মতামত ও বিশ্লেষণ

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছে আরেকটি খোলা চিঠি

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
প্রফেসর ইমেরিটাস, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রিয় স্যার,

সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা। আশা করি ভালো আছেন। শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনাকে উদ্দেশ্য করে আবারো একটা ‘খোলা চিঠি’ লিখতে বসেছি বলে। তবে দুটি চিঠির প্রেক্ষাপটে একটু ভিন্নটা আছে, যা একটু বলে নিতে চাই। আপনার হয়ত মনে পড়বে, আগেরটা আমি লিখেছিলাম আপনার নামে পরিবেশিত একটি খবরের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এবার তেমন কিছু ঘটে নি। তবে আপনাকে লেখা আগের চিঠির একটা অন্যতম পটভূমি হিসেবে যে ঘটনাটা কাজ করেছিল, আজ সেটি স্মরণ করার দিন ফিরে এসেছে আবার। আপনি হয়ত বুঝতে পারছেন, আমি বলছি ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কথা।

অবশ্য রামুর সহিংসতা আপনাকে লেখা আমার আগের চিঠির মুখ্য বিষয় ছিল না। বরং সেখানে প্রাধান্য পেয়েছিল বাংলাদেশে আদিবাসী পরিচয়ের দাবিদার জনগোষ্ঠীসমূহের প্রতি এদেশের ক্ষমতাসীন মহলের জাত্যাভিমানী ও আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গী, যেটির উপর ভর করে রাষ্ট্র ২০১১ সাল থেকে উল্লিখিত জনগোষ্ঠীদের ‘উপজাতি’ ও ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে সাংবিধানিকভাবে। জানি না আপনি আমার সাথে একমত হবেন কিনা, বিগত চার-পাঁচ বছরে এসব সমস্যার গতিপ্রকৃতি যেমন খুব একটা পাল্টায় নি, তেমনি ‘ক্ষুদ্র’ ও ‘উপ’ বিশেষণে ভূষিত বাংলাদেশিরা সাধারণভাবে উপেক্ষিতই রয়ে গেছে জাতীয় মানসে, এবং আর্থসামাজিকভাবেও তাদের প্রান্তিকীকরণ অব্যাহতই রয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও বৈরিতার শিকার হওয়া রোহিঙ্গ্যারা সম্প্রতি আবার ব্যাপক হারে বাংলাদেশে চলে আসতে শুরু করার পর এদেশের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও অনেকে নতুন করে উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতার – এবং ক্ষেত্রবিশেষে হয়রানির – সম্মুখীন হতে শুরু করেছে। এসব প্রবণতার কিছুটা আপনি শুনেছেন বা প্রত্যক্ষ করেছেন কিনা জানি না, তবে আমি নিজেই কিছু আলামত দেখেছি, যেগুলি সত্যিই চিন্তার বিষয়। এখানে দু’একটির কথা বলা হয়ত অপ্রাসঙ্গিক হবে না।

প্রথম যে ঘটনার কথা বলব, সেটা কতটা বস্তুনিষ্ঠভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে জানি না। তবে সপ্তা দুয়েক আগে একদিন রাত দুইটার সময় ঘুম ভাঙার পর ফেসবুক খুলতেই একটা ভিডিও আমার চোখে পড়ে, যেখানে একজন বাংলাদেশি বৌদ্ধ ভিক্ষুকে ভয় দেখিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গ্যা নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছিল। বেনাপোলে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা এক ব্যক্তি সেটি নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে পোস্ট করে বাহাদুরিও প্রকাশ করেছিল। পরে অবশ্য সেই একাউন্ট থেকে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়, এবং এটির পেছনে যে বা যারা ছিল, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলেও খবর প্রকাশিত হয়। তবে এ ধরনের আরো একাধিক ঘটনা যে লোকচক্ষুর অন্তরালে বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের নজরদারির বাইরে রয়ে যাচ্ছে না, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।
এদিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গ্যাদের প্রতি জেগে ওঠা ব্যাপক (ও সঙ্গত) জন-সহানুভূতির পটভূমিতে যখন আমাদের চারপাশের চেনা মানুষেরা অনেকে সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা ধরে পরস্পরকে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও অভিযোগের দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করে, তখন মনে সংশয় তৈরি হয়, এসব নিয়ে কি খোলামেলা ভাবে কথা বলা ঠিক হবে? কাকে বা কাদের কথাগুলো বলা যায়? এমন প্রশ্ন কেন উঠছে, তা বোঝানোর জন্য আমি আমার নিজের কিছু ফেসবুক পোস্টে অন্যদের করা মন্তব্যের উদাহরণ তুলে ধরব।

