জাতীয়

পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান তিন সংস্থার

আইপিনিউজ ডেস্ক (ঢাকা): এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপলস প্যাক্ট (AIPP), পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (CHTC) এবং ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক গ্রুপ ফর ইনডিজেনাস অ্যাফেয়ার্স (IWGIA) পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের উপর চলমান সহিংসতা ও হামলার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পার্বত্য চট্টগ্রাম)। গত ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় এবং ২০ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে বাঙালি সেটলারদের সাম্প্রদায়িক হামলার ফলে চারজন আদিবাসী (একজন রাঙামাটিতে এবং তিনজন খাগড়াছড়িতে) নিহত হয়েছে এবং ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আদিবাসীদের অনেক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে বৌদ্ধ উপাসনালয়। একজন মোটরবাইক চোরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়।

৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার তিনটি অধিকার সংস্থার দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১ অক্টোবর খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মো: সোহেল রানা কর্তৃক সে স্কুলের ৭ম শ্রেণীর আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায় যে, অভিযুক্ত শিক্ষক, সোহেল রানা, তার এক কিশোরী আদিবাসী ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষক কোয়ার্টারে নিয়ে যায়, এবং সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। ছাত্রীটির বন্ধুরা ধর্ষক সোহেল রানাকে ঐ ছাত্রীটিকে তার বাসায় নিয়ে যেতে দেখে এবং বিষয়টি সবার সাথে শেয়ার করে। খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং পাঁচজন ছাত্রী কিশোরী ছাত্রীকে উদ্ধার করে এবং পরে সে রানার দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার সাক্ষ্য দেয়। পরবর্তীতে মেডিক্যাল টেস্ট করার পরও ধর্ষণের সত্যতা মিলে। খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। ধর্ষক সোহেল রানা তখন অধ্যক্ষের অফিসে ছিলেন। এই সময়ে উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করে। সেখানে উপস্থিত পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। পরে ধর্ষক রানা পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা খায় এবং মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটলাররা আবারো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সৃষ্টি করে। ইতিমধ্যে বিকেল ৩ ঘটিকায় স্থানীয় প্রশাসন চার বা ততোধিক ব্যক্তির বেআইনি সমাবেশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে  (ধারা ১৪৪ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮)। কিন্তু বিভিন্নজনের সাক্ষ্য এবং সামাজিক মাধ্যমে লাইভ ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, সেটলার বাঙালীরা নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতে আদিবাসীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘড়বাড়ির উপর ধ্বংস তাণ্ডবলীলা সন্ধ্যা ৭.৩০ পর্যন্ত অব্যাহত রাখে। এখানে নিরাপত্তাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ কারণ তারা এ ঘটনা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলতে দিয়েছিল। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পানখাইয়া পাড়া এলাকাটি যেটি খাগড়াছড়ি সেনানিবাস থেকে আধা কিলোমিটারের কম দূরে অবস্থিত ছিল।

বিবৃতিতে বলা হয়, মিডিয়া রিপোর্টগুলির তথ্যমতে ধর্ষক সোহেল রানার প্রতি জনতার এত ক্ষোভের কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার যৌন অসদাচরণের দীর্ঘ ইতিহাস যার মধ্যে খাগড়াছড়িতে একই স্কুলের অন্য এক আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। যেকোন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড-ই অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু একজন ধর্ষকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা আদিবাসী নারীদের উপড় চলমান সহিংসতাগুলোকে দায়মুক্তি দেয়। কমিশন আরো বলে, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন এই অঞ্চলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেটলারদের দ্বারা ৮ বছর বয়সী একটি শিশুসহ একটি গণধর্ষণ ও দুইজন আদিবাসী নারীকে ধর্ষণচেষ্টা করা হয় যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ নয়। সমগ্র বাংলাদেশে উদ্বেগজনকভাবে এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (HRSS) এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই ২৮ জন লোক গণপিটুনির দ্বারা নিহত হয়েছে। কিন্তু দেশের অন্য কোনো অংশে পার্বত্য চট্টগ্রামের মত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।

