জাতীয়

প্রয়াত হলেন অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মনঃ নানা স্তরের মানুষের শোক

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ডালেম চন্দ্র বর্মণ প্রয়াত হয়েছেন। আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনুমানিক ১১.১০ মিনিটে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যাওয়ার পর বেসরকারি আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এই শিক্ষকের অনেক গবেষণা প্রবন্ধ দেশ–বিদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

জানা যায়, অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মণ কয়েক বছর ধরে পারকিনসনস রোগে ভুগছিলেন। এরপর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর হতে শুরু করে।

মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ বেলা দুইটায় নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর সতীর্থ, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের উপসনালয়েও নিয়ে যাওয়া হয় উক্ত হলেরই সাবেক এই আবাসিক শিক্ষককে।

এদিকে ডালেম চন্দ্র বর্মণের ছেলে অংশুমান বর্মণ জানান, অস্ট্রেলিয়ায় থাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা আগামীকাল পৌঁছানোর পর তাঁর বাবার মরদেহ আগামী শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।

নানা স্তরে শোক:

অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মণের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। শোকবার্তায় উপাচার্য বলেছেন, দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশেষ করে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন শিক্ষার প্রসার ও গবেষণায় এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য এই খ্যাতিমান শিক্ষক স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শোকবার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়, ডালেম চন্দ্র বর্মণ ছিলেন একজন সজ্জন, নম্র ও বিনয়ী মানুষ। জনপ্রিয় এই শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন।

ডালেম চন্দ্র বর্মণের এক সময়কার শিক্ষার্থী, পরবর্তীতে সহকর্মী এবং বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো ড. অনুরাগ চাকমা শোক জানিয়ে লেখেন, “চিন্তায়-কর্মে, আচার-আচরণে আপনি ছিলেন অনন্য, ব্যতিক্রমী এবং অনুসরণীয় এক উজ্জ্বল নিদর্শন! ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে আপনি ছিলেন প্রিয়ভাজন এবং শ্রদ্ধাভাজন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে সমগ্র দেশজুড়ে ছিল আপনার খ্যাতি-পরিচিতি। দেশে থাকতে যেসব জায়গায় গিয়েছি, গর্ব করে স্বনামধন্য পিস এন্ড কনফ্লিকট স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক হিসিবে পরিচয় দিয়েছি, সব জায়গায় সবার আগে আপনার কথা সবাই জিজ্ঞেস করত। এখান থেকে বুঝা যায়, আপনি দেশকে কি দিয়ে গেছেন। তাই, আপনাকে না চিনলে কিভাবে হয়! কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। প্রিয় স্যার, আপনি আমাদের মাঝে অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে সারাজীবন মনে রাখবে।”

এদিকে এই অধ্যাপকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। সংগঠনটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা স্বাক্ষরিত শোক বার্তায় বলা হয়, “আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও আন্দোলনে ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন ছিলেন অবিচল ও নিবেদিতপ্রাণ। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তাঁর মতো শিক্ষাবিদের শূন্যতা আমরা প্রতিনিয়ত অনুভব করব।”

এছাড়াও শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, বর্মন যুব পরিষদসহ বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনসমূহ।

 

 

Back to top button