জাতীয়

পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি কনেজ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক হ্লামংচিং মারমা

আইপিনিউজ ডেস্ক: আজ ০৮ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, বিকাল: ৩.৩০ ঘটিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)’র মুনীর চৌধুরী অডিটোরিয়ামে “সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন” স্লোগানকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার ”বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও ৩২তম কাউন্সিল- ২০২৫” অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি রুমেন চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি চন্দ্রিকা চাকমা।
পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি জগদীশ চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সৈসানু মারমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদায়ী কমিটির তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কনেজ চাকমা এবং সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হ্লামংচিং মারমা। এছাড়াও পিসিপি ঢাকা মহানগরের অধীনস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মিরপুর থানা শাখা, ঢাকা পলিটেকনিক শাখার প্রতিনিধিবৃন্দ প্রতিনিধি বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। পাহাড়ে ধর্মান্তরিতকরণ প্রক্রিয়া ও সেনাশাসন চলমান রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে জুম্মদেরকে নিপীড়ন ও শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট করে রেখেছে। জুম্ম জনগণের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অধিকতর লড়াই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। জুম্ম ছাত্র সমাজকে মনস্তাত্ত্বিক দাসত্ব থেকে বের হয়ে এসে আন্দোলন সংগ্রামের হাল ধরতে হবে। কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করে আগামী দিনে লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জুম্ম ছাত্রসমাজকে আর অধিকতর প্রগতিশীল ও অধিকার সচেতন হতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে রুমেন চাকমা বলেন, ‘দেশে বর্তমানে মৌলবাদের কালো থাবা পড়েছে। দেশ একদিকে নির্বাচনের ডামাঢোলে আক্রান্ত, অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক সামরিক অভিযান চলমান রয়েছে। যা এক দেশে দুই নীতিরই সামিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে অকেজো করে দেওয়ার জন্য সেটেলার বাঙালিরা একের পর এক ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে যার পেছনে সরাসরি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। জুম্ম জনগণের উপর চলমান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে বৈধ্যতা দেওয়ার জন্য কতিপয় গণমাধ্যম নেতিবাচক ন্যারেটিভ তৈরি করছে। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার জন্য জুম্ম ছাত্র সমাজকে নতুনভাবে অবশ্যই ভাবতে হবে। এই জুম্ম ছাত্র সমাজকে প্রগতিশীল আদর্শে আদর্শিত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে অবশ্যই সামিল হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা যেহেতু রাজনৈতিক, তাই এটিকে সমাধানের জন্য রাজনৈতিকভাবেই অগ্রসর হতে হবে। রাজনৈতিক আন্দোলনকে সফল করতে হলে প্রগতিশীল ও দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে তোলার কোন বিকল্প পথ নেই। আজকের সম্মেলন ও কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সেই ধরণের নেতৃত্বকে হাল ধরতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত দক্ষতা-যোগ্যতা, প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা এই তিন বিষয়ট প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। পিসিপির বর্তমান নেতৃত্বের গৃহীত কর্মসূচিকে সফল করতে তরুণ, শিক্ষিত ও দেশপ্রেমিক কর্মীদের সমন্বয়ে নেতৃত্বকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, যাতে তারা পার্টি কর্তৃক ঘোষিত বৃহত্তর আন্দোলনে অধিকতরভাবে জুম্ম ছাত্র সমাজকে সামিল করতে পারে। একজন রাজনৈতিক কর্মীকে নিরলসভাবে অবশ্যই তিনটি কাজের মধ্যে দিয়ে প্রগতিশীল হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সেগুলো হল- রাজনৈতিক কাজ, সাংগঠনিক কাজ ও মতাদর্শগত সংগ্রাম। সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে ঐক্য-সমালোচনা-ঐক্য এই কর্মপদ্ধতিকে অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে।
রুমেন চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ঘোষিত বৃহত্তর আন্দোলনকে সফল করার দায়িত্ব বর্তমান তরুণ প্রজম্মের। তরুণ প্রজম্মকে ঐতিহাসিক এই দায়িত্ব অবশ্যই কাঁধে তুলে নিতে হবে। আমাদের এই দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ কিংবা বাস্তবতা নেই। এই দায়িত্ব পালনে নিয়মতান্ত্রিক কিংবা অনিয়মিতান্ত্রিক- উভয় পথে ছাত্র সমাজকে অধিকতরভাবে সামিল হওয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে যেকোন ষড়যন্ত্র নির্মূলকরণ তথা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সেভাবেই এগিয়ে নিয়ে যেতে পিসিপির নেতৃত্বকে সেভাবেই কাজ করতে হবে।
চন্দ্রিকা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ শুধু একটি নাম নয়, এটি জুম্ম তারুণ্যের সংগ্রাম ও প্রতিবাদের একটি কন্ঠস্বর। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ব্যতীত আমাদের মুক্তি নেই। জুম্ম জনগণের উপর নির্যাতন বন্ধ ও আদিবাসী নারী ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য আমাদের তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সংগঠনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। আশা করি এই কাউন্সিলের মাধ্যমে আমরা সেই নেতৃত্বদেরকে আমাদের মাঝে পাব।
কনেজ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ স্মরণাতীত কাল থেকে বিজাতীয় শাসনের ফলে অতীষ্ঠ হয়ে আছে। যখনই জুম্ম জনগণের উপর অন্যায় অবিচার নেমে এসেছিল, সেই মুহূর্তে জুম্ম তরুণ সমাজ পুরো জাতিকে দিশা দেখিয়েছিল। রাজপথে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে ঢাকার বুকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জন্ম হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ টি বসন্ত পেরিয়ে গেলেও সেটিকে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন না করে উল্টো পাহাড়ে সেনাশাসন ও ভূমি বেদখল বৃদ্ধি করেছে এই সরকার। জুম্ম জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে বেগবান করার জন্য আমরা ছাত্রসমাজ ঐতিহাসিক দায়িত্বকে কাঁধে তুলে নিব।
সভাপতির বক্তব্যে জগদীশ চাকমা বলেন, আমরা জুম্ম জনগণ স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাস করে আসছি ঠিকই আমরা কিন্তু অধিকার বঞ্চিত। আমরা আমাদের যথাযথ অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। শাসকগোষ্ঠী থেকে আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজন সংগঠন। আমরা সবাই জুম্ম জনগণের সমস্যাগুলোকে বুঝতে পারি। তাই আমাদের সবাইকে সমাধানের পথে ধাবমান হতে হবে। মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে যে আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলমান রয়েছে, সেই সংগ্রামে আমাদের তরুণ সমাজকে জোরালোভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।
পরিশেষে সর্বসম্মতিক্রমে ৩২তম কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সভাপতি হিসেবে কনেজ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হ্লামংচিং মারমা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পায়া ম্রো’কে নির্বাচিত করে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট পিসিপি, ঢাকা মহানগর শাখা কমিটি গঠন করা হয়।
নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো।

Back to top button