প্রথম যে মন্তব্যের কথা ভাবছি, সেটা এসেছিল আমার এক প্রাক্তন সহকর্মীর কাছ থেকে, যাঁর সাথে অতীতে আমার কোনো বিবাদ বা ভুল বোঝাবুঝি ছিল বলে মনে পড়ে না। অবশ্য দীর্ঘদিন তাঁর সাথে আমার দেখাসাক্ষাত নেই, এবং ফেসবুকেও আমাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। এই অবস্থায় সম্প্রতি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে নিয়ে দেওয়া আমার এক ফেসবুক পোস্টের নিচে হঠাৎ করে তাঁর একটা মন্তব্য দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। তিনি লিখেছিলেন, “রোহিঙ্গ্যাদের নিয়ে প্রশান্ত দাকে কিছু লিখতে দেখলাম না।” তাঁর এই কথাটা পুরোপুরি ঠিক ছিল না, কারণ রোহিঙ্গ্যাদের নিয়ে আমি ফেসবুকে কম লিখেছি বটে, কিন্তু কখনো কিছু লিখি নি, তা নয় (উদাহরণ হিসেবে এখানে দু’টি লিংক দিচ্ছি: রোহিঙ্গ্যা: বাড়ির আরশিতে দেখা এক অচেনা পড়শি, ‘মধু কই কই বিষ খাওয়াইলা’ গানটিকে রোহিঙ্গ্যাদের ঐতিহাসিক বিড়ম্বনার একটি বয়ান হিসেবে শোনা)।

অবশ্য আমি আমার পুরানো সহকর্মীকে কোনো জবাব দেওয়ার আগে তিনি নিজেই আমার একটা পোস্ট খুঁজে পান, যেখানে আমি বলার চেষ্টা করেছিলাম, যেভাবে পত্রপত্রিকায় ঢালাওভাবে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা’ কথাটা ব্যবহার করা হয় – যেনবা রোহিঙ্গ্যারা নিজেরাই সমস্যার মূলে – তা আমার কাছে সমস্যাজনক মনে হয়। সেখানে আমি এও বলেছিলাম, একসময় ভারতীয় গণমাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সংকটকে ‘চাকমা সমস্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হত ব্যাপকভাবে। বলা বাহুল্য, এতে করে মূল সমস্যার চরিত্র ও গতিপ্রকৃতি ঠিকমত উপস্থাপিত হত না। সেই প্রসঙ্গ টেনে আমি বলার চেষ্টা করেছিলাম যে, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা’ ধারণার ব্যবহারেও একই সম্ভাবনা থেকে যায়। আমার এই বক্তব্য সত্যিই কতটা দুর্বোধ্য ছিল আমি জানি না, কিন্তু সেই সহকর্মী আমার পোস্টটির নিচে মন্তব্য জুড়ে দেন, “আপনার কথা বুঝতে কষ্ট হয়।” এরপর আমি যখন জানতে চাই ঠিক কোন বিষয়টা তাঁর দুর্বোধ্য মনে হয়েছিল, তিনি কোনো ব্যাখ্যায় না গিয়ে আলোচনা থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন!

আমার প্রাক্তন সহকর্মীর মনে কেন আমাকে নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে, এটা যখন বুঝতে চেষ্টা করছিলাম, তখন কয়েকদিন পর আমার আরেকটি ফেসবুক পোস্টে আমার এক ছোটবেলার বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে একজন এমন এক মন্তব্য করেন, যা অনেককেই ভাবিয়েছিল। পোস্টটা পাবলিক ছিল না, এবং সেখানে কোনো রাজনৈতিক প্রসঙ্গও আমি সরাসরি উল্লেখ করি নি। বরং আমরা তিন পুরানো বন্ধু – সবাই পাহাড়ি – একত্র হয়েছিলাম অনেকদিন পর, এবং পুরানো দিনের গল্পে মেতে উঠেছিলাম, এটাই ছিল সেই পোস্টের মূল কথা। কিন্তু দেখা গেল, আমার এক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে তারই এক বাঙালি ফেসবুক বন্ধু তথা প্রাক্তন সহকর্মী লিখেছেন, “জীবহত্যা মহাপাপ যারা মুখে বলছে [‘অমুক’] দা’, তাদের হাতে আজ রোহিঙ্গারা জ্বলছে। হিংসার আগুন জ্বালাচ্ছে কারা?”

