বান্দরবানে ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা রিংরং ম্রোকে ‘মিথ্যা’ মামলায় গ্রেফতার

বান্দরবানের লামা উপজেলায় ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা রিংরং ম্রোকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সন্ধ্যায় সরই ইউনিয়নের লাংকম পাড়ায় সিভিল পোশাকে আসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক সাজানো মিথ্যা মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের জমি দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন তিনি। ভূমি রক্ষায় তার সক্রিয় ভূমিকার কারণেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জমি দখল, উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ফসল ধ্বংস এবং লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলা চালানোর মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।
২০২২ ও ২০২৩ সাল থেকেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে একাধিক হামলা ও ভূমি দখলের অভিযোগ উঠে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে লাংকম পাড়া, রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়া ও জয়চন্দ্র কারবারি পাড়ায় ৪০০ একর জুমভূমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রেংয়েন কারবারি পাড়ায় ট্রাকভর্তি লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়, যার মধ্যে তিনটি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। হামলার সময় স্থানীয়দের মারধর করা হয় এবং অন্তত ১০টি ঘর ভাঙচুর করা হয়।স্থানীয়দের পানির উৎসেও বিষ মেশানোর অভিযোগ ওঠে, যা আদিবাসীদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।এখনো লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির এই অপতৎপরতা অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য,বান্দরবানের লামা উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলারদের জন্য সবচেয়ে বেশি জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পার্বত্য চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে এখানে রাবার কোম্পানিগুলোর ভূমি দখল ও আদিবাসীদের উচ্ছেদ এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, “লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সঠিকভাবে তদন্ত না করে বরং আন্দোলনরত নেতাদের দমন করা হচ্ছে। এটি নিপীড়নেরই একটি ধরন।”
রিংরং ম্রোর গ্রেফতারের ঘটনায় আদিবাসী অধিকারকর্মী ও স্থানীয়রা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন এবং ভূমি রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন থেকে যায়—এভাবে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া এবং প্রতিবাদকারীদের দমন-পীড়ন কী চলতেই থাকবে?