গোদাগাড়ীতে আদিবাসী তরুনী ধর্ষণ চেষ্টার মামলা তুলে নিতে প্রভাবশালীদের চাপ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় গত ২৩ আগস্ট বুধবার আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় আদিবাসী ওই তরুনী (২০) ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়া ও সমঝোতা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। ফলে সুষ্টু বিচারের শঙ্কায় আছে নির্যাতিত তরুনী, আত্মীয় স্বজন ও তার পুরো পরিবার। মামলার বাদী নিজে ও তার মা সেফালী মুরমু, ভাই সুকলাল ও চাচাতে ভাই নয়ন এমনই অভিযোগ তুলেছেন।
তারা বলেন এই ঘটনায় গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা পর অভিযুক্ত আসামী মোঃ ভুটু (৩৪) পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল হাজতে আছে। তারপর থেকেই ঘটনাটিকে ধামাচাঁপা দিতে ও সমঝোতা করতে বাসুদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বেবী নিজে বাদীর চাচাতে ভাই নয়ন কে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে এই ঘটনাটি বাড়াবাড়ী না করে মিমাংসা করে নেওয়ার চাপ প্রয়োগ করছেন বলে জানান। শুধু তিনিই না কাপাসিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মতিউর রহমানও আদিবাসী গ্রামের মাতাব্বর রামকে ডেকে ও মোবাইলে সমঝোতা করার জন্য বারবার চাপ প্রয়োগ করছেন ।
বাসুদেবপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমানের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমার পক্ষ হতে কোন মিমাংসা বা কোন চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। অভিযুক্ত রাসেল আমাকে ফোন করে ভূল স্বীকার করে বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, এই ঘটনাই তোমাদের শস্তি হওয়া প্রয়োজন । চেয়ারম্যান নিজেও এই ঘটনার দায়ীদের বিচার দাবি করেন। তবে কেউ কেউ সমঝোতার কথা বলছেন বলে জানান।
চারদিকে এই সব প্রাভাবশালীদের চাপে ওই আদিবাসী পরিবারটি কোন পথে এগুবে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। তারা সুষ্ঠু বিচার পাবে কিনা তা নিয়ে শংশয়ে রয়েছে। তরুনী ও তার মা সেফালী মুরমু বলেন, আমায়ে মেয়ের তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছে । আমার জামাই লোকমুখে এই ঘটনার কথা শুনে গত শুক্রবার ঢাকা থেকে দেশে ফিরেছেন। সে আমার এই মেয়ে আর ঘরে তুলবে না বলে মানুষ মুখে শুনেছেন। সে গ্রামে আসলেও আমার মেয়ের সাথে বা পরিবারের কারো সাথে যোগযোগ করেনি।
সবকিছু মিলিয়ে পুরো পরিবারটি এখন এক রকম আতঙ্কে ও সুষ্ঠু বিচারের শংকায় আছেন। এদিকে দুই নম্বর আসামী ধরে পড়লেও এক নম্বার আসামী রাসেল এলাকা হতে গা ঢাকা ও বাকি দুই জন আসামী এলাকায় থাকলেও আটক হয় নি বলে জানান পরিবারটি।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি হিপজুর আলম মুন্সি বলেন মামলার আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।আবারও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাকে আসামী ধরতে পাঠাবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য- গত বুধবার মামলার বাদী তরুনী ও তার ভাই শুকলাল খড়ি কুড়ানোর কাজে মাঠে যান, বেলা ৩ টার দিকে তার পিপাসা লাগলে ভাই সুকলালকে পানি আনতে পাঠায় খড়ি কুড়ানোর স্থান হতে সামাম্য দূরে। এই সুযোগে মামলার এক নম্বর আসামী বাসুদেবপুর ইউনিয়নের কাপাসিয়া পাড়া গ্রামের ফারুক মড়লের ছেলে ডিপ চালক রাসেল (৩৫) ও দুই নম্বর আসামী একই এলাকার নাইমুল হকের ছেলে ডিপ চালক ভুটু (৩৪) তরুনীকে মুখে দিয়ে চেপে ধরে এবং হাতদুটিকে বেঁধে জাপটিয়া ধরে পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে। মামলার অপর দুই আসামী একই এলাকার নেজাম আলীর ছেলে আতাবুর ও আব্দুস সালামের ছেলে সাদিকুল চিৎকার করলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেখাতে থাকে। নির্যাতিত তরুনী নিজে প্রাণে বাঁচার জন্য চিৎকার ও ধস্বাধস্তি করলে তার ভাই শুনতে পেয়ে দ্রুত ঘটানা স্থলে আসলে আসামীরা দ্রুত পালিয়ে যাই।