আজ ফুলবাড়ী দিবস
আজ ২৬ আগস্ট। ফুলবাড়ী ১১তম বার্ষিকী। ২০০৬ সালের এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারসহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ফুলবাড়ীর মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতার উপর পুলিশ ও বিডিআর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৩ জন ও আহত হন ২ শতাধিক। ঘটনার ১১ বছর হয়ে গেলেও এখনও পূরণ হয়নি ফুলবাড়ীবাসীর ৬ দফা দাবি।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট। কী হয়েছিল সেদিন? উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে সকাল থেকেই ফুলবাড়ীর ঢাকা মোড়ে জড়ো হতে থাকেন ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। দুপুর ২টার দিকে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হয়। মিছিলটি নিমতলা মোড়ের দিকে এগুতে থাকলে প্রথমে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ ও বিডিআর-এর বাঁধা ভেঙে মিছিলটি এগুতে থাকলে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও গুলি করা হয়।
বিডিআরের গুলিতে এসময় নিহত হন আল আমিন, সালেকীন ও তরিকুল। আহত হন ২ শতাধিক মানুষ। এরপর ফুলবাড়ীবাসী ধর্মঘটের মাধ্যমে এলাকায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করে। বাধ্য হয়ে তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে ৬ দফা চুক্তি করলে এলাকাবাসী ধর্মঘট প্রত্যাহার করে। এই চুক্তি এখনও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি, বরং এখনও ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি হওয়ার পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ ওই এলাকার জনগনের।
ফুলবাড়ীর লোকজন জানান, বাপ-দাদার ভিটেমাটি ও কবরস্থান ছেড়ে তারা কয়লা খনি চান না। সরকার ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আগামী দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করার যে চক্রান্ত করা হচ্ছে আবারও রক্ত দিয়ে তা প্রতিহত করবেন তারা।
ওই সময়ে ফুলবাড়ী রক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বর্তমান ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক। তিনি জানান, ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী রক্ষা আন্দোলনে ৩ জন নিহত ও অনেকেই আহত হয়। তবে তাদের যে আন্দোলন তার প্রাপ্তি খুবই কম, শতভাগ প্রাপ্তিতে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, ওই ঘটনায় সরকার তদন্ত প্রতিবেদন দিবে বলে জানালেও দীর্ঘ ১১ বছরেও কোন প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। বরং ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না করে টালবাহানা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে সে বিশ্বাস ছিল তাদের। এখনও সেই আস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে আছেন। এভাবে গতানুগতিক আন্দোলন নয়, ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে রাজপথ, রেলপথ অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা।’ দিনটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।