাছাস ঢাকা মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক উন্নয়ন সাংমার সঞ্চালনায় এবং বাগাছাস ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি অলিক মৃ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন ‘তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্থান যেমন পূর্ব পাকিস্থানের উপর গুম খুন হামলা করেছিলো তার মোকাবেলা আপামর জনসাধারণ মিলে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে মানচিত্রে জায়গা করে দিয়েছিলো। আজকে সময় এসেছে আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার।’ তিনি প্রশাসনের প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন ‘আগামী সাতদিনের মধ্যে যদি রানী ইয়েন ইয়েন এর উপর হামলা, মারমা তরুণীদের ধর্ষণের বিচার ও রাজধানীতে গারো পরিবারে হামলার বিচার না হয় তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ঘেরাও এর কর্মসূচী দেয়া হবে।’

সমাবেশে আরো সংহতি জানান গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন, হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিল, হাজং ছাত্র সংগঠন এবং প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজ।

Back to top button