এছাড়াও গত ১৮ সেপ্টেম্বর, যখন খাগড়াছড়িতে জনতার হাতে একজন মোটরবাইক চোরকে হত্যা করা হয়েছিল, তখনও আদিবাসীদের উপর সেটলাররা সাম্প্রদায়িক হামলা করেছিল। অন্যদিকে দেশের দুটি স্বনামধণ্য বিশ্ববিদ্যালয়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও জনতার সহিংসতায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছিল। কিন্তু, ওইসব স্থানে কোনো প্রতিশোধমূলক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে, সেটলাররা বারবার এই ধরনের ঘটনাগুলিকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রকাশ করার জন্য এবং অশান্তি সৃষ্টি করার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে এবং যেটাকে  প্রায় ১০০% বাঙালী জনগোষ্ঠী দ্বারা গঠিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী সমর্থন দেয়।

IWGIA এবং CHTC এর যৌথ বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, সেটলাররা পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতিকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে যখন থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই অঞ্চলের আদিবাসীদের “আদিবাসী” বলে উল্লেখ করেছেন। সেটলাররা এই শব্দটি তীব্র বিরোধিতা করেছিল। শুধু তাই নয়, বান্দরবানে ৩১শে আগস্ট এক গণসমাবেশের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের (PCNP) নেতা কাজী মুজিবুর রহমান ড. ইউনুসকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে দাবি করেন, বাঙালিরাই পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র আদিবাসী এবং পাহাড়ীরা বহিরাগত। তিনি আরও ঘোষণা করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম “আল্লাহু আকবর” এবং “নারা-ই-তাকবীর”-এর ভূমিতে পরিণত হবে এবং এই অঞ্চলের পাহাড়ীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। AIPP, IWGIA এবং CHTC বিশ্বাস করে যে, পাহাড়ী জুম্মদের উপড় সেটলারদের চলমান সহিংসতা এটির সাথে সম্পর্কযুক্ত।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় সহিংসতার কারণ খতিয়ে দেখতে সরকার সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও AIPP, IWGIA এবং CHTC এই কমিটি ন্যায়বিচার আনবে বলে আস্থা রাখতে পারে না। কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর প্রতিটি বড় হামলার পর একই ধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছে, এবং কেউই ন্যায়বিচার প্রদান করেনি বা তাদের ফলাফল প্রকাশ করেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, এই কমিটির দায়বদ্ধতা ও ক্ষমতা অপর্যাপ্ত ছিল, এবং কমিটিগুলি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ ছিল না, যেমনটি এ কমিটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

AIPP, IWGIA এবং CHTC সাক্ষ্য পেয়েছে যে, রাঙামাটিতে সেনা সদস্যরা আদিবাসীদের মোবাইল ফোন চেক করছে এবং সেটলারদের হামলার ফুটেজ মুছে দিয়েছে। এ ধরনের কোনো ফুটেজ পেলে তারা জুম্মদের মারধর করছে। উপরন্তু, এটি গভীরভাবে উদ্বেগের বিষয় যে অনেক মূলধারার বাঙালি সেটলারদের পাশে থেকে জুম্মদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করছে এবং মূলধারা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা প্রচারণা ছড়াচ্ছে। মিথ্যায় ভরা পোস্ট এবং ভিডিওগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে যার ফলে পাহাড়ী আদিবাসীদের প্রতি দেশব্যাপী ঘৃণার উদ্রেক সৃষ্টি হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। শুধু তাই নয় সেটলারদের আক্রমণের সময় আদিবাসীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে করা লাইভ ভিডিওগুলি রিপোর্ট করা হচ্ছে এবং সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজন আদিবাসী ব্লগার এবং পেইজ যেগুলো থেকে আদিবাসীদের উপড় আক্রমণের ভিডিওগুলো পোস্ট করা হয়েছিল সেগুলিও সাইবার-আক্রমণকারীদের দ্বারা রিপোর্ট করা হচ্ছে এবং তাদের অ্যাকাউন্টগুলি হ্যাক করা হয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক।

AIPP, IWGIA এবং CHTC পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একজন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে জরুরিভাবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে:

১. পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সহিংসতার পেছনের কারণগুলির জানার জন্য তদন্ত করতে হবে। এবং এ লক্ষ্যে স্বাধীনভাবে তদন্তের জন্য অবিলম্বে জাতিসংঘ এবং তার স্টেকহোল্ডারদেরকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে যেমনটা করা হয়েছিলো ২০২৪ এর জুলাই ১ এবং আগস্ট ১৫ তারিখে।

