কর্পোরেট শক্তি নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক চুক্তির উন্নয়ন
সোহেল হাজং, জেনেভা থেকে: জাতিসংঘের জেনেভা কার্যালয়ে গত ১৬-২০ ডিসেম্বর তারিখে মানবাধিকার কাউন্সিলের আওতায় অনুষ্ঠিত হল ট্রান্সন্যাশনাল কর্পোরেশন এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক এন্টারপ্রাইজের মানবাধিকার বিষয়ে ওপেন-এন্ডেড আন্তঃসরকারি ওয়ার্কিং গ্রুপ-এর ১০তম অধিবেশন। জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্রের ডেলিগেটদের পাশাপাশি, বিজনেস ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। আমার সুযোগ হয়েছিল সিভিল সোসাইটি সংগঠনের প্রতিনিধি হয়ে সেখানে অংশ নেওয়ার।
জেনেভার কর্ণাভিনের একটি হোটেল থেকে প্রতিদিন সকালে জাতিসংঘের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে যখন বের হই তখন এখানে তাপমাত্রা থাকে মাত্র মাইনাস এক বা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে ঠাণ্ডা কিন্তু এই তীব্র শীত যেন এখানে কিছুই না। এখানকার মানুষের নিয়মিত কোনো কাজে আটকাচ্ছে না। সকালে এমন একটি ঠাণ্ডার মধ্য দিয়ে এসে, মনোযোগ দিতে হয় সারাদিন একটি বিজনেস কর্পোরেশনের একাউন্টেবিলিটির মতো একটি হট বিষয়ে, পুরো সপ্তাহ জুড়ে। তবু বলা যায়, সবই ভালো হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠার কাজে অংশ নেওয়াটা অনেক গুরুত্বের।
বিজনেস কর্পোরেটদের যখন ভয়াবহ কার্যক্রমে বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষ ব্যাপকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে তখন সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠানগুলো জাতিসংঘ ও তার সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় এই কর্পোরেট দায়মুক্তি বন্ধ করার প্রয়াসে একটি লিগ্যাল বাইন্ডিং ইন্সট্রুমেন্ট বা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক পলিসি গঠন করা যেন বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তারা দায়ী থাকে এবং তা লাঘবে কর্পোরেশনগুলিকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য হল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে কর্পোরেটপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি জবাবদিহিতামূলক কাঠামোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা যেন তারা বেআইনি ব্যবসায়িক কার্যকলাপে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকে এবং সেসাথে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও সম্প্রদায়ের প্রতি ন্যায়বিচার, প্রতিকার এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখে।
এই আন্তর্জাতিক আইনের খসড়া চলমান। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো মিলে এই আইনটি তৈরি করছে। সেখানে সিভিল সোসাইটি সংগঠনরগুলোরও সুযোগ থাকছে আইনের খসড়া, প্রক্রিয়াতে মতামত ও সুপারিশ প্রদানের। এই গুরুত্বপূর্ণ আইনের কোন আর্টিকেল কিভাবে রাখলে ভালো হবে, এসব সুপারিশের পাশাপাশি কোন দেশের মতামতকে তারা সমর্থন দিচ্ছে বা কোনটির প্রতিবাদ করছে, সেটাও তারা সরাসরি এই অধিবেশনে ফ্লোর নিয়ে ইনটারভেন করতে পারছে। যেহেতু আদিবাসী জনগণ ও তাদের সম্প্রদায়, কৃষক, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী লোকজন ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলো বিজনেস কর্পোরেট বা কোম্পানী দ্বারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সেজন্য আমাদের নজর ও ইন্টারভেন ছিল তাদের অধিকারগুলো যেন এই আইনে সুরক্ষিত থাকে।
আমরা কর্পোরেট শক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি চুক্তির এক ধাপ কাছাকাছি চলে এসেছি এ অধিবেশনের মধ্য দিয়ে। আশা করি ভালো ফল পাব। এরপরও দেখা যাক, অপেক্ষা করি, চূড়ান্ত আইনের জন্য।