আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে সেটেলার বাঙালি ও মৌলবাদীদের হামলায় ৭ জন গুরুতর আহত এবং কমপক্ষে ১৫ জন আহত।
গত ১২ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামে জড়ো হওয়া সেটেলার বাঙালি এবং তাদের পেছনে থাকা মৌলবাদী গোষ্ঠীর এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচীর পর এনসিটিবি নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণের বইয়ের মলাট থেকে ‘আদিবাসী‘ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিটির প্রচ্ছদ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এর পরপরই ঢাকায় পড়াশুনারত আদিবাসী শিক্ষার্থী এবং জনতার সম্মিলিত প্লাটফর্ম ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’ পুনরায় পাঠ্যপুস্তকে এই গ্রাফিতির প্রচ্ছদ বহাল রাখার দাবিতে আজ ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ইংরেজী, রোজ বুধবার এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচীর ডাক দেয়। এর পরপরই স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামে সেটলার বাঙালি এবং তাদের পেছনে থাকা মৌলবাদী গোষ্ঠীও একই জায়গায় এনসিটিবি ঘেরাও এর কর্মসূচী ঘোষণা করে।
এদিকে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হয় এবং সেখানে সমাবেশে মিলিত হয়। উক্ত সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দনওয়াই ম্রো-র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাগাছাসের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি ডন জেত্রা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের ঢাকা মহানগরের সভাপতি নুমংপ্রু মারমা। সেখান থেকে শতাধিক আদিবাসী শিক্ষার্থী এবং প্রগতিশীল অনেক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও মানবাধিকার কর্মীরা মিছিল নিয়ে মতিঝিলে অবস্থিত এনসিটিবির দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রদক্ষিণ করে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা মোড় পেরিয়ে মতিঝিলে অবস্থিত এনসিটিবি ভবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
অগ্রসরমান মিছিল মতিঝিল মেট্রো রেলস্টেশনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পরে মিছিলটি, আগে থেকেই জাতীয় পতাকা বাঁধা স্ট্যাম্প, লাঠি-সোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওঁতপেতে থাকা স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামে জড়ো হওয়া সেটলার বাঙালি এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে মিছিলটি সেখানে কিছুক্ষণ স্তিমিত হয়ে স্লোগানরত অবস্থায় থাকা সময়ে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামে জড়ো হওয়া সেটলার বাঙালি এবং পেছনে থাকা মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিতে হামলে পড়ে। এতে প্রথমেই মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর আহত হন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাবেক সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামায়। পরে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা স্লোগানরত অবস্থায় সেখানেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। উক্ত সমাবেশ শুরু না করতেই সন্ত্রাসীরা মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার, আব্দুল মালেক, মোহাম্মদ গোলাম আলী নাঈম এর নেতৃত্বে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প, লোহার রড এবং অন্যান্য দেশী অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ে। এতে কমপক্ষে ৪ জন গুরুতর আহত হন এবং ১৫ জনের অধিক আহত হন। আহতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীও রয়েছেন।
গুরুতর আহতরা হলেন-
১.অনন্ত বিকাশ ধামায়, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম। ২. ধন জেত্রা, সভাপতি, ঢাকা মহানগর শাখা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন, ৩. জুয়েল মারাক, সাংবাদিক, ডিবিসি নিউজ, ৪. রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, কেন্দ্রীয় সদস্য, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিক্ষার্থী ঢাবি, ৫. টনি ম্যাথিউ চিরান, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম, ৬. ইসাবা শুহরাত, মানবাধিকার কর্মী, ৭. ফুটন্ত চাকমা, শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে আহতরা হলেন-
১.দনওয়াই ম্রো , শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২. রেং ইয়ং ম্রো, সহ-সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ৩. স্নেহলাল তঞ্চঙ্গ্যা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ৪. শান্তা চাকমা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ৫. সুস্মী চাকমা, শিক্ষার্থী, ঢাবি, ৬. এনজেল চাকমা, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৬. সুশান্ত চাকমা, শিক্ষার্থী ৭. মিশেল ত্রিপুরা, শিক্ষার্থী, ৮. মলয় বিকাশ ত্রিপুরা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ৯. রাহি নায়াব, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১০. ববি বিশ্বাস, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়াও অজ্ঞাত আরো অনেকেই আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে এবং আহতদেরকে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলসহ অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উক্ত হামলার প্রতিবাদে এবং ঘটনার জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আজ সন্ধ্যা ৬ টায় বিক্ষোভ মিছিল, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে সারা দেশে বিক্ষোভ এবং ১৭ জানুযারি এ ঘটনার বিচার ও আদিবাসী শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও এর কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র ও জনতা।
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে ছাত্রনেতা অলিক মৃ এবং জগদীশ চাকমা বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজপথে থাকবো এবং উক্ত কর্মসূচীগুলো সফল করার জন্য আপামর আদিবাসী ছাত্র-জনতা এবং প্রগতিশীল সকল ব্যক্তি ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সংহতি জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।