জাতীয়
সেটলার কর্তৃক আদিবাসী ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

আইপিনিউজ: আজ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রোজ: বৃহস্পতিবার, বিকাল ৪.০০ ঘটিকায় খাগড়াছড়িতে ৮ম শ্রেণীর এক আদিবাসী ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক অনিক কুমার দাশ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সৃজন মৃ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, আপনারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কথা শোনান, নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু আপনারা এখনো পর্যন্ত পাহাড়ে ধর্ষণের মহাযজ্ঞ থামাতে পারেন নাই। এই দায় সম্পূর্ণ সরকারের। এই দায় কোন পাহাড়ীর না, কোন সাংবাদিকের না। রাজশাহীতে আদিবাসীদের শান্তি নেই, কক্সবাজারে শান্তি নেই, শেরপুরে শান্তি নেই, পাহাড়ে শান্তি নাই। আপনারা পুরোপুরি ব্যর্থ। আপনারা ব্যর্থ বলেই ৮ম শ্রেণীর একজন জুম্ম ছাত্রীর ধর্ষণ থামাতে পারেন নাই। সেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারেন নাই বলে মন্তব্য করেন মি. দীপায়ন।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান তার বক্তব্যে বলেন, আদিবাসীদের উপর যতবারই হামলা অত্যাচার হয়েছে ততবারই দেখতে পেয়েছি হয় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয় না অথবা, গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েকদিন পরই জামিন নিয়ে চোখের সামনে ঘুরতে দেখতে পাই। আমরা আর কোনো আদিবাসী কিশোরীর ধর্ষণ দেখতে চাই না। এই দেশ আদিবাসী, বাঙালি সকলের জন্য নিরাপদ হোক।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাহাড়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা হলেও আমরা কখনো বিচার পাইনি। এইসব ঘটনার বিচার তো দূরের কথা, পাহাড়ে প্রায় ১৫টিরও অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত তার কোন সুষ্ঠু তদন্ত পর্যন্ত হয়নি। বাংলাদেশের সমতলে কোনো বড় ধরনের অঘটন কিংবা ১৪৪ ধারা জারি করলে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যেকটি দিন শুরু হয় অঘোষিত ১৪৪ ধারার মাধ্যমে। এতদিন ধরে আদিবাসী সমাজ ও আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো আমাদের প্রত্যেকজনের মনে মনে ঘেঁথে আছে। মনে থাকা এই সুপ্ত ক্ষোভগুলো একদিন আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হবে। সেইদিন কিন্তু সেই দায়ভার এই রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শৈসানু মারমা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, পাহাড়ে কখনো ধর্ষণের পর যৌনাঙ্গে বাঁশ ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। কখনো চোখ উপড়ে হত্যা করা হয় । কিন্তু এসব ঘটনার কোন সুষ্ঠ বিচার আমরা পাই নি। এই ধর্ষণকারীরা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর। এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বাহিনী প্রস্তুত আছে। তাই তারা গণহত্যা, জুম্মদের ভূমি বেদখল, ধর্ষণ থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম করে যাচ্ছে জুম্মদের উচ্ছেদ করার জন্য।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, পাহাড়ে নারীদের উপর বারবার সংঘটিত যৌন সহিংসতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত বৈষম্যের চিত্র। যদি কোনো পাহাড়ী যুবক কোনো অপরাধ করে, মিডিয়া তাকে সাথে সাথে ’পাহাড়ী সন্ত্রাসী’ বলে চিহ্নিত করে। কিন্তু পাহাড়ের বাঙালীরা অপরাধী হলে তার পরিচয় আড়াল হয়। পাহাড়ের এইসব ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হলে ৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির বিকল্প নেই।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট্রের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক অনিক কুমার দাশ বলেন, নারীদের উপর দৃষ্টিভঙ্গি এবং দেশের বিচার ব্যবস্থার কারণে নারীদের প্রতি প্রতিনিয়ত একটার চেয়ে একটা ভয়ঙ্কর ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এর দায় রাষ্ট্রকে নিতেই হবে। আদিবাসী নারীদের উপর রাষ্ট্রের এই নিপীড়নমূলক আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সৃজন মৃ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত রাস্তায় দাঁড়াই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকার কোন নিপীড়নেরই সুষ্ঠু বিচার করতে পারে নি। আদিবাসীদের উপর চলমান এই নিপীড়ন বন্ধের জন্য রাষ্ট্র নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে।
পরিশেষে সমাবেশ থেকে ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য সমাবেশ থেকে আহ্বান করা হয়।