শিল্প ও সংস্কৃতি

ঢাকায় আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা – ২০২৫ এর উদ্বোধন

আইপিনিউজ ডেস্ক (ঢাকা): ঢাকায় আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা -২০২৫ এর উদ্বোধন করা হয়েছে।

আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা – ২০২৫ আয়োজক কমিটির সদস্য মিঠুন রাকসাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়,  আজ ২১ নভেম্বর, ২০২৫ ঢাকার মিরপুরস্থ পার্বত্য বৌদ্ধ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে উন্নয়ন সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ ও আদিবাসী সুহৃদবৃন্দের উদ্যোগে দুই (২) দিনব্যাপী আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা – ২০২৫ এর উদ্বোধন করা হয়েছে।

জুবদা’র (জুম্ম ভলান্টিয়ারী ব্লাড ডনর অ্যাসোসিয়েশন) সাধারণ সম্পাদক পলিটন খীসার সঞ্চালনায় এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের  পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং আদিবাসী অধিকার কর্মী মেইনটেন প্রমিলা। আয়োজনের উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের সদস্য মেজর (অব) তপন বিকাশ চাকমা।

২ দিনব্যাপী আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয় কালারস অফ হিল-এর শিল্পীবৃন্দের উদ্বোধনী নৃত্যর মধ্যে দিয়ে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আদিবাসী অধিকার কর্মী মেইনটেন প্রমিলা তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, এই মেলার মাধ্যমে দেশের বহু সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরণের খাদ্যভ্যাস রয়েছে। আদিবাসীদের খাদ্যভ্যাস বাঙালীদের থেকে ভিন্ন। তিনি স্বাস্থ্যকর আদিবাসী খাবারগুলোকে সবার মাঝে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারীভাবে উদ্যোগ নেওয়ার দাবী জানান।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, শুধুমাত্র আদিবাসীদের খাদ্যভ্যাসের চাকচিক্য দেখলে হবে না, তাদের জন্য ন্যায্য খাদ্য বন্টন করতে হবে। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত, জাতিনিরপেক্ষ, ভাষানিরপেক্ষ সর্বোপরি একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের সদস্য মেজর (অব) তপন বিকাশ চাকমা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরণের আয়োজন খুবই যুগোপযোগী। এ ধরণের উদ্যোগ যেন রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গ্রহণ করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের  পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটা দেশে যত বৈচিত্র্য থাকে সেই দেশ ততটাই সুন্দর। এই দেশে যদি কেবল একটি জনগোষ্ঠী থাকতো তখন এতটা সুন্দর লাগতো না। তিনি বলেন, পাহাড়ী খাবার গ্রহণ করা এখন একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। মানুষ পাহাড়ী খাবার খেতে চায় ট্রেন্ড হিসেবে, ঐতিহ্যর অংশ হিসেবে না। কিন্তু এটিকে একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐতিহ্যর অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, গণমানুষের কাছে নিরাপদ খাবার পৌঁছিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর আদিবাসী খাবারগুলোকে আরো বেশী প্রচার ও প্রসার করতে হবে। তিনি মেলায় অংশগ্রহণকারী সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষকে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়ার যে সংস্কৃতি সে সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আপনাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলোকে ধরে রাখবেন।

সভাপতির বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, এ মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের আদিবাসীদের বৈচিত্র্যকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া । সবার কাছে আদিবাসীদের অর্গানিক খাদ্যগুলোর পরিচয় করিয়ে দেওয়া। প্রচার বাড়লে, বাজারে এগুলোর প্রচলন বাড়বে। তখন উৎপাদনও বাড়বে। তিনি ২ দিনব্যাপী এ মেলায় ঘুরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে আহ্বান জানান।

আলোচনা সভা শেষে পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের সদস্য মেজর (অব) তপন বিকাশ চাকমা বেলুন উড়িয়ে ২ দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন ঘোষনা করেন।

মেজর (অব) তপন বিকাশ চাকমা, উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানসহ অতিথিবৃন্দদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করছেন

উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত অতিথিবৃন্দ মেলায় অংশগ্রহণকার স্থলগুলো পরিদর্শন করেন।

মেলায় মারমা ও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী মুন্ডি, গারো ও চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা, পাজনসহ বিভিন্ন ধরণের মুখরোচক খাবার এবং কলা, বেগুন, মরিচ, পাহাড়ী আলুসহ বিভিন্ন ধরণের কৃষিজ পণ্যর সমাহার বসেছে।

উল্লেখ্য যে, ৪র্থ বারের মত আয়োজিত হওয়া এ উদ্যোগে এবার মোট ৪৩ টি স্থল বসে। মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও সমতলের গারো সহ প্রায় ১০ টি আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করে। দুইদিনব্যাপী (২১ ও ২২ নভেম্বর, শুক্র ও শনিবার) চলা এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০ টা হতে শুরু হয়ে রাত ৯.০০ টা পর্যন্ত চলবে। এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬.০০ ঘটিকায় বসবে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

Back to top button