জাতীয়

থানচিতে এক খেয়াং নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে বান্দরবানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

আইপিনিউজ ডেস্ক (বান্দরবান): বান্দরবানের থানচি উপজেলায় এক খেয়াং নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে আজ ৬ মে, ২০২৫ বান্দরবানে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পিসিপির বান্দরবান জেলা শাখার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জামাধন তঞ্চঙ্গ্যা সঞ্চালনায় ও সভাপতি উশৈ হ্লা মারমার সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, ফিলিপ খিয়াং, সহ সাধারণ সম্পাদক, পিসিপি বান্দরবান জেলা শাখা, বিতন ময় তঞ্চঙ্গ্যা, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফোরাম, উশৈসিং খেয়াং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ খেয়াং স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন, জেমস বম, বম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, উমংসিং মারমা, বিএমএসসি, বান্দরবান জেলা শাখা, উলিসিং মারমা, সভাপতি, এইচডব্লিউএফ, বান্দরবান জেলা শাখা, জন ত্রিপুরা, অধিকার কর্মী, লেলুং খুমী, মানবাধিকার কর্মী, অংচ মং মারমা, মানবাধিকার কর্মী এবং ডনাই প্রু নেলী, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে জন ত্রিপুরা বলেন, আমরা বেশিদিন হয়নি অন্যায় ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে এখানে দাঁড়িয়েছিলাম। আজকে আবার এখানে এসে দাঁড়াতে হলো। আমরা ভেবেছিলাম ৫ আগস্টের পরে নতুন রাষ্ট্র আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে কিন্তু এখন দেখছি আগের তুলনায় ধর্ষণ, হত্যা আরো দ্বিগুণ বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে গিয়ে কিছু কিছু মূর্খের দল নারী কমিশন আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছে যাতে আরো অধিকমাত্রায় নারীদের উপর ধর্ষণ নিপীড়ন চালানো যায়। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে অপরিকল্পিত পর্যটন আজ আমাদের পাহাড়ের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মা বোনেরা স্বাধীন ও নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারছে না। অবশেষে তিনি একটি নারী বান্ধব রাষ্ট্র এবং সকল ধর্মের, সকল জাতির সমান অধিকার ও একটি সুরক্ষিত দেশের দাবি চেয়ে তার বক্তব্য সমাপ্ত করেন।

উলিসিং মারমা বলেন,  ধর্ষকেরা ধর্ষণের পরে জঘন্যভাবে হত্যা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই ধর্ষণ, হত্যা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দীর্ঘ দিনের। আমরা অতীতেও দেখেছি আমাদের অনেক মা, বোনদের ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এত বছর পরেও আমরা এখনো এই রাষ্ট্রে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী বা ধর্ষকদের বিচার হতে দেখিনি। এই রাষ্ট্রে যদি সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হতো তাহলে ধর্ষকেরা ধর্ষণ করার সাহস পেতো না এবং আজকে আমাদের বোন চিংম্রা খিয়াংকে ও হারাতে হতো না। তার একটি ১৬ মাসের বাচ্চাশিশু রয়েছে। সে শিশুটি বড় হয়ে এই সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন করবে যে, তার মাকে কোন অপরাধে ধর্ষণ করা হয়েছিলো। তিনি আরো বলেন, প্রশাসন যদি ধর্ষককে খোঁজে বের করা দৃষ্টান্ত শাস্তি দিতে না পারলে এই ছাত্র সমাজ লেজ গুজিয়ে বসে থাকবে না।

লেলুং খুমী বলেন, আমরা যতদূর জানি দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানের থানচির মতো আরো কিছু কিছু জায়গায় পর্যটক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সত্বেও বহিরাগত সমতল থেকে বাঙালি পর্যটকরা কীভাবে সেখানে প্রবেশ করে। সুতরাং, আমি মনে করি এখানে প্রশাসনের দূর্বলতা ও বেখেয়ালিপনা রয়েছে। এবং আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি উক্ত এলাকায় সমতল থেকে বহিরাগত বাঙালি শ্রমিকেরাও সড়ক মেরামত কাজে নিযুক্ত আছে। আমার মনে হয় না শিক্ষিত পর্যটকেরা এই ধরনের জঘন্যতম কাজ করতে পারে। তারপরও প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ থাকবে সুষ্ঠুভাবে যেন তদন্ত করা হয়। তিনি আরো বলেন, সেই, ১৯৭১ সালের পর থেকে আজকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘুদের উপর শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন সময় দমন, নিপিড়ন, নির্যাতন, লুটপাট, অন্যায়, অবিচার, জুলুম চালিয়ে আমাদেকে দাবিয়ে রাখার জন্য আমাদের মনে যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং গতকাল আমাদের বোন চিংম্রাউ খিয়াংকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করার পরে হত্যা করা হলো এটা তারই একটা ধারাবাহিকতা। তিনি আরো বলেন, এই রাষ্ট্রে আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক সাথে লড়াই করতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান ছাত্র ও যুব সমাজকে আরো অধিক সোচ্চার হতে হবে। অবশেষে তিনি ধর্ষক ও খুনিদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে যথাযথ কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

অংচমং মারমা বলেন, আজকে আমরা খুব দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে এখানে দাড়িয়ে আছি। তিনি প্রথমে তার বক্তব্যর শুরুতে ধর্ষক ও খুনীদের ধিক্কার জানিয়ে বলেন, এই যাবত পাহাড়ে যত জনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হওয়া প্রত্যকের ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে যে মামলা দেওয়া হয়েছে সে মামলা গুলো যদি দ্রুততার সাথে তদন্ত করা না হয় এবং খুনি ও ধর্ষকদের যদি সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে এই ধরণের হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা আরো ঘটতে থাকবে। তিনি আরো বলেন পাহাড়ের ইতিহাসে ধর্ষণের ঘটনা বেশি পুরাতন নয়। পাহাড়ের আদিবাসীদের শব্দের ভান্ডারে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি খুব নতুন। অবশেষে তিনি ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু দন্ড আইন জারি করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান।

Back to top button