শিক্ষাশিল্প ও সংস্কৃতি

জাককানইবির কুয়াশা উৎসবে ‘আদিবাসী জোন’

গান গাইল আদিবাসী ব্যান্ড মাদল

গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি শীতের কুয়াশাকে উদযাপন করতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থবারের মতো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো কুয়াশা উৎসব ১৪৩১। প্রতিবারের মতো এইবারও ছিল ‘আদিবাসী জোন’। গানে গানে মঞ্চ মাতিয়েছে আদিবাসী ব্যান্ড মাদল। 

কেন এই ‘আদিবাসী জোন’? 

উৎসবের সাথে সম্পৃক্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগের পর আইপিনিউজ জানতে পারে, কুয়াশা উৎসবে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ সেই ২০১৯ সালের প্রথম আয়োজন থেকেই। উৎসবের প্রথম আয়োজন উদ্বোধন করা হয় আদিবাসী নৃত্য দিয়ে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের আয়োজনে “আদিবাসী নীড়” নামে একটি স্পেস তৈরী করা হয়। ২০২৩ ও ২০২৫ সালে এই আদিবাসী স্পেসটি “আদিবাসী জোন” হিসেবে নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও যে ৫০ এর অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে তাই-ই জানান দেয় এই আদিবাসী জোন, বাংলাদেশের বৈচিত্র্যকে তুলে নিয়ে আসে উৎসবে যোগদানকারী সকলের সম্মুখে।

আদিবাসী জোনে থাকে মাচাং ঘর, ঘটে আদিবাসীদের জীবন আচরণের প্রতিফলন। প্রতি বছরই বিভিন্ন আঙ্গিকে উৎসবের মধ্যেও বিকাশ ঘটে চিন্তার — আওয়াজ ওঠে প্রতিবাদী কন্ঠের। ২০২২ সালে আদিবাসী জোন সাজানো হয়েছিল কাটা কলাগাছ দিয়ে যা ২০২০ সালে বনবিভাগ কর্তৃক মধুপুরে বাসন্তী রেমার কলা বাগান কেটে দেবারই প্রতিবাদ। প্রতি উৎসবের শেষ দিনে আদিবাসী জোনে আয়োজন করা হয় কীর্তনের। আদিবাসী-বাঙালি সকল শিক্ষার্থী মেতে ওঠে গানে, খোল-কর্তাল-এর আওয়াজে, হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জানান দেয় পুরো দেশকে—- সম্প্রীতির বাংলাদেশ খুব সম্ভব। 

কুয়াশা উৎসবে গান পরিবেশনা করছে আদিবাসী গানের দল “মাদল”

কেমন ছিলো এবারের আয়োজন?

শিশিরের মতো নির্মল হও প্রাণ
কুয়াশায় ভিজে মুক্ত অনির্বাণ

—এই স্লোগানকে সামনে রেখে উদযাপিত হয়েছে এবারের কুয়াশা উৎসব। দুই দিন ব্যাপি আয়োজিত উৎসবে ছিল নানা আয়োজন। প্রথম দিন সকালে প্রথম পর্বে নজরুল বেদীতে রাগ সংগীত এবং পিঠা পুলির উৎসব দিয়ে শুরু হয় কুয়াশা উৎসব, বিকেলে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় সাহিত্য আড্ডা দিয়ে চুরুলিয়া মঞ্চে। সাহিত্য আড্ডার বিষয় ছিল ‘ভয়’ এবং আলোচক ছিলেন গায়ক ও লেখক অরূপ রাহী, লেখক ও শিক্ষক উম্মে ফারহানা, এবং শিক্ষক ও বক্তা রবীন্দ্র কুমার রায়। আলোচনা সভা শেষে নজরুল বেদীতে উদ্বোধনী আগুন প্রজ্জ্বলন ও নজরুল শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়। সন্ধ্যাকালীন বিরতি শেষে জয়ধ্বনি মঞ্চে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, লোকনৃত্য, অভিক নৃ এর সংগীত পরিবেশনা ও ঘাটু গানের মন মজাইছে নামে সাংস্কৃতিক আয়োজন দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিন।

দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্ব শুরু হয় নজরুল বেদীতে যন্ত্র সংগীত ও পিঠাপুলির আসর দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে  নজরুল বেদীতে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতার আসর, আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনা ও ক্যাম্পাসের গানের দলের গান। আজানের বিরতির পর জয়ধ্বনি মঞ্চে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, কানিজ খন্দকার মিতু এবং মাদল এর গান পরিবেশনার পর শেষ হয় কুয়াশা উৎসব। আদিবাসী জোনে প্রতিবারের মতো সমাপনী কীর্তন আয়োজনের কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তা আর হয়নি। 

Back to top button