আন্তর্জাতিক

পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় লন্ডনে বিক্ষোভ

আইপিনিউজ ডেস্ক (আন্তর্জাতিক): পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক সময়ের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে Jumma People’s Network UK (JPNUK), Amnesty International, Survival International, এবং Friends of CHT – এর সহযোগিতায় গত ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

Jumma People’s Network UK (JPNUK)-এর প্রতিনিধি উজ্জয়িনী রায় তার বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপড় বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানান এবং আদিবাসী জুম্মা সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

Survival International এর সিনিয়র রিসার্চ অফিসার সোফি গ্রিগ বিক্ষোভে উপস্থিত হতে না পারলেও একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান।  তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের সহিংসতা পার্বত্য চুক্তি মোতবেক পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং জুম্মদের কাছ থেকে অবৈধভাবে দখল করা জমি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বাংলাদেশের সরকার ব্যর্থতার পরিচায়ক। কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও ব্যর্থতা, কারণ তারা বাংলাদেশের সরকারকে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এবং সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে চাপ প্রয়োগ করেননি।

তার লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, আমরা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে এই সহিংসতার চক্র বন্ধ করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সামরিক ক্যাম্পগুলো সরিয়ে ফেলা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করুক।

Amnesty International, UK -তে বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর পদে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জেরেমি অ্যালেন বান্দরবানে বসবাস এবং কাজ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, আমি সেখানে ভূমি দখল ও আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংসতার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। তিনি আরও বলেন, Amnesty International বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় তারা যেন অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে।”

মি. অ্যালেন আরও উল্লেখ করেন, আগামী ২৪শে অক্টোবর হাউস অফ কমন্স-এ সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তবে, আলোচনার বিষয়বস্তুতে সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমি তাদের কাছে এ বিষয়টি অবগত করেছি এবং আমাদের পিটিশনটি পাঠিয়েছি।

বাংলাদেশে বংশোদ্ভূত সমাজবিজ্ঞানী ড. রুমানা হাশেম, যিনি তার পিএইচডি গবেষণায় চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলে সংঘাতপূর্ব ও সংঘাত-পরবর্তী সময়ে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে কাজ করেছেন, তিনি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে যথাক্রমে ১লা ও ১৮ই অক্টোবর আদিবাসী জুম্মা নারীদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রতিক ধর্ষণের খবর শুনে ভীষণ শোকাহত হন। তিনি উল্লেখ করেন, তার গবেষণার ফলাফল দেখায় যে, সামরিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, আদিবাসী জুম্ম জনগণকে যেভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তা অত্যন্ত অমানবিক যেখানে তারা এই দেশে আদিকাল থেকেই বসবাস করে আসছে।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে, উজ্জয়িনী রায়, জেরেমি অ্যালেন, ধর্মপ্রিয়া শ্রামণ, ওমবাশি গ্রেচ ক্যাটো এবং ভ্যালেন্টাইন হার্ডিং ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের উদ্দেশ্যে লিখিত পিটিশন জমা দেন।

Back to top button