উল্লিখিত মন্তব্যদাতা যেহেতু সরাসরি আমার পরিচিত ছিলেন না, আমি মৃদুভাবে তাঁকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বলি যাতে তাঁর সাথে কোনো ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কে না জড়াতে হয়। পরে অবশ্য আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু তাঁকে অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে, এবং এক পর্যায়ে আমার যে বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, সেও এমন কিছু কথা যোগ করে যেগুলির পর আসলে আর বিশেষ কিছু বলার থাকে না। উল্লেখ্য, আমার এই বন্ধু নিজ শাশুড়িসহ আত্মীয়-পরিচিত বহু স্বজনকে হারিয়েছিল উনিশশত আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জনপদে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক ‘সাম্প্রদায়িক’ হামলায়, যেটির পেছনে রাষ্ট্রীয় ছত্রচ্ছায়া ছিল বলে মনে করা হয়। অন্তত সেই ঘটনার কোনো তদন্ত বা বিচারের উদ্যোগ রাষ্ট্র কখনো নেয় নি। যাহোক, এই প্রেক্ষাপটে আমার সেই বন্ধু তার প্রাক্তন সহকর্মীকে যে উত্তর দেন, তার অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরছি, “এত বছর আমরা একসাথে ছিলাম, আমার শাশুড়িসহ অনেক আত্মীয়-স্বজনকে [হত্যা করা হল], আপনিতো কখনো আমার প্রতি সহমর্মিতা দেখালেন না। অথচ শুধু ধর্মের [মিলের] কারণে ভিনদেশী এক সম্প্রদায়কে কত সমবেদনা দেখাচ্ছেন। স্বদেশী হিসাবে আমাদেরকেও আপন মনে করুন।”
নিজ দেশের জাতিগত ও ধর্মীয় ‘সংখ্যালঘু’সহ বিভিন্ন প্রান্তিক বর্গীয় জনগোষ্ঠীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে অপারগ বা অনিচ্ছুক একটি জাতি-রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমার মনেও প্রশ্ন জাগে, প্রতিবেশী দেশে ব্যাপক নিপীড়ন, বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার শিকার হওয়া রোহিঙ্গ্যাদের প্রতি বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশই যে নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, তা কতটা দৃঢ় একটা ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে? নাকি সহমর্মিতার বর্তমান জোয়ার সহজে মিলিয়ে গিয়ে রোহিঙ্গ্যাদের সম্পর্কে প্রচলিত অনেক অপপ্রচার ও ভ্রান্ত ধারণার জের ধরে তাদের প্রতিই বিদ্বেষের স্রোত ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়? এসব কথা আমি বলছি এই কারণে যে, পাঁচ বছর আগে যখন রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছিল, এর জন্য অনেকে রোহিঙ্গ্যাদের প্রতি আঙুল তোলার চেষ্টা করেছিলেন। অনেকে আবার এমনও বলেছিলেন, এবং এখনও বলেন যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গ্যাদের প্রতি ‘বৌদ্ধ’দের সহিংসতার জবাব হিসেবেই রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর!
আজ, রামুর সহিংসতার পাঁচ বছর পূর্তির দিন, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে, অচিরেই আমরা জানব সেখানে সত্যিই কী ঘটেছিল। কারা ছিল একাধিক বৌদ্ধ মন্দির এবং রাখাইন ও বড়ুয়াদের অনেক বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার পেছনে? রামুতে বা দেশের আরো বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত অনুরূপ আরো বহু ঘটনার পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করতে রাষ্ট্র বা জাতি হিসেবে আমরা কেন দক্ষতা, দৃঢ়তা ও স্বচ্ছতা দেখাতে পারি না?

স্যার, আমি জানি, উপরে ওঠানো প্রশ্নগুলির জবাব আসলে ঠিক আপনার, বা আপনার একার, দেওয়ার কথা নয়। এ প্রশ্নগুলি আমি নিজেকেও, এবং আমার সব সমমনা বন্ধুদের, এমনকি আমার সাথে চিন্তাধারা হয়ত পুরোটা মেলে না এমন বাংলাদেশিদেরও, করছি। আসলে আপনাকে খোলা চিঠি লেখার ছলে সম্প্রতি নিজের মাথায় ঘুরতে শুরু করা কিছু ভাবনাকে একটা লিখিত রূপ দেওয়ার চেষ্টাই আমি করছি এখানে। আপনাকে আমার এই লেখার উদ্দীষ্ট পাঠকের আসনে কল্পনা করার কৌশল অনুসরণ করে আমি যদি কোনো গর্হিত কাজ করে থাকি, তাহলে তা আপনি নিজগুণে মার্জনা করবেন আশা করছি।

