বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি কোন কোম্পানির চৌকিদার?- ছাত্রনেতা রেং ইয়ং ম্রো

“লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাস্তানি বহু আগে থেকেই জারি রয়েছে। এই কোম্পানির মাস্তানি প্রকাশ্যে আসে ২০১৭ সালে। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশে স্থানীয় আদিবাসীদের পূর্বপুরুষদের ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি কোন কোম্পানির চৌকিদার?”
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় আটক রিং রং ম্রো-কে মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ বিকেলে ঢাকাস্থ আদিবাসী ছাত্র-যুব সংগঠনসমূহের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজনে এ প্রশ্ন রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছাত্রনেতা রেং ইয়ং ম্রো।
এসময় তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, চুক্তির ’ঘ’ খন্ডের ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী রাবার ও অন্যান্য প্লান্টেশনের জন্য যে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, সেটি দশ বছরের মধ্যে প্রকল্প গ্রহন না করলে সেসকল জমির বন্দোবস্তি বাতিল বলে গণ্য হবে, সে অনুযায়ী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লিজও অবৈধ।
গতকাল সন্ধ্যায় সিভিল ড্রেসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ১৯৯৬ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক রাবার চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়। লিজ নেওয়ার পর থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখল, ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে হুমকি ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের একমাত্র পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠে।
প্রতিবাদ সমাবেশে ম্রো স্টুডেন্টস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে পায়া ম্রো বলেন, বহু বছর ধরে রাষ্ট্র কখনও নিজে, কখনও বা তার মদদপুষ্ট কর্তৃপক্ষ আদিবাসীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রান্তিকতার খাদে ঠেলে দিচ্ছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ভূমিরক্ষা কমিটির নেতা রিংরং ম্রোকে মিথ্যা মামলায় আটক করা।
হিল উইমেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, “সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। অথচ তারই বাহিনী কালকে রিংরং ম্রোকে গ্রেপ্তারের ওয়ারেন্ট না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে গ্রেপ্তার করেছে। কোথায় গেল সেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা?”
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈসানু মারমা বলেন, রিংরং ম্রোকে গ্রেপ্তার কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের উপর চলমান অপ্রকাশিত নিপীড়নের বহিঃপ্রকাশ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপায়ন খীসা অভিযোগ করেন, ২০২২ সালে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর আমরা বাচ্চাদের জন্য পাঠশালা স্থাপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে সেই এলাকায় যেতে দেওয়া হয় নি। বরঞ্চ পুলিশ বলেছে, আমরা নাকি অবৈধ জায়গায় স্কুল স্থাপনের চেষ্টা করতেছি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল কি শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরাই পাবে? আদিবাসীরা কি সেই ফসল থেকে আজীবন বঞ্চিত থাকবে? তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সংস্কার কমিশনগুলোতে ডজন ডজন কাগজ খরচ করে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে, অথচ সেখানে আমার ম্রো ভাইদের কথা নেই, সেখানে আদিবাসীদের কথা নেই।
অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুর্নিকোভা চাকমা, সুর্মী চাকমা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মনতুষ চাকমা।