আন্তর্জাতিক

পাহাড়ে আদিবাসী নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেইঃ জাতিসংঘে অগাস্টিনা চাকমা

আইপিনিউজ বিডি প্রতিবেদক, নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চলমান জাতিসংঘের স্থায়ী আদিবাসী বিষয়ক ফোরামের (UNPFII) ২৪তম অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্মা নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।

২১ এপ্রিল ২০২৫, অধিবেশনের ৫(ই) নং এজেন্ডা: আন্তঃআঞ্চলিক, আন্তঃপ্রজন্ম ও বৈশ্বিক সংলাপ ‘আদিবাসী নারীদের অধিকার’ বিষয়ে বক্তব্য প্রদানকালে অগাস্টিনা চাকমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ১৯৯৭ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আদিবাসী জুম্মা নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, ভারতে আশ্রিত জুম্ম উদ্বাস্তু ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত জুম্ম পরিবারসমূহকে পুনর্বাসন, সেটলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য এলাকার বাইরে সম্মানজনকভাবে প্রত্যাহার এবং পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে কার্যকর ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ায় আদিবাসী নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

অগাস্টিনা চাকমা জানান, ২০২৪ সালে বাঙালি সেটলারদের দ্বারা ১২টি যৌন সহিংসতার ঘটনায় ১৬ জন আদিবাসী নারী ও কন্যা শিকার হন। এসব ঘটনার কয়েকজন আসামি গ্রেফতার হলেও দুর্বল মামলা এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় তারা দ্রুত জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। বিচারহীনতার এ সংস্কৃতির কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি গত ১০ মার্চ ২০২৪, বান্দরবানে খিয়াং সম্প্রদায়ের এক ১৬ বছর বয়সী মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে বহিরাগত মো. জামাল হোসেন কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনাও তুলে ধরেন। অভিযোগ করা হয়, ৫ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের খামতাং পাড়া সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর সারোয়ার ভিকটিমের পরিবারকে মামলা না করে সামাজিক মীমাংসার জন্য চাপ দেন। মেজর সারোয়ারের নির্দেশে আদিবাসী সমাজের সামাজিক নেতৃবৃন্দ ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রথমে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করলেও তা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের আপত্তিতে শেষে মাত্র ৪০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এরপরও ক্ষতিপূরণের অর্থ ভিকটিমের পরিবার পাননি।

এ অবস্থায়, জাতিসংঘ স্থায়ী ফোরামকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দেন অগাস্টিনা চাকমা:

১. পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ১৯৯৭ দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা।
২. আদিবাসী নারীদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সুপারিশ করা।

চলমান এই অধিবেশনে পিসিজেএসএস-এর তিনজন প্রতিনিধি — চঞ্চনা চাকমা, অগাস্টিনা চাকমা ও মনোজিৎ চাকমা — অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালনক পাল্লব চাকমা, জাতিসংঘের এক্সপার্ট ম্যাকানিজম অন দ্যা রাইটস অব ইন্ডিজিন্যাস পিপলস (এমরিপ) সদস্য বিনোতা ময় ধামায় এবং বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরানসহ আদিবাসী পক্ষে প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও এই অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছে।

Back to top button