২. জাতিসংঘের এই ধরনের তদন্ত মুলতবি থাকা অবস্থায়, সরকারের উচিত Commission of Act – 1956 অনুযায়ী একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষে এবং পর্যাপ্ত ক্ষমতাপ্রাপ্ত তদন্ত কমিশন প্রতিষ্ঠা করা। এ কমিশন সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে তলব করার, সংশ্লিষ্ট সমস্থ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করার, প্রয়োজনীয় নথিপত্রগুলি পরীক্ষা করার ক্ষমতা রাখবে এবং ফৌজদারী কার্যের সুবিধার্তে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা করবে। চট্টগ্রামের একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে সরকার যে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, তার মধ্যে ছয়জন নিম্নস্তরের বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের উপরে উল্লেখিত কোনো ক্ষমতা নেই। তদুপরি, এ কমিটি স্বাধীন, বা নিরপেক্ষ বা পর্যাপ্ত ক্ষমতা নিয়ে কাজ করার জন্য উপযুক্ত নয়। এই কমিটির সদস্যদের পদমর্যাদা পার্বত্য অঞ্চলে নিযুক্ত অনেক সামরিক কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক নিচে, এবং তাই এটা প্রায় নিশ্চিত যে এই কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে আনতে এবং তাদের আচরণ খতিয়ে দেখতে পারবে না।

৩. যারা আক্রমণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও স্বচ্ছ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ঘিরে দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে সরকারকে অবশ্যই সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। AIPP, IWGIA এবং CHTC বিচারবহির্ভূত মব কিলিংয়ের বিষয়েও যথাযথ বিচার করতে হবে।

 

৪. আদিবাসী নারী ও মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শক্তিশালী সুরক্ষা আইনী প্রয়োগ করতে হবে এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার অপরাধীদের জবাবদিহিতায় আওতায় আনতে হবে।

৫. ১৪৪ ধারার সময়ও সহিংসতা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা তদন্ত করুন এবং আদিবাসীদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করতে ব্যর্থতার জন্য নিরাপত্তাবাহিনীদের জবাবদিহীতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

৬. সরকারের উচিত অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিক প্রশাসন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য নির্বাহী আদেশ ‘অপারেশন উত্তোরন’ প্রত্যাহার করা। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে মনোনীত ছয়টি স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি বাদে সমস্ত অস্থায়ী সামরিক ক্যাম্প গুটিয়ে নিতে হবে।

৭. পার্বত্য চট্টগ্রামে, নিরাপত্তা বাহিনী সম্পূর্ণরূপে বাঙালি সম্প্রদায়ের কর্মীদের দ্বারা গঠিত, যা প্রায়ই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কঠিন করে তোলে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে এবং আস্থা পুনরুদ্ধার করতে, সরকারের উচিত এই অঞ্চলে একটি জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা, যাতে আদিবাসী এবং বাঙালি উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেমনটি ১৯৮৯ সালের পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ১৯,২০ এবং ২১ ধারায় স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে।। এই মিশ্র পুলিশ ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার প্রতিরোধ করবে এবং পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করবে।

৮. AIPP, IWGIA এবং CHTC  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে এও আহ্বান করছে যে, মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি যেন আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উস্কে দেয় এমন ভুল তথ্য এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য ব্যবহার করতে না পারে।

৯. অবশেষে, এটা স্পষ্ট যে সেটলাররা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি এবং এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। সুতরাং এ সমস্যা সমাধানে সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক স্থানান্তর করুন। রেশন, খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখে সরকার তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে স্থানান্তর করতে পারে, যেমনটি এই অঞ্চলে তাদের স্থানান্তরের পর থেকে করছে।

AIPP, IWGIA এবং CHTC  দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ও ন্যায়বিচার কেবল কার্যকর পদক্ষেপ, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক সংলাপের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।  সামরিক পদ্ধতিতে সমাধানের পরিবর্তে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যা সকল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ এবং সহযোগিতাকে উৎসাহিত করবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সংঘাতের মূল কারণগুলিকে চিহ্নিত করে মোকাবেলা করার মাধ্যমেই পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

Back to top button