খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ

গতকাল ১৮ জুলাই ২০২৫ শুক্রবার, বিকাল ৩ ঘটিকায় খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া এলাকায় ৮ম শ্রেণির এক আদিবাসী ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং সকল ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ও আদিবাসী মহিলা ফোরাম, চট্টগ্রামের যৌথ উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পিসিপি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার স্কুল ও পাঠাগার সম্পাদক অপূর্ব চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হ্লামিও মারমা।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অনিল চাকমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম, বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সীমা ত্রিপুরা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমা, আদিবাসী মহিলা ফোরাম, চট্টগ্রামের সভাপতি চিজিপুদি চাকমা প্রমুখ। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আশুতোষ তঞ্চঙ্গ্যা।
অনিল চাকমা বলেন, পাহাড়ে এযাবৎ নারী নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে দিন দিন ধর্ষণের হার বেড়েই চলেছে। এই সরকার যদি জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ জুম্ম জনগণের নায্য অধিকার দিতে না পারে তাহলে পার্বত্য চুক্তির পূর্বের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র-যুব সমাজ নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন ধরনের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। তিনি আরো বলেন, চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
সীমা ত্রিপুরা বলেন, এ দেশে বাঙালি ও আদিবাসীরা মিলে একটা সম্প্রীতি ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করার কথা থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার বাঙালিদেরকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে শোষণ-অত্যাচারের জন্য মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে শাসকগোষ্ঠী। আজ তাদের কারণে পাহাড়ি নারী ও শিশুরা নিজ বসতভিটায়ও নিরাপত্তাহীনভাবে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অধিকার পাওয়া দূরের কথা নিজেদের অস্তিত্বও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। সরকার ও রাষ্ট্রকে আদিবাসী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে।
সুজন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে গুম, অপহরণ, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। ধর্ষণকারীদের প্রশাসন আড়ালে প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে আগের তুলনাই এমন ঘটনা বেড়েই চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একমাত্র পাহাড়ে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য ছাত্রসমাজকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে।
সুমন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা বলে দেয় পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিবেশে রয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র জুম্মদের উপর শোষণ-শাসন জিইয়ে রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নানাভাবে দমনপীড়ন চালাচ্ছে। একজন নাগরিকের মতো তার রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে আমরা মানুষের মতো করে আমরা বেঁচে থাকতে চেয়ে রাষ্ট্র আমাদেরকে বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। শিক্ষিত তরুণ সমাজকে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
চিজিপুদি চাকমা বলেন, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা দিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে নারী নিপীড়নের ঘটনা অহরহ। অন্তবর্তীকালীন সরকার আসার পরও সেই একই ঘটনা চলমান রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই যেন দ্রুত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ে নারী নিরাপত্তায় এগিয়ে আসে।
সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আয়োজিত সমাবেশটির সমাপ্তি ঘটে। সমাবেশ পরবর্তীতে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি চেরাগী মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রেস ক্লাব ভবন ঘুরে আবার চেরাগী মোড়ে এসে শেষ হয়।