জাবিতে সাঁওতালদের ‘বাহা বঙ্গা উৎসব’ উদযাপিত

আজ ১৪ মার্চ (শুক্রবার) ও গতকাল ১৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দুইদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ছায়ামঞ্চে দ্বিতীয়বারের মত উদযাপিত হচ্ছে সাঁওতালদের সবচেয়ে বড় ‘বাহা বঙ্গা’ উৎসব।
গতকাল ১৩ মার্চ ২০২৫ বৃহস্পতিবার বিকেলে দেবতার মন্দির তৈরির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিকেল ৩ টায় শুরু হয় জাহের থান (দেবতার মন্দির তৈরি) এবং সন্ধ্যা ৭ টায় শুরু হয় প্রাথমিক পূজা।
বাহা বঙ্গা উদযাপন কমিটির আয়োজিত এই বর্ণাঢ্য উৎসবে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়।
উৎসবে উপস্থিত একজন সাঁওতাল নারী উৎসব সম্পর্কে বলেন, “আমাদের এই উচ্চ পার্বণ গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্ত হওয়ার ফলে আমরা যারা নন-খ্রিস্টান আমরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি। এটাকে ধরে রাখার জন্য বা রাষ্ট্রের কাছে বা দেশের জনগণের কাছে জানানোর জন্য যে এখানে আমাদের আদি ধর্মের লোক আছে… এই লোকগুলোর যে এই রীতিনীতি, ধর্মীয় নিয়ম আছে… এইগুলোকে প্রকাশ করার জন্য আমাদের এই আয়োজন। জাহাঙ্গীরনগরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ… বলার মতো ভাষা আর নেই”
উৎসবে উপস্থিত আরেও একজন সাঁওতাল নারী বলেন, অশুভ শক্তি যেন গ্রামকে গ্রাস না করে সে জন্য এই পূজার প্রচলন সেই আদিকাল থেকে।

আজ ১৪ মার্চ ২০২৫ শুক্রবার সকাল ৮টায় শাল ফুল সংগ্রহের মাধ্যমে শুরু করা হয় ‘বাহা বঙ্গা’ পূজা। পূজা শেষে পুরোহিত ও অতিথিদের নাচের মাধ্যমে বরণ করা হয়। এরপর নারীরা একে একে পুরোহিতের পা ধুয়ে দিয়ে তাঁর কাছ থেকে শালফুল গ্রহণ করে। ফুল গ্রহণ শেষে শুরু হয় আলোচনা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, লেখক, গবেষক এবং সাঁওতাল সমাজের মাঞ্জহি হাড়াম মাঞ্জহি বুডহিসহ আদিবাসী নেতৃবৃন্দ।
উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাঁওতাল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজশাহী আদিবাসী কালচারাল একাডেমির পরিচালক হরেন্দ্রনাথ সিং বলেন, “এটি মূলত সাঁওতালদের একটি অন্যতম উৎসব। এটি এই বসন্তকালেই হয়ে থাকে, এবং প্রকৃতিতে যখন ফুল আসে… বিশেষ করে শালফুল ছাড়া আসলে এই পূজা হয়না। এই উৎসব শুরু হওয়ার পূর্বে সাঁওতাল নারীরা খোঁপায় ফুল গোজেন। বসন্ত এসেছে, প্রকৃতিতে ফুল ফুটেছে, এই প্রকৃতির সাথে মানুষের জীবনচক্রের একটা সম্পর্ক আছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই উৎসব করার জন্য যে পরিবেশ দরকার … শালবন দরকার… শাল বাগান দরকার, সেটা কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরে আছে। ঢাকার শহুরে পরিবেশে সেটা নেই। এরজন্য জাহাঙ্গীরনগরকে ধন্যবাদ, এই উৎসবকে উদযাপনে তারা জায়গা দিচ্ছে … এবং একই সাথে তাঁরা তাদের নিজেদের প্রাণের উৎসব উপভোগ করার বা আয়োজন করার সুযোগ পেয়েছে।”
বাহা দাঃ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘সাঁওতাল বাহা বঙ্গা’ অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।