আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের ব্যবসায় ও মানবাধিকার ফোরামে এশিয়া ইন্ডিজিনাস ককাসের বিবৃতি

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাতিসংঘের ৭ম  দায়িত্বশীল ব্যবসায় ও মানবাধিকার ফোরামে আজ  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্র (UNCC), ব্যাংকক, থাইল্যান্ড থেকে এশিয়া ইন্ডিজিনাস ককাসের পক্ষে এ বিবৃতি উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি ও এশিয়া ইন্ডিজিনাস ইয়ুথ প্লাটফর্মের ডেপুটি চেয়ারপার্সন টনি চিরান।

আইপিনিউজ ডেস্ক (আর্ন্তজাতিক): ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাতিসংঘের দায়িত্বশীল ব্যবসায় ও মানবাধিকার ফোরামের (Asia-Pacific Responsible Business and Human Rights Forum) ৭ম অধিবেশনে এশিয়া ইন্ডিজিনাস ককাস এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে এশিয়া ইন্ডিজিনাস ককাসের পক্ষে ব্যবসায় ও উন্নয়ন প্রকল্পে আদিবাসী অধিকার উপেক্ষার অভিযোগ উত্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি ও এশিয়া ইন্ডিজিনাস ইয়ুথ প্লাটফর্মের ডেপুটি চেয়ারপার্সন টনি চিরান। তিনি বলেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আদিবাসীরা বিলুপ্তির হুমকির মুখোমুখি এবং উন্নয়নের নামে তাদের ভূমি ও অধিকার বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাঁওতালসহ সমতল ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল(ইপিজেড) , রাবার বাগান ও নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন । এতে খাদ্য নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই ধরনের অভিজ্ঞতা ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনেও দেখা যাচ্ছে।

বিবৃতিতে মি. টনি আরো উত্থাপন করেন, তথাকথিত “ন্যায্য রূপান্তর” এর আড়ালে খনিজ আহরণ ও জ্বালানি প্রকল্প বাড়ানো হচ্ছে, অথচ আদিবাসীদের মুক্ত, পূর্বানুমতি ও অবহিত সম্মতির (FPIC) অধিকার অস্বীকার করা হচ্ছে। ককাসের মতে, বাঁধ ও বৃহৎ খনিজ আহরণ জলবায়ু সংকটের সমাধান নয়; বরং এটি মুনাফাকেন্দ্রিক পুরনো ধারা চালিয়ে যাচ্ছে।

এশিয়া ইন্ডিজিনাস ককাসের পক্ষে বিবৃতি উপস্থাপন করছেন মি. চিরান।

বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, আদিবাসী জনগোষ্ঠী কেবল ভুক্তভোগী নয় বরং তারাই সমাধানের বাহক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সারাবিশ্বে আদিবাসীরা জ্ঞান, শাসনব্যবস্থা এবং ভূমি ও পানির তত্ত্বাবধান জীবনকে টিকিয়ে রেখেছে। আদিবাসীরা জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং সত্যিকারের টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের জন্য পরীক্ষিত ও ন্যায্য পথ দেখিয়েছে । বিবৃতিতে আদিবাসী নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি অংশীদারিত্ব, আদিবাসীদের বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য সরাসরি অর্থায়ন এবং আদিবাসীদের অধিকারভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণকারীর মর্যাদাকে সত্যিকারভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা সরাসরিভাবে উপস্থাপন করা হয়।

বিবৃতিতে এশিয়া ইন্ডিজিনাস ককাস নিম্নোক্ত বিষয় বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানায়-

ব্যবসায়ের জন্য:

  • মুক্ত, পূর্বানুমতি ও অবহিত সম্মতি (Free Prior and Informed Consent) এবং আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সম্মান করুন।

  • স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক, লিঙ্গ-সংবেদনশীল অভিযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করুন; কার্যকর প্রতিকার, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করুন।

  • পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাবের পূর্ণ বিবরণ (লিঙ্গভিত্তিক পৃথক তথ্যসহ) প্রকাশ করুন।

  • পুরো মূল্য শৃঙ্খলে মানবাধিকার যাচাই (due diligence) কার্যকর করুন।

রাষ্ট্রের জন্য:

  • আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার, বিশেষত প্রথাগত ভূমি-অধিকারের স্বীকৃতি দিন এবং জাতীয় আইনকে UNDRIP ও CEDAW GR 39-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করুন।

  • স্বেচ্ছাসেবী পদক্ষেপের বাইরে গিয়ে বাধ্যতামূলক মানবাধিকার যাচাই প্রণয়ন করুন, যাতে ক্ষতির জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি দায় বহাল হয়।

  • আদিবাসী অধিকারকর্মীদের জন্য কার্যকর প্রতিকার, আইনি সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

  • পলিসির সংস্কার ও প্রয়োগ শক্তিশালী করুন, যাতে অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হয় এবং আইন ও বিধিমালার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকে।

  • জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার অন্তর্ভুক্ত করুন।

  • আদিবাসী তথ্য সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সুরক্ষা দিন এবং পদ্ধতিগতভাবে লঙ্ঘন নথিভুক্ত করুন।

দাতাসংস্থা, বিনিয়োগকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য:

  • টেকসই উন্নয়ন ও জ্বালানি সমাধানের জন্য আদিবাসী নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোতে সরাসরি অর্থায়ন দিন।

  • যেখানে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে যে আদিবাসী জনগোষ্ঠী, তাদের ভূমি, পানি ও অধিকার রক্ষাকারীদের ক্ষতি করা হচ্ছে, সেখানে বিনিয়োগ স্থগিত বা প্রত্যাহার করুন।

Back to top button