মানিকগঞ্জে ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়া কর্মকর্তা বান্দরবানে বদলি-পদায়ন বাতিলের দাবি
মানিকগঞ্জের সিংগাইর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়া উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান খানের বান্দরবানে পদায়ন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

আইপিনিউজ ডেস্ক: আজ ২৭ জুলাই, ২০২৫, রবিবার বান্দরবান জেলা প্রেসক্লাবে বান্দরবানস্থ আদিবাসী ছাত্র সমাজের উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধন থেকে মানিকগঞ্জ সিংগাইর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান খানের বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পদায়ন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
গত ২৩ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর হতে স্মারক নং ৩৭.০২.০০০০.১০১.১৯.০০৫.২৪-৩৭৮৯/১৫ মূলে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান খানকে বান্দরবান সদর উপজেলাতে জনস্বার্থের কারণ দর্শিয়ে পদায়নের মাধ্যমে বদলি করা হয়। এই কর্মকর্তা সিংগাইর উপজেলার সিংগাইর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৩ বছরের এক ৮ম শ্রেণী ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব প্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত। গত ১৩ জুলাই ২০২৫ তারিখে উক্ত বিদ্যালয়ের অভিভাবকবৃন্দ পৃথকভাবে সিংগাইর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ পত্র প্রদান করে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস. এম. আব্দুল্লাহ বিন শফিককে তদন্ত কমিটির প্রধান করে তিনজন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার দোষ স্বীকার করে।

ঐ কর্মকর্তার পূর্বেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রীদের নানা কুপ্রস্তাব দেওয়ার এবং উপজেলার এক নারী কর্মকর্তার সাথে অশালীন ইঙ্গিত ও ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
মানববন্ধন থেকে অভিুযুক্ত কর্মকর্তাকে বান্দরবানে পদায়ন সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে বলা হয়- ”দোষীর সুষ্ঠু তদন্তের পর সর্বোচ্চ বিচার সরূপ শাস্তি প্রদান না করে তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে বান্দরবানের মত একটি জেলায়। যেখানে প্রয়োজন ছিল সৎ, চরিত্রবান, উদ্যমী ও প্রকৃত উন্নয়নকামী দক্ষ কর্মকর্তা, যেন সামগ্রিকতার সাথে পিছিয়ে থাকা জাতিগোষ্ঠী গুলো দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়, সেখানে জনস্বার্থের কারণ প্রদর্শন করে বিভিন্ন দোষে অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তাকে পদায়ন করেছে সরকারি দপ্তর। পূর্বেও এমন ন্যাক্কারজনক পদায়ন করা হয়েছে এই জেলাতে। যেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা একটি অপরাধীদের শাস্তির জায়গা। বাংলাদেশের এক কোণায় ফেলে রাখা আর্বজনা স্তূপ। অথচ গত জুলাই অভ্যুত্থানে বিপ্লবের মূল চেতনা ছিল বৈষম্য নিরোধ করা। অবশ্য এখানে উল্লেখ্য যে, গত ৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে জুলাই বিপ্লবের অন্যতম একজন সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্যেও বান্দরবানে অপরাধীদের পাঠানোর গোপন ইচ্ছা প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বক্তব্যটি সমালোচিত হওয়ার দরুণ গত ২০ জুলাই ২০২৫ তারিখে রাঙ্গামাটি জেলার এক জনসভায় ক্ষমা প্রার্থনা করে দুঃখ প্রকাশ করে। এর ঠিক তিনদিন পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর হতে দোষী মনিরুজ্জামান খানকে বান্দরবান জেলায় বদলির ঘোষণা আসে। বান্দরবান পার্বত্য জেলার আদিবাসী শিক্ষার্থী ও আদিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এহেন সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক ও অনৈতিক বলে বিবেচনা করছি এবং একই সাথে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
মানববন্ধন থেকে পরে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তিন দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
দাবিগুলো নিম্নরূপ-
১। দোষী সাব্যস্ত মোঃ মনিরুজ্জামান খানকে বান্দরবানসহ পার্বত্য জেলাগুলোতে পদায়ন না করা।
২। দোষী সাব্যস্ত মোঃ মনিরুজ্জামান খানের বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা।
৩। পার্বত্যাঞ্চলে পদায়নের নামে চরিত্রহীন, দুনীর্তিবাজ ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন সরকারি কর্মকর্তা প্রেরণ না করা।
দাবি বাস্তবায়ন না হলে বান্দরবান জেলার আদিবাসী ছাত্র সমাজ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে মানববন্ধন থেকে ঘোষনা দেওয়া হয়।