পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত
সতেজ চাকমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে মশাল মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।মশাল মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর ঘুরে টিএসসির রাজু ভাষ্কর্যে এসে শেষ হয়।
পরে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাবি শাখার সাধারন সম্পাদক অরুন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় সংগঠনের সভাপতি অমর শান্তি চাকমার সভাপতিত্বে একটি ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত ছাত্র সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি ঢাবি শাখার সিনিয়র সদস্য জিনেট চাকমা, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নৈশিমং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য রুনি চাকমা,বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক রিবেং দেওয়ান,পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি জ্ঞানজ্যোতি চাকমা এবং পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সদস্য নিপন ত্রিপুরা প্রমূখ।এছাড়া মশাল মিছিল ও সমাবেশে সংহতি জানান ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
স্বাগত বক্তব্যে পিসিপি ঢাবি শাখার সিনিয়র সদস্য জিনেট চাকমা পার্বত্য চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন,”পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের মানুষকে রাষ্ট্র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চুক্তির বিশ বছর পর পাহাড়ের জুম্ম সমাজের দিকে তাকালে বলা যাই রাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে প্রতারিত করেছে এবং রাষ্ট্র তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পারেনি।”
নিশৈমং মারমা চুক্তি অবাস্তবায়নের তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বলেন,”পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে চুক্তি স্বাক্ষরের দুই দশক পরেও সেনা-পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সেটেলার বাঙালীদের আগুনে লংগদু জ্বলে, গুনমালা চাকমা’র মত বৃদ্ধাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।”
সংহতি বক্তব্যে রিবেং দেওয়ান সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘সারা দেশের আদিবাসীর অবস্থা ভালো নয়।সরকার যদি চুক্তি বাস্তবায়ন না করে মনে করে যে, তারা বেচেঁ গেছে আর জুম্মরা আন্দোলন করতে পারবে না তাহলে তারা ভুল করতেছে।’
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি জ্ঞানজ্যোতি চাকমা বলেন, “জুম্ম জনগনের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে।আজকের মশাল মিছিলে জ্বলছে কেরোসিনের মশাল, অনতিবিলম্বে পাহাড়ে জুম্ম জনগন জ্বালাবে বারুদের মশাল।”
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সদস্য নিপন ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঘোষিত দশ দফা ভিত্তিক অসহযোগ আন্দোলন বেগবান করার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পাহাড়ের জনগন জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন জোরদার করে আবারো অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় যেতে বাধ্য হলে সরকারকে এ দায় নিতে হবে।”তিনি চুক্তি স্বাক্ষরের বিশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে প্রশাসন কতৃক তিন পার্বত্য জেলায় কনসার্ট আয়োজনকে ”বিদ্রুপাত্মক” আখ্যা দিয়ে এ কনসার্ট বর্জনের আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাবি শাখার সভাপতি চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে বলেন, “আমরা অস্ত্র জমা দিলেও এম.এন লারমার আদর্শ ও চেতনা জমা দিইনি। পাহাড়ী জুম্ম জনগন চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে যদি প্রয়োজন হয় আবারো সেই সত্তর দশকে ফিরে যাবে।”
বক্তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, বা্ংলাদেশের গনতান্ত্রিক অভিযাত্রার সাথে পাহাড়ের জুম্ম জনগণ তাদের স্বকীয় শিল্প,সাহিত্য,সংস্কতি তথা নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে বাচঁতে চেয়েছিল।কিন্তু সংবিধানের ষষ্ঠ অুনুচ্ছেদে বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল জনগনকে বাঙালী বলে গণ্য করে পাহাড়ের জুম্ম জনগনকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে জুম্ম নির্মুলীকরনের প্রকল্প চলমান রাখার কারনে দেশের এক বিশেষ বাস্তবতায় সত্তর দশকে পাহাড়ের জনগন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে অনিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছিল।বিভিন্ন সরকারের সাথে প্রায় ২৬ বার আলোচনার মাধ্যমে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরিত হয়।কিন্তু সে চুক্তি স্বাক্ষরের দুই দশক পূর্ণ হতে চললেও এখনো সেনা প্রত্যাহার,ভূমি সমস্যা সমাধান, পাহাড়ে পুনর্বাসনকারী সেটেলার বাঙালীদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন,জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে অকার্যকর করে রাখার মত মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না করে কার্যত চুক্তি পরিপন্থি নানা কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।