জাতীয়

বান্দরবানে এক জুম্ম কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে পিসিপি ও এইচডব্লিউএফের যৌথ বিবৃতি

বান্দরবান জেলার অন্তর্গত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার এক গ্রামে সেটলার বাঙালী কর্তৃক এক জুম্ম কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার ও যথাযথ বিচারের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমার স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৭ অক্টোবর ২০২৪ সন্ধ্যায় বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার এক গ্রামে সেটেলার বাঙালি  মোঃ  সেলিম (২৩) ও মতিউর রহমান (২৫) কর্তৃক এক জুম্ম কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ) তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ ঘটিকার সময় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২ নং বাইশারী ইউপির ছাদু অং পাড়ার খালে ভুক্তভোগী কিশোরী হাত—পা ধোঁয়ার জন্য সিঁড়ি হয়ে খালে যায়, তখন উক্ত দুই সেটেলার বাঙালি ভুক্তভোগী কিশোরীকে অনুসরণ করে সেখানে যায় এবং সিঁড়ির উপর বসে ঘাপতি মেরে বসে। এক পর্যায়ে সেটেলার বাঙালি মোঃ সেলিম (২৩) ও মতিউর রহমান (২৫) ভুক্তভোগী কিশোরীর হাত ধরে জোরপূর্বক টেনে খালের অপর পাড়ের বাঁশ ঝাঁড়ে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

পারিবারিক সূত্র আরও জানায়, গতকাল ১৭ অক্টোবর বৌদ্ধদের ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা থাকার কারণে ভুক্তভোগী কিশোরীর মা—বাবা ছাদু অং পাড়া বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় কাজে যান এবং পাড়ায় লোকজনও ফানুস বানানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিল। ভুক্তভোগী কিশোরী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায়  অনেক্ষণ খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীকে বাঁশঝাঁড়ের মধ্যে কান্নারত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনার পরবর্তীতে গতকাল সন্ধ্যায় এলাকার লোকজন স্থানীয় বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রে খবর দেয় এবং ভুক্তভোগী কিশোরীর বড় ভাই বিবাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর ধর্ষক মোঃ সেলিম (২৩) ও মতিউর রহমান (২৫) এর বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। পুলিশ গতকাল ধর্ষক মতিউর রহমান(২৫) কে ঘটনাস্থলে এসে আটক করে হেফাজতে রাখলেও আরেক ধর্ষক মোঃ সেলিম(২৩) ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত জুম্ম আদিবাসী নারী ও শিশুদের ওপর ধর্ষণ, নিপীড়ন, অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। যার বেশির ভাগ ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে, দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসীদের ওপর দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন—শোষণ জারি থাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওযার কারণে জুম্মরা আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তাছাড়া দেশের বিচার ও আইনী ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জুম্ম নারী ও শিশুদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সঠিক বিচার হয় না।

উক্ত জুম্ম কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় চিহ্নিত ধর্ষক মোঃ সেলিম ও মতিউর রহমানকে যথাযথ আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ পাহাড় ও সমতলে আদিবাসী নারী ও শিশুদের ওপর ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া নিপীড়নমূলক ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে।

Back to top button