অক্টোবর ৫, ২০১৬, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
চিঠিটা শেষ করব এক বছর আগে আপনার সাথে আমার সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম আপনার সাথে দেখা করতে, এবং আপনাকে আমার বহুজাতির বাংলাদেশ স্বরূপ অন্বেষণ ও অস্বীকৃতির ইতিহাস [২০১৫, সংবেদ, ঢাকা] গ্রন্থের একটা কপি দেব বলে। সেই বইয়ে আপনাকে লেখা আমার আগের খোলা চিঠিটা রয়েছে। সেটা আপনাকে দেওয়ার সময় জানতি পারি, ওটি আগেই বইমেলা থেকে সংগ্রহ করেছিলেন, এবং শুরুতে আপনাকে লেখা আমার খোলা চিঠিটাই পড়েছিলেন। এটির ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়াতে আপনি বলেছিলেন, “তুমিতো অন্যায় কোনো কথা লেখ নি”। আপনার এই কথা আমাকে স্বস্তি দিয়েছিল। আপনার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলার ইচ্ছা ছিল আমার, যা সম্ভব হয় নি সেদিন আরো দু’একজন সাক্ষাতপ্রার্থী এসে পড়াতে। তাঁদের নাম আমার মনে পড়ছে না, তবে তাঁদেরই একজন আমার ফোনে তুলে দিয়েছিলেন আপনার ও আমার কিছু ছবি, যেগুলির একটি এই চিঠির সাথে প্রকাশ করছি [পাশে, যেখানে দেখা যাচ্ছে আমি আপনাকে আমার বই দিচ্ছি]। প্রচ্ছদের ছবিও তখনই তোলা হয়েছিল, যাতে দেখা যাচ্ছে আপনি আপনার বিপুলা পৃথিবী [২০১৫, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা] বইতে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, এবং আপনার সামনে টেবিলে রয়েছে আপনাকে দেওয়া আমার বই।

পত্রিকার খবর অনুসারে আপনি মাঝখানে একটু অসুস্থ ছিলেন। এখন সুস্থ আছেন আশা করি। আপনার সাথে আবার দেখা হলে এই চিঠিতে বা আপনার ও আমার বিভিন্ন লেখালেখিতে উঠে আসা নানান প্রসঙ্গে আলাপ করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগবে। আপনার সুস্থতা ও বাংলাদেশের বিদ্যাঙ্গনে আপনার আরো বহুদিনের সক্রিয় পদচারণা কামনা করে শেষ করছি।

বিনীত,
প্রশান্ত ত্রিপুরা
মোহাম্মদপুর, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭

পুনশ্চ [সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৭]: স্যার, কাল ছোট একটা বিষয় উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। আগের চিঠিতে যেমনটা উল্লেখ করেছিলাম, ‘বিপুলা পৃথিবী’ নামে প্রথম আলো-তে আপনার যে ধারাবাহিক স্মৃতিকথন নিয়মিত ছাপা হত, সেটির এক কিস্তিতে আমার সাথে একদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথাও রাস্তায় হঠাৎ সাক্ষাতের যে বিবরণ দিয়েছিলেন (আপনি আর্মির জিপে করে যাচ্ছিলেন, আর আমি ছিলাম রিকশায়), তাতে জায়গাটার নাম রাঙামাটি হিসেবে উল্লিখিত হওয়াটা ভুল ছিল। আমি বলেছিলাম, এই সাক্ষাত খাগড়াছড়িতেই হয়ে থাকার কথা (আমার নিজের সেভাবেই মনে আছে, আর রাঙামাটিতে কোনো রিকশা নেই!), তবে এ বিষয়ক কোনো সংশোধনী ২০১৫ সালে প্রথমা প্রকাশিত বিপুলা পৃথিবী-তে দেখতে পাই নি। তাতে মনে হল, আপনাকে লেখা আমার প্রথম চিঠিটা (যা ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশ করেছিলাম অক্টোবর ২৮, ২০১৩ তারিখে, এবং পরে আপনাকে ই-মেইলেও পাঠিয়েছিলাম) নিশ্চয় যথাসময়ে আপনার নজরে আসে নি এটি বহুজাতির বাংলাদেশ গ্রন্থে সংকলিত হওয়ার আগে।

‘ফেসবুক নোট’ হিসেবে প্রথম প্রকাশিত (২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭)।

প্রশান্ত ত্রিপুরা; নৃবিজ্ঞানী

Back to top button