আঞ্চলিক সংবাদ

ফারুয়ায় সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রামবাসীদের জড়ো করে হুমকি, ৫ জনকে অমানুষিক নির্যাতন

গত ১৮ নভেম্বর ২০১৭ রাত আড়াই টার দিকে বিলাইছড়ি সেনা জোনের উপ-অধিনায়কের নেতৃত্বে বিলাইছড়ি জোন ও তক্তানালা ক্যাম্প থেকে দুই বোট সেনা সদস্য রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের চাইন্দা গ্রামে এক সেনা অভিযান চালায়। গভীর রাতে অভিযানকালে সেনা সদস্যরা গ্রামের ৬৫ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৫০/৫৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি তল্লাসী চালায়। তল্লাসী কালে বাড়ির জিনিষপত্র তছনছ করে বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে। তল্লাসীর পর গ্রামবাসীদের এক জায়াগায় জড়ো করে সন্ত্রাসীরা কোথায় আছে দেখিয়ে দাও, কেন অস্ত্রধারীদের আশ্রয় দাও, কেন ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের খবর দাও না ইত্যাদি অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীদেরকে হুমকি দিতে থাকে। ঘরাবাড়ি তল্লাসীর সময় নিম্নোক্ত পাঁচজন গ্রামবাসীকে সেনা সদস্যরা বেদম মারধর করে-
১.নির্মল তঞ্চঙ্গ্যা (৩০) পিতা কালন্দ হেডম্যান, গ্রাম চাইন্দ্যা (পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির সহ সভাপতি)।
২.চন্দ্র বাবু তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) পীং তরুণীসেন তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম চাইন্দ্যা (পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির ফারুয়া ইউনিয়ন কমিটির সাবেক সদস্য)।
৩.বরণ জয় তঞ্চঙ্গ্যা (৩১) পীং আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম চাইন্দ্যা।
৪.জগৎ চান তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫) পীং মাল্যাপো তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম চাইন্দ্যা, (পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির চাইন্দ্যা গ্রাম কমিটির সভাপতি)।
৫.কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা (১৮) পীং শামুক্যা তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম চাইন্দ্যা।
উপরোক্ত ব্যক্তিরা তাদের নাম বলার সাথে সাথে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সেনা সদস্যরা একের পর এক কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে থাকে। মারধরের সময় এক সেনা সদস্য হুমকি দেয় যে, মিয়ারমারে রোহিঙ্গ্যা মুসলমানদের উপর বৌদ্ধরা যেভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে, সেভাবে তোমাদেরকেও করা হবে। সেনা সদস্যরা বন্দুক তাক করে গ্রামবাসীদের হত্যারও হুমকি দেয়।
এক পর্যায়ে ‘সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবো না, অস্ত্রধারী আসলে ক্যাম্পে খবর দেবো’ মর্মে অঙ্গীনামায় সকল পরিবার প্রধানের স্বাক্ষর নিয়ে তার পরদিন সেনা জোনে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়ে ভোর ৫টার দিকে সেনা সদস্যরা চলে যায়।
নির্দেশ মোতাবেক ৬৪ পরিবারের পরিবার-প্রধানের স্বাক্ষর সম্বলিত অঙ্গীনামায় দস্তখত নিয়ে ১৯ নভেম্বর কালন্দ হেডম্যান, চন্দ্র বাবু তঞ্চঙ্গ্যা, নির্মল তঞ্চঙ্গ্যা ও মিলাবো তঞ্চঙ্গ্যা বিলাইছড়ি সেনা জোনে জমা দিয়ে আসেন।
অন্যদিকে ফারুয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত তক্তানালা ক্যাম্পের সুবেদার মির্জার নেতৃত্বে একদল সেনা গত ১৯ নভেম্বর ২০১৭ সকাল ১১টার দিকে তক্তানালায় অভিযান চালিয়ে সানু রঞ্জন চাকমা, অনিল তঞ্চঙ্গ্যা ও ভরতচন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা বাড়ি তল্লাসী চালায়। সে সময় সুবেদার মির্জা পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির তক্তানালা গ্রাম কমিটির সভাপতি এবং ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তান্যাবী তঞ্চঙ্গ্যাকে ‘আওয়ামীলীগ বা বিএনপি না করে কেন জনসংহতি সমিতি করেন’ ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মহিলা সমিতির গ্রাম কমিটির সকল সদস্যদেরকে নিয়ে তক্তানালা ক্যাম্পে হাজির হতে তান্যাবী তঞ্চঙ্গ্যাকে নির্দেশ দিয়ে আসেন সুবেদার মির্জা। সেদিন বিকাল ৪টার দিকে স্থানীয় এক হেডম্যানকে নিয়ে তান্যাবী তঞ্চঙ্গ্যা তক্তানালা ক্যাম্পে যান এবং কাজের ব্যস্ততার কারণে মহিলা সমিতির সদস্যবৃন্দ আসতে পারেননি বলে সুবেদার মির্জা জানিয়ে আসেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মহিলা সমিতির সদস্যকে ক্যাম্পে নিয়ে আসতে আবারো নির্দেশ দেন উক্ত সুবেদার মির্জা। বর্তমানে মহিলা সমিতির সদস্যবৃন্দ এলাকার নারী-পুরুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

Back to top button