পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের বিবৃতি
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম এবং আদিবাসী বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক একটি বিবৃতিতে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসী জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার রিপোর্ট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্থায়ী ফোরাম তার অধিবেশন চলাকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠী এবং বাঙালি সেটেলারদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিষয়ে অবগত হয়েছে, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের উদ্বেগজনক ঘটনার মাধ্যমে চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক এই সহিংসতা দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী জুম্ম জনগণের প্রতি বৈষম্য ও প্রান্তিকীকরণের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছে, যারা দশকের পর দশক ধরে নিজ অঞ্চল থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং ক্রমবর্ধমান সামরিকীকরণের শিকার।
স্থায়ী ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদনকারী বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুম্ম জনগণের বিরুদ্ধে হওয়া সহিংস এবং নির্বিচার আক্রমণ থেকে তাদের রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, সহিংসতার অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় এনে দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্থায়ী ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদক ব্যবসায় ও মানবাধিকার বিষয়ক নির্দেশিকা নীতিমালা অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতি আদিবাসী জুম্ম জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া রোধে তারা যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ আহ্বান জানান।
ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদক বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন ও আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রের বিধানগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বিশেষত ধারা ৭-এর অধীনে, যেখানে বলা হয়েছে: “আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর তাদের স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বাধীনভাবে, শান্তিতে ও নিরাপদভাবে জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে এবং জোরপূর্বক একগোষ্ঠীর শিশুদের অন্য কোন গোষ্ঠীতে সরিয়ে নেওয়াসহ গণহত্যা অথবা অন্য কোন প্রকার সহিংস কর্মকান্ডের শিকার করা যাবে না।”
ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদনকারী বিবৃতিতে আরও আহ্বান জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানায়, যাতে তারা উক্ত অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্ত এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে এবং সরকারের সাথে সমন্বয় করে, আদিবাসী জনগণের প্রতিনিধি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সাথে মিলে পরিস্থিতি নিরবিচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এর উদ্দেশ্য হবে আদিবাসী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং তাদের সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত অধিকারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করা।
স্থায়ী ফোরাম এবং বিশেষ প্রতিবেদনকারী বিবৃতিতে তাদের নিজ নিজ ম্যান্ডেটের আওতায় বিশেষভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সহিংসতা প্রতিরোধ, কমিউনিটির মধ্যে আস্থা ও সমন্বয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বাধীন পরামর্শ প্রদান করার প্রস্তাব দিয়েছেন ।