বাদপড়া আদিবাসীদের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত না করা নীতিনির্ধারকদের কাণ্ডজ্ঞানই দায়ী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান না করা চরম অন্যায় ও অমানবিক। বাদপড়া আদিবাসীদের সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত না করা নীতিনির্ধারকদের কাণ্ডজ্ঞানই দায়ী। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না হওয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তিকে দায়ী করেছেন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) এর সহযোগিতায় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস্ ফোরাম আয়োজিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ৩০ মে সোমবার, বাদপড়া আদিবাসীদের সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্তি করতে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এই কথাগুলো বলেন তিনি।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন এর সভাপতিত্বে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন, শিশু কিশোর সংগঠক ডা. লেলিন চৌধুরী, জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি দীপায়ন খীসা, আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, কমিউনিস্ট পার্টির রুহীন হোসেন প্রিন্স সহ আদিবাসী শিক্ষার্থী যুব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
আইইডি’র সহ-সমন্বয়কারী তারিক হোসেন এর সঞ্চালনায় সভার শুরুতে ধারণাপত্র পাঠ করেন আইইডি’র অ্যাডভোকেসি অফিসার হরেন্দ্রাথ সিং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিউম্যান রাইটস্ ফোরামের আহ্বায়ক শিপন রবিদাস প্রাণকৃষ্ণ। বাদপড়া আদিবাসীদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্তিতে গড়িমসির বিষয়ে উল্লেখ করে শিপন রবিদাস বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন-২০১০ পাসের ৬ বছর অতিবাহিত হলো অথচ এখনও আমাদের প্রস্তাবিত ২৭টি আদিবাসীদের স্বীকৃতি মেলেনি। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি আদিবাসীদের নিজ পরিচয়ে পরিচিতি লাভ একটি সাংবিধানিক অধিকার।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, আজ আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে অস্বীকৃতির সংস্কৃতি ভেতর বসবাস করছি। ঠিক পাকিস্তানি কায়দায় অন্যের পরিচয়কে অস্বীকারের প্রচেষ্টা চলছে। প্রত্যেকেটি জাতির নিজ সংস্কৃতি ও পরিচয়ে পরিচিত হওয়া মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার। তিনি আরো বলেন, বাদপড়া আদিবাসীদের সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্তির লড়াইটি সবার জাতীয় দাবি হওয়া উচিত।
চা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি পরিমল সিং বাড়াইক বলেন, প্রায় দুশো বছর ধরে চা বাগানগুলোতে আদিবাসীরা বসবাস করলে তাদের পরিচয়কে সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জাতির নামের বদলে তাদের চা শ্রমিক হিসেবে পরিচিতি প্রদান করা হচ্ছে। অথচ সেখানে প্রায় ৫০টির অধিক জাতি বসবাস করছে।
গবেষক পাভেল পার্থ আদিবাসীদের প্রস্তাবিত তালিকা নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, কারা আদিবাসী আর কারা আদিবাসী নয় এ বিষয়েও সুস্পস্ট উদ্যোগ ও নীতিমালা নেই। আদিবাসীদের পরিচয় নিয়ে কেবল বাংলাদেশে নয় বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে এই রাজনীতি চলছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো বাদপড়া আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার পেছনে সরকারের পরিকল্পনাকে দায়ি করেছেন। তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু আদিবাসীদের সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে আবার অন্যদের বাইরে রাখা হচ্ছে।
বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নিজের মধ্যে দাসত্ব মনোভাব থাকলে অন্যকে দাসে পরিণত করার চেষ্টা থাকতে পারে। তিনি আরো বলেন, সকল জাতির স্বীকৃতির মাধ্যমে বহুত্ববাদের দৃষ্টান্ত আমাদেরই স্থাপন করতে হবে, সে জন্য সকলের সম্মিলিত সংগ্রাম প্রয়োজন।
সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রবলের সাথে প্রান্তিকের লড়াই প্রশ্নে সকল প্রান্তিক জাতি-গোষ্ঠির ভিতর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
আদিবাসীদের স্বীকৃতি কোনো করুণা কিংবা দায়বদ্ধতার বিষয় নয়। বরং বাঙালির নিজের শেকড় সন্ধানের প্রশ্নটিও এটির মধ্যে অন্তর্নিহিত আছে। এটি যতক্ষণ সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালি বুঝতে অক্ষম হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আদিবাসীদের স্বীকৃতির বিষয়টি অবহেলিত হয়ে থাকবে, বলেন শিশু-কিশোর সংগঠক ডা লেলিন চৌধুরী।