আন্তর্জাতিক

আদিবাসী অধিকার রক্ষায় বৈশ্বিক পদক্ষেপ জোরদার করুনঃ জাতিসংঘ স্থায়ী ফোরামে টনি চিরান 

আইপিনিউজ বিডি, নিউইয়র্ক, ২২ এপ্রিল ২০২৫: নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের (UNPFII) ২৪তম অধিবেশনে বাংলাদেশের আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান বক্তব্য রাখেন। তিনি এশিয়া ইন্ডিজিনাস পিপলস্ ককাসের পক্ষ থেকে আজ এই বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এজেন্ডা আইটেম ৩-এর অধীনে তিনি জাতিসংঘের আদিবাসী জনগণের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণা (UNDRIP) বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেন।

টনি বলেন, এশিয়ার অনেক দেশে এখনো আদিবাসীদের সরকারি স্বীকৃতি নেই, আর যেখানে কিছুটা স্বীকৃতি আছে, সেখানেও তাদের অধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি লাওস, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, নেপাল ও ভারতের মতো দেশের অবনতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আদিবাসী অধিকার রক্ষায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভারতের বস্তারে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার রক্ষা নিয়ে যেসব সহিংসতা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

মি. চিরান আরো বলেন, এশিয়ার অনেক দেশে গণতন্ত্র সংকুচিত হচ্ছে, ফলে আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রও সংকুচিত হচ্ছে। তবে তিনি ফিলিপাইনের সাম্প্রতিক একটি ইতিবাচক উদ্যোগের প্রশংসা করেন, যেখানে ২০২৪ সালে প্রণীত ‘ব্যাংসমোরো আদিবাসী আইনে’ UNDRIP-কে আঞ্চলিক নীতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং ILO কনভেনশন ১৬৯ ও UNDRIP-এর মতো আইনি কাঠামোর গুরুত্ব তুলে ধরে টনি চিরান বলেন, এই নীতিগুলোর মাধ্যমে আদিবাসীরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় আরও সংগঠিতভাবে এগোতে পারে।

তিনি জাতিসংঘ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানান:

১. জাতিসংঘ মহাসচিব এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা যেন দেশগুলোকে UNDRIP অনুযায়ী আইন ও নীতি গ্রহণে উৎসাহিত করেন এবং ব্যবস্থা নেন, বিশেষ করে যেসব দেশে আদিবাসীদের স্বীকৃতি নেই।

২. জাতীয় পর্যায়ে আইনি সংস্কার, নীতি, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

৩. জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আদিবাসী অঞ্চলের সংঘাত নিরসনে আলোচনা ও শান্তি প্রক্রিয়ায় আদিবাসী নারী ও যুবাদের সম্পৃক্ত করার সম্ভাবনা বিবেচনা করতে হবে।

৪. জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তি নির্মাণ বিভাগকে আদিবাসীদের সম্পৃক্ত থাকা শান্তি চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

৫. লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার মতো এশিয়া অঞ্চলেও আদিবাসী বিষয়ক একটি আন্তঃসংস্থাগত ও সমন্বিত ইউনিট গঠন করতে হবে।

৬. জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের সেশনের কাঠামো পুনর্বিবেচনা করে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে পালাক্রমে অধিবেশন আয়োজনের চিন্তা করতে হবে।

টনি চিরান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আদিবাসী আন্দোলন শুধু অধিকার রক্ষার সংগ্রাম নয়, এটি বৃহত্তর গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেরই অংশ।”

Back to top button