নিরাপত্তার আশ্বাস প্রশাসনেরঃ তবুও কঠিন চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের
আইপিনিউজ ডেক্স: রাঙামাটি জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিরাপত্তা আশ্বাসের পরও রাঙামাটিতে কঠিন চীবর দান আয়োজনে সাড়া দিচ্ছে পাহাড়ের বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ। যার ফলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের ডাকা বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়ায় শেষ হয়েছে আজ।
আজ সোমবার দুপুরে কঠিন চীবর দান উদযাপন উপলক্ষে জরুরি সভা আহ্বান করেন জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান। এতে রাঙামাটি পুলিশ সুপার, সেনা রিজিয়ন কমান্ডার উপস্থিত থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেন বৌদ্ধ ভিক্ষু নেতৃবৃন্দ ও বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দদের। তবে, বৌদ্ধ ভিক্ষু নেতৃবৃন্দ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান তারা চীবর দান বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় আছেন।
গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর থেকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের উপর হামলা, বৌদ্ধ বিহার ভাংচুর লুটপাট ও বিচারহীনতার অভিযোগ ও নিরাপত্তা অভাবের কথা উল্লেখ করে গতকাল রোববার বৌদ্ধদের দানোত্তম কঠিন চীবর দান বর্জনের ঘোষণা দেয় পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৫টি বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘ।
এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাতে সোমবার দুপুরে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বৌদ্ধ ভিক্ষু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দু দফায় বৈঠক করেন। এ সময় বৌদ্ধ ভিক্ষু নেতারা নিজেদের অবস্থানের কথা জানান জেলা প্রশাসককে।
কঠিন চীবর দান আয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘কঠিন চীবর দান বৌদ্ধদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়। এটি দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রচারণা পায়। এ বছরও এ আয়োজনের পক্ষে প্রশাসন।’
অতীতে যত কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে সবগুলোতে নিরাপত্তা চাঁদরে ঢেকে রাখা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বৈঠকে রাজবন বিহারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সহ দপ্তর সম্পাদক বিজয়গিরি চাকমা। বৈঠক শেষে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চীবর দান হবে না সেটা এক প্রকার ফাইনাল। কারণ এ পরিস্থিতিতে চীবর দান করার কোনো পরিবেশ নেই। যেখানে প্রশাসন নিরাপত্তা শঙ্কায় পর্যটক না আসতে অনুরোধ করছে সেখানে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’
তিনি আরও জানান, হুট করে এ কঠিন চীবর দান করা যায় না। এটা একটা সমন্বিত কাজ। বৈঠকে বলা হয়েছে রাঙামাটির ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির সহিংসতা ঘটনার সাম্প্রদায়িক হামলা রোধে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। ঘটনার পর প্রশাসনের কাছে মানুষ আস্থা পাবে তার মত কোন কাজ এ পর্যন্ত চোখে পড়েনি। মৈত্রী বিহারে যে ভাঙচুর করা হল তা দেখতে এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ যায়নি। মানুষের মাঝে ভীতি কাজ করছে। তাই চীবর দান করার মত কোন পরিবেশ দেখছি না।
বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক কক্ষ থেকে বের হয়ে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথের বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড় আছি।’
জেলা প্রশাসক মো মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘বৌদ্ধ ভিক্ষু নেতৃবৃন্দ একদিন পর তাদের অবস্থান আমাদের জানাবে। চীবর দান যেন উদযাপন হয় এ নিয়ে আমি আরো খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলব।’
প্রবারণা পুর্ণিমার পরদিন থেকে পরবর্তী এক মাস বৌদ্ধ বিহারগুলোতে এ চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ২ হাজার অধিক বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। চীবর দান উৎসব বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সরকারিভাবে এ উৎসবে অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।