জাতীয়শিক্ষা

ধামরাইয়ে বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা

ঢাকার ধামরাইয়ে আলাদিনস পার্কে শিক্ষা সফর ও বনভোজনে গিয়ে বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। পার্কের লকার থেকে মোবাইল হারানোর জেরে শুরু হওয়া বাকবিতণ্ডা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। হামলায় নারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শিক্ষার্থীরা পার্কের সুইমিং পুলে গোসলের জন্য গেলে মোবাইল ও মানিব্যাগ লকারে জমা রাখে। তবে ফেরার সময় বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীরা লকারের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের কাছে জানতে চাইলে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বিকেলে শিক্ষার্থীরা পার্ক ত্যাগের সময় পার্কের কর্মচারী ও স্থানীয়রা মিলে তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় লোহার রড, লাঠি ও হাতুড়ি ব্যবহার করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী অন্তত ১০ টি বাস ভাঙচুর করা হয় এবং মোবাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ পার্কের চার কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে একজন ক্যাশিয়ার, একজন নিরাপত্তাকর্মী ও দুইজন রাইড চালক রয়েছেন। মামলায় পার্কের মালিক আলাউদ্দিন, তার ছেলে রিফাত মাহমুদ, ম্যানেজার রনি ও স্টাফ আবুল কালাম আজাদসহ অজ্ঞাত ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান বলেন,‘আমরা শিক্ষার্থীরা পিকনিকে ধামরাইয়ের আলাদীন পার্কে এসেছিলাম। দুপুরে আমরা সুইমিং পুলে গোসলের জন্য নামি। এসময় আমাদের শিক্ষার্থীদের মোবাইল ও মানিব্যাগ লকারে রাখা হয়। কিন্তু গোসল শেষে লকারে গিয়ে কয়েকটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায় নি । এতে আমরা লকারের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীর খোঁজ করি। পরে দেখা যায় একটা মাস্টার চাবি দিয়ে সকল লকারের তালা খুলা যায়। পরে বিকেলে তাদের সঙ্গে কথা বললে পার্কের স্টাফরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করে।

আলাদিনস পার্কের মালিক আলাউদ্দিন দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীরাই প্রথমে ভাঙচুর করেছে, যার ফলে সংঘর্ষ বাধে।

এ বিষয়ে বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষক নাসির আফজাল বলেন, সকাল ১০টার দিকে আমরা প্রায় ৬৫০ জন এসেছিলাম ১২টি বাসে করে। বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাটা ঘটে। কয়েকটি মোবাইল খোয়া যায়। এনিয়ে কথা কাটাকাটি। তখন বাচ্চারা বলেছে, মোবাইল ছাড়া বাসায় গেলে সমস্যা, যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তখন আমরা বললাম, তারা যদি না দেয় আমরা দেখবো। এরইমধ্যে তারা (শিক্ষার্থীরা) ভাংচুর করেছে। এটি দেখে হয়তো আশপাশের লোকজন ডেকেছে। তারাও ভাংচুর করেছে। এতে আহত ৬ জনকে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। অনেকে সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। আমরা মামলা করবো বলেন তিনি।

আরেক শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রায় ৬০জনের মতো শিক্ষার্থীকে সন্ত্রাসীরা মেরে আহত করেছে। অনেকের মাথা ফেটে গেছে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, বেড়াতে আসা শিক্ষার্থীরা বিনোদন কেন্দ্রটির লকারে তাদের মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রেখে গোসলে নামেন। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী লকার থেকে মোবাইল হারানোর অভিযোগ তুলেন। এ নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রর কর্তৃপক্ষের সাথে শিক্ষার্থীদের বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

মামলার বাদী বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষক মো. আব্দুল হাই মজুমদার বলেন, “আলাদীন্স পার্কের লোকজন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তারা কাঠের লাঠি ও লোহার রড এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালালে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়।”

তিনি আরো বলেন, “আহতদের ধামরাই ও সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এইচ এসসি পরীক্ষার্থী জাকারিয়া সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেলে এখনো ভর্তি রয়েছে। সে হাতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাতকে আজকে এনাম মেডিকেল থেকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। সে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে।”

Back to top button