জাতীয়

“আদিবাসী” শব্দ উচ্চারণে বাঁধা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদত্যাগ

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।

বাংলাদেশে চব্বিশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির  মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। এর সাড়ে পাঁচ মাস পর পদ ছাড়লেন তিনি।

গতকাল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’–এর সমাপনী অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে তিনি পদত্যাগপত্র তুলে দেন।

জামিল আহমেদ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখার কথা ছিল। হঠাৎ দর্শক শ্রোতাদের সামনেই তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। শিল্পকলা একাডেমিতে কাজ করা তার পক্ষে আর সম্ভব নয় বলে দর্শক-শ্রোতাদের সামনে  সামনে শিল্পকলা একাডেমির সচিবের (মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন) কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

জামিল আহমেদের পদত্যাগপত্র। ছবি: সংগৃহীত

এই (মুনীর চৌধুরী) নাট্যব্যক্তিত্ব তার শেকড়- বলে থিয়েটারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তিনি বলেন,
যদি আমরা বারবার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানোর পরও একটি সহযোগিতামূলক এবং শান্তিপূর্ণ কাজের পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে না পারি আমলাতান্ত্রিক বাধার কারণে, তাহলে আমি এখানে কীভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারি, তা দেখতে পাচ্ছি না। আমি অনেক ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল যে, আমরা “আদিবাসী” শব্দটি উচ্চারণও করতে পারব না। আমি আজ পদত্যাগ করছি, আমার আন্তরিক ইচ্ছা হলো আদিবাসীরা তাদের ন্যায্য স্বীকৃতি পাবে, তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ হবে এবং তারা এই দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো একই রকম অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।

আমি একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, আমাদের শহীদরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, জাতি সেই আদর্শকে সমুন্নত রাখবে। আমরা সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে হারিয়ে ফেলছি, এবং আমি আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি শিল্পকলা একাডেমি ভবিষ্যতে সেই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে কাজ করবে, যোগ করেন তিনি।

পরবর্তীতে শিল্পকলা একাডেমির সহকর্মীরা তার ঘোষনা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানালে তিনি কয়েকটি বিষয় আগে বাস্তবায়ন করার দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে:

১. মন্ত্রণালয় কোনো ভাবে হস্তক্ষেপ করবে না। পাবলিক প্রেস কনফারেন্সে বলতে হবে। শিল্পকলা একাডেমিকে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে দেবে। যদি শিল্পকলা একাডেমি কোনো আইনগত সমস্যা বা বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়নে যদি প্রয়োজন মনে করে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিবে কিন্তু মন্ত্রণালয় অযাচিত হস্তক্ষেপ করবে না।
২. বরাদ্দ করা হয়েছিলো ১৭৫কোটি টাকা। না দিয়ে করেছিলো ১১০ কোটি টাকার মতো।
২০০কোটি টাকা দিতে হবে।
৩. কোনো ফোকাল পয়েন্ট নাই।
৪. আদিবাসী বলার অধিকার দিতে হবে।

Back to top button