জাতীয়
চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সংহতি এবং সারাদেশে অব্যাহত নারী ও শিশু ধর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফের যৌথ বিবৃতি

সাম্প্রতিক সময়ে চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সংহতি এবং সারাদেশে অব্যাহত নারী ও শিশু ধর্ষণ, হত্যা ও নীপিড়নের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ) যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে গভীর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আজ ৯ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতির মাধ্যমে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী ও শিশুর ওপর যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনসহ সাধারণ জনতার নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন চলছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলমান নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ) সংহতি জ্ঞাপন করছে এবং একইসাথে সারাদেশে অব্যাহত নারী ও শিশু ধর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

গত ৫ মার্চ ২০২৫ খ্রিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক নারী শিক্ষার্থীকে পথে গতিরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক কর্মচারী হেনস্তা-হুমকি ও নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার পরে আসামীকে থানার সোপর্দ করা হলেও আদালত অপরাধীকে জামিন দেয়। এছাড়াও সারাদেশে ক্রমবর্ধমান নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা, নিপীড়ন ও ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও সরকারের উদাসীনতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অন্তত ৩৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১০টি ঘটনায় কোনো মামলাই হয়নি। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০-২০২৪ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ১১ হাজার ৭৫৮ জন নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সাম্প্রতিককালের ঘটনাসমূহ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, নারীর ওপর শ্লীলতাহানি ও অনলাইন হুমকি, নারীর ওপর সহিংসতা, মোরাল পুলিশিং ও মব সন্ত্রাস ইস্যুগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে যা এক জন-উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। এসব ঘটনাবলী বাংলাদেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার পরিসংখ্যানের উর্ধ্বগতি ও কঠিন বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত বলে পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফ মনে করে।
রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি স্তরে নারীদের ভূমিকা ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক, মানবিক মর্যাদা সম্পন্ন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে দেশে নারীদের সামাজিক-রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদারকি করার দায়িত্ব সরকারের। বিগত কয়েকদিনের ঘটনাবলী জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখনো সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর বিকাশের পথকে সুগম করে দিতে সক্ষম হয়নি। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং বিচারব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা এসব ঘটনার হার আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এজন্য দেশে অব্যাহত নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ-হত্যার মত ঘটনা বন্ধের জন্যে সরকারকে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন জোর দাবি জানাচ্ছে।