পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার ৩১তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত, নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা
গতকাল ২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলি স্লোগানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির শহীদ মুনির চৌধুরি মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও ৩১তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি চন্দ্রিকা চাকমা। কাউন্সিল অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সহসাধারণ সম্পাদক অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা এবং সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা।
কাউন্সিলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পিসিপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পিসিপি, ঢাকা মহানগর শাখা কমিটির সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন পিসিপি, ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য রিয়া চাকমা। প্রতিনিধির বক্তব্য রাখেন পিসিপি, সাত কলেজ শাখার আহবায়ক কমিটির সদস্য কনেজ চাকমা ও পিসিপি, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মনতুষ চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ছাত্ররা সবচেয়ে অগ্রগামী। আপনারা গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় অবস্থান করছেন। জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ক্ষেত্রে আপনাদেরই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। তাই বেশী পড়াশোনা করতে হবে। পার্টিকে আরো বেশী জানতে হবে। আপনারা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কর্মী। আপনাদের অনেক সাহস, অভিজ্ঞতা আছে। তাই আপোষ না করে বৃহত্তর আন্দোলনে অধিকতর সামিল হতে হবে। আপনাদের মধ্যে দোদুল্যমানতা থাকা উচিত নয় । আপনারা সবচেয়ে অগ্রগামী। তাই আপনারা ভালোই বুঝবেন জাতির স্বার্থে আপনাদের কি করা উচিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, রাজনীতিতে সাধারণ বা নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না। যারা আজ নিরপেক্ষতার নামে বিভিন্ন কর্মকান্ড করছে তারা শুধুমাত্র জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। আপনাদের অবশ্যই জনসংহতি সমিতি যখন গেরিলা যুদ্ধে ছিলো সেই সময়গুলো, এর আগে ৫০ এর দশক, ৬০,৭০,৮০ ও ৯০ এর দশকগুলোর আন্দোলনের ধারাগুলো পাঠ করতে হবে। আমরা নিরপেক্ষ দাবি করে বাইরের আন্দোলন আমদানি করতে পারি না। তারা বলে থাকে যে জনসংহতি সমিতি নাকি শেখ হাসিনার দোসর। আমরা যদি শেখ হাসিনার দোসর হই, তাইলে তার আমলে আমাদের কর্মীদের এত এত মামলার শিকার হতে হল কেন? ইউপিডিএফ কি করেছে? ৯৭ পর থেকে ২০২৪ সাল হয়ে গেলো। কোন আন্দোলনটা ইউপিডিএফ করতে পেরেছে? জনসংহতি সমিতি রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে সরকারকে চুক্তিতে সাক্ষর করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু ইউপিডিএফ এত বছর জুম্ম জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা ছাড়া কোন অধিকারটা আদায় করতে পেরেছে? তারা সবসময় বলে জনসংহতি জাতীয় বেঈমান, ব জিয়ে চুক্তি যা তা বলে আবার বাইরে ঐক্যের কথা বলে। সুতরাং আপনাদের বুঝতে হবে তারা শুধুমাত্র জুম্ম জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং আন্দোলনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা তার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, প্রত্যেক মানুষের খেয়ে পড়ে বাঁচার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারটাকে নিশ্চিত ও সমুন্নত রাখার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়। মানুষ হিসেবে পাহাড়ের মানুষদের ভাবতে হবে তারা কি চায়? অর্থ, ক্ষমতা নাকি মানুষের মতো বেচেঁ থাকার অধিকার। অধিকার হলো এমন একটা ব্যবস্থা যেটি একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশ যেখানে তার মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত হবে। আমরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে জুম্ম জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি জুম্ম জনগণের ঐক্য ও সংহতির ফসল।
আজকের বাজারে ঐক্য শব্দ নিয়ে নানামুখী রাজনীতিকরণ চলছে। মনে হচ্ছে তারাই যেন ঐক্যের উদ্ভাবক। কিন্তু আমরা তো এক আছি। আমাদের একতা শুরু হয়েছিল মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে কাপ্তাই বাঁধ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে। কিন্তু তখনও একটি পক্ষ পাকিস্তান সরকারের পক্ষে ছিলো এবং এম এন লারমার কাপ্তাই বাঁধ বিরোধী আন্দোলনকে বাধা দিয়েছিলো। আমরা আজও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেরকম বিভক্তি দেখতে পাই। বিভক্তির শুরুটা হয়েছে জুম্ম জনগণের রক্তের মধ্য দিয়ে অর্জন করা অধিকারের দলিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। তারা শুধু চুক্তিকে বিরোধিতায় করেনি, চুক্তির নাম উচ্চারণকারী ও চুক্তি পক্ষের কর্মী ও সমর্থকদের সমানতালে হত্যা করে চলেছিল। আজ তারা বলছে ঐক্য চাই । এই ঐক্যের ভাওতাবাজি প্রথমবার না। আগেও অনেক ঐক্য হয়েছিলো। কিন্তু তারাই সবসময় ঐক্য নষ্ট করেছে। তা স্বত্বেও পার্টি সর্বোচ্চ সংযম রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে বারবার ঐক্যের ডাক দিয়েছে। তারা সেই ডাকে সাড়া দেয়নি।
তিনি ছাত্র সমাজকে কারোর অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে প্রভাবিত না হয়ে পার্টির নেতৃত্ব, পার্টির আন্দোলনের নীতি ও কৌশলের উপর আস্থা রাখার আহবান জানান। সেই সাথে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহবান জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি চন্দ্রিকা চাকমা তার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষও আশা করেছিলো যে আমাদেরও ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা হয়ে উঠেনি। এখান থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে যে আমাদের ভাগ্য আমাদেরই পরিবর্তন করতে হবে। সেজন্য আমাদের নিরলসভাবে সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।
পিসিপির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, পিসিপি যুগে যুগে যে লড়াই সংগ্রাম করে আসছে সেভাবেই জুম্ম জনগনের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যেকোন লড়াই সংগ্রাম আমাদের জারি রাখতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে জগদীশ চাকমাকে সভাপতি, শৈসানু মারমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং হ্লামংচিং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখা, মনতুষ চাকমাকে সভাপতি, শান্তিময় চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক, অতীশ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, অভি চাকমাকে সভাপতি, অজিত চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক, ভরত চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মিরপুর শাখা, জেমস ওয়াট চাকমাকে সভাপতি, সুজন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক, অনুরাজ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ঢাকা পলিটেকনিক শাখা, কনেজ চাকমাকে সভাপতি, সুনক্ষত্র চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক, রাসেল ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ঢাবি অধিভূক্ত সাত কলেজ শাখা গঠন করা হয়।
পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রেংইয়ং ম্রো পিসিপি, মিরপুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। পিসিপির ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখা ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখাকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সতেজ চাকমা। পিসিপি, ঢাকা মহানগর শাখার ৩১তম কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমা।